দার্জিলিং, 14 মে : জোর করে জিটিএ নির্বাচন করলে আমরণ অনশনে যাওয়ার হুমকি দিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুং (GJM President Bimal Gurung) । শনিবার দার্জিলিংয়ের গোর্খা দুঃখ নিরাবনী সঙ্ঘে মোর্চার টাউন কমিটির বৈঠকের পর ওই হুঁশিয়ারি দেন তিনি (Bimal Gurung threatens hunger strike if the GTA election is forced) । গুরুং বলেন, "রাজ্য সরকার আগে জিটিএ চুক্তিমতো দাবি পূরণ করুক, তারপর নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে । তা না হলে আমরা প্রথমে চৌরাস্তায় রিলে অনশনে বসব ৷ তারপর আমরণ অনশনে যাব । দেশ বিদেশ থেকে আসা পর্যটকরাও জানুক, আমাদের আসল পরিস্থিতি ।"
অন্যদিকে জিটিএ নির্বাচন করার আগে প্রতিশ্রুতি ও চুক্তিমতো দাবিগুলি আগে পূরণ করার আর্জি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Bengal CM Mamata Banerjee) চিঠি দিলেন বিমল গুরুং । শনিবার তিনি ওই চিঠি নবান্নে পাঠিয়েছেন, চিঠিতে বিজেপির সঙ্গে জোট ভেঙে তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) সঙ্গে জোট করার পর থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়েও ঘুরিয়ে সমালোচনা করেছেন তিনি । জোট ধর্ম মনে করিয়ে জিটিএ নির্বাচনের আগে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে দ্রুত রাজ্য সরকারকে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ডাকার আবেদন জানিয়েছেন তিনি ।
ওই বিষয়ে রোশন গিরি বলেন, "জিটিএ নির্বাচনের লক্ষ্যে নয়, রাজ্য সরকার এবং তৃণমূল কংগ্রেস আমাদের যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং জিটিএ-এর চুক্তি অনুযায়ী আমাদের যেসব দাবি জানানো হয়েছিল, সেসব আগে পূরণ করার আবেদন জানানো হয়েছে ।" বিমল গুরুংয়ের চিঠির পরই পাহাড়ে ফের একবার রাজনৈতিক মহলে সমালোচনা শুরু হয়েছে । চিঠিতে বারবার জোট নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন গুরুং । তিনি আকার ইঙ্গিতে বোঝাতে চাইছেন, এখনও পর্যন্ত মোর্চাই জোট ধর্ম পালন করে চলছে ।
চিঠিতে বিমল গুরুং জানিয়েছেন, 2020 সালের অক্টোবরে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গে তাঁর সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছিল ৷ আর আজ পর্যন্ত জোটকে অত্যন্ত বিশ্বাস এবং আন্তরিকতার সঙ্গে সম্মান করে আসছেন ।
মোর্চার তরফে জানা গিয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের প্রাক-জোট আলোচনার সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান (পিপিএস) এবং পরবর্তীকালে নির্বাচনী প্রচারের সময়েও তা ফের জানানো হয়েছিল । যেহেতু তৃণমূল কংগ্রেস আশ্বস্ত করেছিল যে রাজনৈতিক সমাধান করতে হলে 11টি গোর্খা সম্প্রদায়কে তফশিলি উপজাতির মর্যাদা প্রদান ছাড়া, তা বাস্তবায়িত হবে না । এছাড়াও 2011 সালের চুক্তি অনুযায়ী অবশিষ্ট সরকারি বিভাগগুলি হস্তান্তর, চারটি গোর্খা সংখ্যাগরিষ্ঠ মৌজার অন্তর্ভুক্তি করা প্রয়োজন রয়েছে ।
চিঠিতে বিমল গুরুং আরও জানিয়েছেন, যেহেতু 2017 সাল থেকে আজ পর্যন্ত কোনও নির্বাচন ছাড়াই জিটিএ পরিচালিত হচ্ছে বা মনোনীতদের মাধ্যমে জিটিএ-র চলেছে, সেজন্য এবার অন্তত জিটিএ নির্বাচনের আগে চুক্তির অনুযায়ী দাবি পূরণ হওয়া প্রয়োজন । সম্প্রতি সেসব মনে করিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে তাঁরা গিয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছেন । কিন্তু তার একদিন পরেই দার্জিলিংয়ের জেলাশাসককে নির্বাচনী আধিকারিক নিযুক্ত করা হল । আর তাতেই প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিমল গুরুং ।
বিমল গুরুং দাবি জানিয়েছেন, গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (Gorkha Territorial Administration) পরবর্তী নির্বাচনের আগে তাদের পেশ করা স্মারকলিপির সমাধানের জন্য দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য অনুরোধ করেছে মোর্চা । যখন জিটিএ নির্বাচন আজ পর্যন্ত পিছিয়ে গিয়েছে আর যদি জিটিএ অঞ্চলে যথাযথভাবে নির্বাচিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার প্রশ্ন হয়, তবে জিটিএ নির্বাচনের আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আয়োজন করা হোক যা 2001 সাল থেকে হয়নি ।
আরও পড়ুন : GTA election Preparation: জিটিএ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু, মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দার্জিলিঙের জেলাশাসক