দার্জিলিং, 23 মে: পাহাড়ে লাম্পি ভাইরাসের প্রকোপ রুখতে এবার ইন্দো-নেপাল সীমান্ত দিয়ে গবাদি পশু প্রবেশে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করল দার্জিলিং জেলা প্রশাসন । পাশাপাশি কোনওভাবেই যাতে গবাদি পশু পাচার না-হয় সেদিকেও কড়া নজরের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। মূলত, ইন্দো-নেপালের পাহাড়ি সীমান্ত দিয়ে সিকিমে গবাদি পশু পাচার হয়ে থাকে । এবার সেই রুটে যাতে কোনওভাবেই গবাদি পশু পাচার না-হয় সেদিকে বিশেষ নজরের নির্দেশ দিয়েছেন দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক এস পুন্নমবলম ।
পাশাপাশি পাহাড়ে ঢুকতে না-পেরে যাতে কোনওভাবেই নেপালের গবাদি পশু সমতল দিয়ে শিলিগুড়ি মহকুমায় না প্রবেশ করতে পারে সেদিকেও নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি । এছাড়াও পাহাড়জুড়ে গবাদি পশুর টিকাকরণের কাজ শুরু হয়েছে বলে মঙ্গলবার জানান জেলাশাসক ।
উল্লেখ্য, দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলায় লাম্পি ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে । যার জেরে উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসন । নেপাল থেকে ভারতে প্রবেশকারী গবাদি পশুর থেকেই ওই ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে জানিয়েছে পশুপালন ও প্রাণীসম্পদ বিকাশ বিভাগ । ইতিমধ্যে পরিস্থিতি যাচাই করতে ইস্টার্ন রিজিওনাল ডিজিজ ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরির এক চিকিৎসক দার্জিলিংয়ে পৌঁছেছেন সরেজমিনে লাম্পি ভাইরাসের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ৷
লাম্পি ভাইরাসের প্রকোপ রুখতে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারও চালু করা হবে বলে জানিয়েছে দার্জিলিং জেলা প্রশাসন ও প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন বিভাগ । এছাড়াও আরও দুটি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের তরফে । এমনটাই জানিয়েছিলেন দার্জিলিংয়ের পশুপালন ও প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর অসীম রাজ রানা । রাজ্যের তরফে অনুমোদন এলেই আরও দু'টি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার চালু করা হবে । সেখানেই লাম্পিতে আক্রান্ত গবাদি পশুগুলিকে রেখে চিকিৎসা করবেন পশু চিকিৎসকরা ।
এই বিষয়ে ডেপুটি ডিরেক্টর অসীম রাজ রানা বলেন, "2008 সালে একইভাবে নেপাল থেকে গবাদি পশুর ক্ষুর ও মুখে ঘায়ের রোগ ছড়িয়েছিল । সেই সময় শতাধিক গবাদি পশুর মৃত্যু হয় । রাজ্যের কাছে গবাদি পশুর জন্য দুটি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । ইন্দো-নেপাল সীমান্ত সংলগ্ন একটি মানেভঞ্জন ও অন্যটি পেডিখোলা এলাকায় । পুলবাজারে থাকা কোয়ারেন্টাইন সেন্টারটি জনবসতির মাঝে থাকায় বন্ধ হয়েছিল । তবে সেটি চালু করা হচ্ছে ।"
এই ভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জেলা প্রশাসনের কাছে পদক্ষেপের আবেদন করেছে বিজনবাড়ি এগ্রিকালচারাল প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন ট্রাস্ট। স্মারকলিপি দিয়ে অবৈধভাবে গবাদি পশু পাচার রোধ ও দ্রুত গবাদি পশুর চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা ।
বিজনবাড়ি এগ্রিকালচারাল প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন ট্রাস্টের সম্পাদক বুদ্ধ লামা বলেন, "আক্রান্ত গবাদি পশুর চিকিৎসা ও যেসব প্রাণী এখনও আক্রান্ত হয়নি অবিলম্বে তাদের টিকার ব্যবস্থা করতে হবে । পাহাড়ের বেশিরভাগ মানুষ পশুপালন করে সংসার চালায় । এমতাবস্থায় এই রোগে পশুর মৃত্যু হলে বিপদে পড়বে সেইসব পরিবারগুলি ।"
জানা গিয়েছে, দার্জিলিংয়ের সুখিয়াপোখরি, বিজনবাড়ি ও মিরিক দিয়ে ইন্দো-নেপাল সীমান্ত রয়েছে । নেপাল থেকে সান্দাকফু, টুমলিং, মোহালে, মানেভঞ্জন হয়ে সিকিমে ওই গবাদি পশু পাচার হয় । অন্যদিকে, মোহালে থেকে কাইয়ানকাটা হয়ে মিরিক হয়ে পাচার করা হয় ।
আরও পড়ুন: দার্জিলিং-কালিম্পঙে লাম্পি ভাইরাসের হানা ! পাহাড় পরিদর্শনে কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ দল
দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক এস পুন্নমবলম বলেন, "পরিস্থিতি এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে । ইতিমধ্যে ভ্যাকসিনের কাজ শুরু হয়েছে । ইন্দো-নেপাল সীমান্ত দিয়ে সব থেকে বেশি সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে । গবাদি পশুপ্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে । থানা ও এসএসবিকে মনিটরিংয়ের জন্য বলা হয়েছে । প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন বিভাগ থেকে ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে । যেসব গবাদি পশু ভ্যাকসিন নেয়নি সেগুলোই সংক্রমিত হচ্ছে ।"