শিলিগুড়ি, 15 এপ্রিল : সামন্ততান্ত্রিক আমল থেকে চলে আসা চিরাচরিত শুভেচ্ছাবার্তা এখন বাঙালির সমাজ বা বাঙালির মনে আর ধরে না। জায়গা করে নিয়ে নিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। সোশ্যাল মিডিয়াতেই এখন চলছে শুভেচ্ছা বিনিময়। যেখানে আজ থেকে কয়েক বছর আগেও নববর্ষ উপলক্ষ্যে দেখা যেত কার্ডের দোকানগুলিতে নববর্ষের কার্ড কেনার হিড়িক কিংবা কচিকাঁচাদের মধ্যে দেখা যেত নববর্ষের কার্ড তৈরির প্রস্তুতি। সেগুলো এখন ইতিহাস। শুধু তাই নয়, চাহিদা না থাকায় কার্ডের দোকানগুলিতেও বন্ধ হয়ে গিয়েছে বাংলা নববর্ষের কার্ড বিক্রি (Bengali New Year 1429) ।
কোথাও হাতে গোনা দু'একটি কার্ড পাওয়া যায় । আবার কোথাও কার্ড বিক্রেতারা জানিয়ে দিচ্ছেন, নববর্ষের কার্ডের চাহিদাই নেই। যার জেরে বাংলা নববর্ষের কার্ড এখন আর মেলে না। ইতিহাস ঘেঁটে জানা গিয়েছে, ষোলোর দশকে রাজা রাজকৃষ্ণ চৌধুরীর সেরেস্তাদার ছিলেন মহিম সরকার। তার তৃতীয় প্রজন্ম কানাইলাল সরকারের আমল থেকে নববর্ষের কার্ড বানিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময়ের প্রথা শুরু হয়েছিল।
জমিদার কানাইলাল সরকারের আমলে জমিদারদের আধিপত্য, সম্পত্তি কমতে থাকলেও সুদে ঋণ নিয়ে হলেও নিজেদের ঠাঁটবাট জাহির করতেন। সেই সময় পাওনাদারদের নিজের বশে রাখতে নববর্ষের দিন কার্ড বানিয়ে তার সঙ্গে ছোট ছোট কবিতা দিয়ে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠাতেন। সেই থেকেই বাংলায় নববর্ষের শুভেচ্ছাবার্তা পাঠানোর প্রচলন শুরু হয়। যা পরবর্তীকালে কার্ডে পরিণত হয়।
আরও পড়ুন : Halkhata Ceremony Crisis: ডিজিটাল যুগে হাল খারাপ হালখাতার
কিন্তু এখন পাশ্চাত্য সংস্কৃতি মেনে ইংরেজি নববর্ষে কার্ড বিনিময় করে শুভেচ্ছার প্রচলনে বাঙালিরা নিজেদের মানিয়ে নিলেও, বাঙালির আপন শুভেচ্ছা বিনিময় সংস্কৃতি বিলুপ্ত হতে বসেছে। না পাওয়া যায় কার্ড, না শিশুদের দেখা যায় নিজেদের হাতে এঁকে কবিতা লিখে কার্ড বানাতে। এতে বাঙলা ও বাঙলির আবেগ এখন সত্যি প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।
এক নামিদামি গিফট সংস্থার ম্যানেজার জবা পাল বলেন, "বাংলা নববর্ষের কার্ডের একদম চাহিদা নেই। সেজন্য রাখাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।" শিলিগুড়ি কলেজের অধ্যাপক অমিতাভ কাঞ্জিলাল বলেন, "ডিজিটালের যুগে এখন সেসব লুপ্ত হতে বসেছে। একসময় টরেটক্কা, পোস্টকার্ড-সহ একাধিক জিনিস কালচক্রে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাংলা ও বাঙালির সামন্ততান্ত্রিক আমল থেকে চলে আসা শুভেচ্ছা বিনিময় আজ আর নেই। কারণ ডিজিটাল যুগে এখনকার প্রজন্ম অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য।"
আরও পড়ুন : করোনার আক্রমণ শিথিল, জমে উঠুক এবারের নববর্ষ
বঙ্গবাসী সংগঠনের আহবায়ক সঞ্জীব চক্রবর্তী বলেন, "কার্ডের মাধ্যমে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শিশুদেরও আর দেখা যায় না নিজের হাতে কার্ড বানাতে। বা কোথাও বাংলা নববর্ষের কার্ড বিক্রিও হয় না। অথচ ইংরেজি নতুন বছরের কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময়ের প্রচলন আছে। ফলে বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে চিন্তার সময় এসেছে।"