ETV Bharat / state

পঞ্চম দফায় আড়াআড়ি বিভাজন মোর্চায়, কী বলছে পাহাড়ের সমীকরণ ? - পঞ্চম দফার ভোট

এখন আর পাহাড়ে একচেটিয়া আধিপত্য নেই গুরুংয়ের ৷ বিনয় তামাং-অনিল থাপাদেরও যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে ৷ তামাংপন্থীদের সংখ্যাও বেড়েছে ৷ পার্টি অফিসের বাইরে অনুগামীদের ভিড়টা সেইদিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে ৷ এবার পাহাড়ের তিন কেন্দ্রেই আলাদা আলাদা করে প্রার্থী দিয়েছেন গুরুং - তামাং ৷

West Bengal Assembly Election 2021
ছবি
author img

By

Published : Apr 16, 2021, 10:58 PM IST

দার্জিলিং, 16 এপ্রিল : পৃথক গোর্খাল্যান্ডও হয়নি ৷ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের তকমাও মেলেনি ৷ কিন্তু তাও বাংলার রাজনীতিতে বরাবর আলাদা মাত্রা পেয়ে এসেছে পাহাড় ৷ পাহাড়ের রাজনীতির সমীকরণ বুঝতে গিয়ে মাঝে মাঝেই হোঁচট খেতে হয়েছে মমতা থেকে শাহকে ৷

এগারোর পালাবদলের পরপরই তৈরি হয়েছিল জিটিএ ৷ মা-মাটি-মানুষের সরকার সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরতে প্রায়ই পাহাড়ের প্রসঙ্গ তুলে আনত ৷ চারিদিকে বিজ্ঞাপন - পাহাড় হাসছে ৷ যদিও পাহাড়ের সেই হাসি খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি ৷

পাহাড়ের রাজনীতির নিয়ামকের ভূমিকায় বারবার উঠে এসেছে মোর্চা ৷ তবে সেদিনের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা আর আজকের মোর্চার মধ্যে অনেকটা ফারাক ৷ দ্বন্দ্ব ৷ মত বিরোধ ৷ মোর্চা আজ একেবারে আড়াআড়ি দু'ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে ৷ একদিকে বিমল গুরুং এবং তাঁর অনুগামীরা ৷ আর অন্যদিকে বিনয় তামাং এবং তাঁর অনুগামীরা ৷

এরই মধ্যে শনিবার পাহাড়ে ভোটগ্রহণ ৷ ইভিএমবন্দী হবে দার্জিলিং, কার্শিয়াং এবং কালিম্পং বিধানসভা আসনের রায় ৷ পাহাড়ের জনশ্রুতি, 2009 সালে পাহাড়ের ইভিএমে প্রথম পরীক্ষা দিয়েছিলেন গুরিং ৷ শোনা যায়, গুরুং পাশে থাকাতেই বিজেপি প্রার্থী যশোবন্ত সিংহের জেতার পথটা সহজ হয়েছিল সেই সময় ৷ রাজু বিস্তার ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায় ৷

আরও পড়ুন : মুখ্যমন্ত্রীর ফোন কি ট্যাপ করে বিজেপি ? অডিয়ো রেকর্ডিং নিয়ে প্রশ্ন তুলল তৃণমূল

2016 সালের বিধানসভা ভোটে পাহাড়ের তিনটি আসনেই জিতেছিলেন মোর্চার প্রার্থীরা ৷ সেই সময় মোর্চার সমর্থন ছিল পদ্ম শিবিরে ৷ 2019 সালের উপ নির্বাচনেও দার্জিলিঙে গেরুয়া আবির উড়েছিল ৷ লোকসভা ভোটের সময়েও পাহাড়ের তিনটি আসনে এগিয়ে ছিল বিজেপিই ৷

মাঝে তিস্তা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে ৷ দীর্ঘ 14 বছর পদ্মের পাশে থাকার পর হঠাৎ ছন্দপতন ৷ বিজেপির সখ্যতা ছেড়ে বেরিয়ে আসেন গুরুং ৷ 2017 সাল থেকে অজ্ঞাতবাসে থাকার পর আচমকা কলকাতায় দেখা দিলেন ৷ ঘটা করে সাংবাদিক বৈঠক করলেন ৷ সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করার কথা বললেন ৷

কিন্তু এখন আর পাহাড়ে একচেটিয়া আধিপত্য নেই গুরুংয়ের ৷ বিনয় তামাং-অনিল থাপাদেরও যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে ৷ তামাংপন্থীদের সংখ্যাও বেড়েছে ৷ পার্টি অফিসের বাইরে অনুগামীদের ভিড়টা সেইদিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে ৷ এবার পাহাড়ের তিন কেন্দ্রেই আলাদা আলাদা করে প্রার্থী দিয়েছেন গুরুং - তামাং ৷ তৃণমূলের তরফে চেষ্টা করা হয়েছিল দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দূরত্ব কমানোর ৷ কিন্তু তাতে কোনও কাজ দেয়নি ৷ এই অবস্থায় মমতা পাহাড়ের তিনটি আসনই ছেড়ে দিয়েছেন ৷ বলেছেন, গুরুং বা তামাংদের মধ্যে যাঁরা জিতবে, তাঁদেরকেই সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে তৃণমূল ৷

