কালিম্পং, 24 জানুয়ারি: পৃথক রাজ্যের দাবিতে ফের অশান্তির পথে এগোচ্ছে পাহাড় ৷ এমন আশঙ্কাতেই দিন কাটছে শৈলরানির বাসিন্দাদের । একদিকে, জিটিএ'র ত্রিপাক্ষিক চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে জিটিএ চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা বিমল গুরুং ৷ অন্যদিকে, পাহাড়ের সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে ভারতীয় গোর্খাল্যান্ড সংঘর্ষ সমিতি নামে কমিটিকে সামনে রেখে রীতিমতো পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের মানচিত্র তৈরি করে প্রচারে নামতে চলেছেন বিমল গুরুং, অজয় এডওয়ার্ড ও বিনয় তামাংরা । তবে শুধু পাহাড়েই নয় । পাহাড়-সহ তরাই, ডুয়ার্স এমনকি সমতলের কিছু অংশ নিয়ে ওই মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে । আর ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই তা নিয়ে সমগ্র পাহাড়, তরাই, ডুয়ার্স ও সমতলে প্রচার - আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা (Campaigning starts again for separate Gorkhaland)। আর তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে রাজনৈতিক মহল । তাহলে কি পাহাড়ে ফের পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন শুরু হতে চলেছে ?
দিল্লিতে সেমিনারের পর দুদিন ধরে কালিম্পংয়ের 10 মাইলে মারোয়ারী ভবনে পৃথক রাজ্যের উপর আলোচনা সভা ডেকেছেন বিমল গুরুং, অজয় এডওয়ার্ড ও বিনয় তামাংরা । গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, হামরো পার্টি ছাড়াও পাহাড়ের সিংহভাগ রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওই সভায় যোগ দিয়েছে । আর সেই সভাতেই বিমল গুরুং ঘোষণা করেছেন জিটিএ চুক্তি থেকে নিজেকে এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে প্রত্যাহার করবেন । বাতিল করবেন জিটিএ চুক্তি । আর বিমল গুরুংয়ের এই সিদ্ধান্তে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে পাহাড়ের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলিও । এই সভাতে সিদ্ধান্ত হয় 5 ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক করে প্রচারে নামা হবে । আর সেই দাবি জানিয়েই এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্বরাষ্ট্র সচিবদের জিটিএ চুক্তি বাতিলের জন্য চিঠি পাঠাবেন বিমল গুরুং ।
আরও পড়ুন : যতদিন রাজনীতিতে থাকব, ততদিন দিদির সঙ্গে কাজ করব; একুশের মঞ্চে বার্তা অনিতের
প্রসঙ্গত, 2012 সালে পাহাড়কে শান্ত করতে জিটিএ চুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার । গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার টানা আন্দোলনের জেরে অশান্ত পাহাড়কে শান্ত করে বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে একপ্রকার সমঝোতার রাস্তায় গিয়েছিল রাজ্য সরকার । রাজ্যের অধীনেই জিটিএ চুক্তিতে সায় দিয়েছিল কেন্দ্র । ফলে কেন্দ্র, রাজ্যর সহমতে বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করা হয় । তারপর পাহাড়ের রাশ ছিল বিমল গুরুংয়ের হাতেই । কিন্তু পৃথক রাজ্যর দাবিতে ফের বিমল গুরুং সক্রিয় হতেই বদলে যায় পাহাড়ের সমীকরণ । এখন 2017 সালের আন্দোলনের পর বিমল গুরুংয়ের অবক্ষয় ও পাহাড়ের রাশ অনিত থাপার হাতে যেতেই জিটিএ চুক্তিকে হাতিয়ার করলেন বিমল । রাজনৈতিক মহলের মতে, ত্রিপাক্ষিক চুক্তিতে যদি একপক্ষ অর্থাৎ বিমল গুরুং নিজেকে প্রত্যাহার করে তাহলে সেই ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ও আইনি জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে । নতুন করে জিটিএ চুক্তি করতে হতেও পারে । সামনেই লোকসভা নির্বাচন । এই সময় পাহাড়কে নিজেদের অধীনে রাখতে বিমল গুরুংকেই সহযোগিতা করতে পারে বিজেপি । সেক্ষেত্রে সমস্যা রাজ্য সরকার ও অনিত থাপার ।
অন্যদিকে, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলাকে নিয়ে পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যর মানচিত্র তৈরি করে প্রচারকেও যথেষ্ট ভাবাচ্ছে রাজ্যকে । এই বিষয়ে বিমল গুরুং বলেন, "জিটিএ চুক্তিতে আমি সই করেছিলাম । আমি এবং আমার দল মোর্চা সেখান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করছি । সেই কারণে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী সবাইকে অবগত করে জিটিএ চুক্তি বাতিলের জন্য চিঠি দেব ।"
অজয় এডওয়ার্ডের বক্তব্য, "আমরা বিমল গুরুংকে সমর্থন করছি । আমরাও জিটিএ সভাসদ । জিটিএ পাহাড় ও পাহাড়বাসীর দাবি পূরণ করতে পারেনি আর পারবে না ।" এই বিষয়ে দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা বলেন, "পাহাড়ের উন্নয়নে কোনও কাজেই আসেনি জিটিএ । সভাসদ নির্বাচিত হল, নির্বাচন হল । কিন্তু পাহাড়ে এখনও পর্যন্ত সাত মাসে কোনওরকম উন্নয়ন হয়নি । আর আগামীদিনেও এই জিটিএ কোনও কাজে আসবে না । চুক্তিতে রাজ্য সরকারের যেমন ভুল রয়েছে সেই সঙ্গে চুক্তিতে সই করে একই ভুল করেছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাও । এখন তিনি যে চুক্তি বাতিলের দাবি তুলছেন সেটাও ভুল ।"
আরও পড়ুন : বিমল গুরুং এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই রয়েছেন, দাবি বিজেপি সাংসদের