বিনয় তামাং যাঁদের প্রার্থী করেছেন তাঁরা সকলেই তরুণ প্রজন্মের ৷ অন্যদিকে গুরুং ভরসা রেখেছেন তাঁর পোড় খাওয়া যোদ্ধাদের উপর ৷ কানাঘুষো শোনা যায়, মোর্চার কোন গোষ্ঠীকে সমর্থন করা হবে, তা নিয়ে তৃণমূলের অভ্যন্তরেও দ্বন্দ্ব রয়েছে ৷ তৃণমূলের তরুণ প্রজন্ম সমর্থন করছে তামাংপন্থী প্রার্থীদের ৷ তৃণমূলের মূল ধারার সমর্থন আবার রয়েছে গুরুংপন্থীদের প্রতি ৷ সবমিলিয়ে পাহাড়ের ভোটাররাও বেশ দ্বিধাবিভক্ত এবারের নির্বাচনকে ঘিরে ৷

আরও পড়ুন : শীতলকুচির ঘটনা নিয়ে মেরুকরণ চান মমতা, অডিয়ো প্রকাশ করে দাবি বিজেপির

আর এটারই ফায়দা তুলতে চাইছে বিজেপি ৷ গুরুং পাশে না থাকায় পদ্ম এবার পাহাড়ে জোট বেধেছে জিএনএলএফের সঙ্গে ৷ পাহাড়ের রাজনীতির সমীকরণ বলছে, মোর্চায় যে আড়াআড়ি বিভাজন তৈরি হয়েছে, তাতে কিছুটা হলেও শক্তি বাড়িয়েছে জিএনএলএফ ৷ তবে পাহাড়ের একটি আসনেও তাঁদের প্রার্থী নেই ৷ তিনটিতেই প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি ৷ এই নিয়েও জিএনএলএফ কর্মী ও সমর্থকদের একাংশের মধ্যে চাপা অসন্তোষ রয়েছে ৷

2017 সাল থেকে অজ্ঞাতবাসের পর নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করার লড়াই গুরুংয়ের ৷ কোনওবার জয়ের মুখ না দেখা বিনয় তামাংরাও চেষ্টা করছেন নিজেদের সবটুকু দিয়ে ৷ তবে এবার মোর্চায় যে ভাঙন দেখা দিয়েছে, সেদিক থেকে যদি কোনও ভোট কাটাকুটির খেলা হয়, তবে আখেড়ে বিজেপিরই লাভ হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ৷

দার্জিলিং, 16 এপ্রিল : পৃথক গোর্খাল্যান্ডও হয়নি ৷ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের তকমাও মেলেনি ৷ কিন্তু তাও বাংলার রাজনীতিতে বরাবর আলাদা মাত্রা পেয়ে এসেছে পাহাড় ৷ পাহাড়ের রাজনীতির সমীকরণ বুঝতে গিয়ে মাঝে মাঝেই হোঁচট খেতে হয়েছে মমতা থেকে শাহকে ৷

এগারোর পালাবদলের পরপরই তৈরি হয়েছিল জিটিএ ৷ মা-মাটি-মানুষের সরকার সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরতে প্রায়ই পাহাড়ের প্রসঙ্গ তুলে আনত ৷ চারিদিকে বিজ্ঞাপন - পাহাড় হাসছে ৷ যদিও পাহাড়ের সেই হাসি খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি ৷

পাহাড়ের রাজনীতির নিয়ামকের ভূমিকায় বারবার উঠে এসেছে মোর্চা ৷ তবে সেদিনের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা আর আজকের মোর্চার মধ্যে অনেকটা ফারাক ৷ দ্বন্দ্ব ৷ মত বিরোধ ৷ মোর্চা আজ একেবারে আড়াআড়ি দু'ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে ৷ একদিকে বিমল গুরুং এবং তাঁর অনুগামীরা ৷ আর অন্যদিকে বিনয় তামাং এবং তাঁর অনুগামীরা ৷

এরই মধ্যে শনিবার পাহাড়ে ভোটগ্রহণ ৷ ইভিএমবন্দী হবে দার্জিলিং, কার্শিয়াং এবং কালিম্পং বিধানসভা আসনের রায় ৷ পাহাড়ের জনশ্রুতি, 2009 সালে পাহাড়ের ইভিএমে প্রথম পরীক্ষা দিয়েছিলেন গুরিং ৷ শোনা যায়, গুরুং পাশে থাকাতেই বিজেপি প্রার্থী যশোবন্ত সিংহের জেতার পথটা সহজ হয়েছিল সেই সময় ৷ রাজু বিস্তার ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায় ৷

আরও পড়ুন : মুখ্যমন্ত্রীর ফোন কি ট্যাপ করে বিজেপি ? অডিয়ো রেকর্ডিং নিয়ে প্রশ্ন তুলল তৃণমূল

2016 সালের বিধানসভা ভোটে পাহাড়ের তিনটি আসনেই জিতেছিলেন মোর্চার প্রার্থীরা ৷ সেই সময় মোর্চার সমর্থন ছিল পদ্ম শিবিরে ৷ 2019 সালের উপ নির্বাচনেও দার্জিলিঙে গেরুয়া আবির উড়েছিল ৷ লোকসভা ভোটের সময়েও পাহাড়ের তিনটি আসনে এগিয়ে ছিল বিজেপিই ৷

মাঝে তিস্তা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে ৷ দীর্ঘ 14 বছর পদ্মের পাশে থাকার পর হঠাৎ ছন্দপতন ৷ বিজেপির সখ্যতা ছেড়ে বেরিয়ে আসেন গুরুং ৷ 2017 সাল থেকে অজ্ঞাতবাসে থাকার পর আচমকা কলকাতায় দেখা দিলেন ৷ ঘটা করে সাংবাদিক বৈঠক করলেন ৷ সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করার কথা বললেন ৷

কিন্তু এখন আর পাহাড়ে একচেটিয়া আধিপত্য নেই গুরুংয়ের ৷ বিনয় তামাং-অনিল থাপাদেরও যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে ৷ তামাংপন্থীদের সংখ্যাও বেড়েছে ৷ পার্টি অফিসের বাইরে অনুগামীদের ভিড়টা সেইদিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে ৷ এবার পাহাড়ের তিন কেন্দ্রেই আলাদা আলাদা করে প্রার্থী দিয়েছেন গুরুং - তামাং ৷ তৃণমূলের তরফে চেষ্টা করা হয়েছিল দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দূরত্ব কমানোর ৷ কিন্তু তাতে কোনও কাজ দেয়নি ৷ এই অবস্থায় মমতা পাহাড়ের তিনটি আসনই ছেড়ে দিয়েছেন ৷ বলেছেন, গুরুং বা তামাংদের মধ্যে যাঁরা জিতবে, তাঁদেরকেই সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে তৃণমূল ৷

বিনয় তামাং যাঁদের প্রার্থী করেছেন তাঁরা সকলেই তরুণ প্রজন্মের ৷ অন্যদিকে গুরুং ভরসা রেখেছেন তাঁর পোড় খাওয়া যোদ্ধাদের উপর ৷ কানাঘুষো শোনা যায়, মোর্চার কোন গোষ্ঠীকে সমর্থন করা হবে, তা নিয়ে তৃণমূলের অভ্যন্তরেও দ্বন্দ্ব রয়েছে ৷ তৃণমূলের তরুণ প্রজন্ম সমর্থন করছে তামাংপন্থী প্রার্থীদের ৷ তৃণমূলের মূল ধারার সমর্থন আবার রয়েছে গুরুংপন্থীদের প্রতি ৷ সবমিলিয়ে পাহাড়ের ভোটাররাও বেশ দ্বিধাবিভক্ত এবারের নির্বাচনকে ঘিরে ৷

আরও পড়ুন : শীতলকুচির ঘটনা নিয়ে মেরুকরণ চান মমতা, অডিয়ো প্রকাশ করে দাবি বিজেপির

আর এটারই ফায়দা তুলতে চাইছে বিজেপি ৷ গুরুং পাশে না থাকায় পদ্ম এবার পাহাড়ে জোট বেধেছে জিএনএলএফের সঙ্গে ৷ পাহাড়ের রাজনীতির সমীকরণ বলছে, মোর্চায় যে আড়াআড়ি বিভাজন তৈরি হয়েছে, তাতে কিছুটা হলেও শক্তি বাড়িয়েছে জিএনএলএফ ৷ তবে পাহাড়ের একটি আসনেও তাঁদের প্রার্থী নেই ৷ তিনটিতেই প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি ৷ এই নিয়েও জিএনএলএফ কর্মী ও সমর্থকদের একাংশের মধ্যে চাপা অসন্তোষ রয়েছে ৷

2017 সাল থেকে অজ্ঞাতবাসের পর নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করার লড়াই গুরুংয়ের ৷ কোনওবার জয়ের মুখ না দেখা বিনয় তামাংরাও চেষ্টা করছেন নিজেদের সবটুকু দিয়ে ৷ তবে এবার মোর্চায় যে ভাঙন দেখা দিয়েছে, সেদিক থেকে যদি কোনও ভোট কাটাকুটির খেলা হয়, তবে আখেড়ে বিজেপিরই লাভ হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.