দার্জিলিং, 19 জানুয়ারি: এক দায়িত্ববান সাধারণ নাগরিকের দেওয়া সূত্র ধরে অভিযান বন দফতরের ! আর অভিযান চালিয়ে উদ্ধার হল বিপন্ন প্রজাতির হরিণের মৃগনাভি বা কস্তুরী এবং বিশেষ প্রজাতির কাঠবিড়ালির চামড়া ৷ অনুমান এই বন্য সামগ্রীর বাজার দর কয়েক কোটি টাকা ৷ এই ঘটনায় বন দফতরের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন সিকিম পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক ৷
বন দফতর সূত্রে খবর, ধৃত ওই প্রাক্তন সিকিম পুলিশ কর্তার নাম ড্যানি শেরিং ভুটিয়া ৷ তার বয়স 63 বছর ৷ সে পূর্ব সিকিমের গ্যাংটক সংলগ্ন তাদং এলাকার বাসিন্দা ৷ এর আগে সিকিমের ডিএসপি পদে ছিল ৷ তার স্ত্রীও সিকিমের প্রাক্তন পুলিশ সুপার ৷ বৃহস্পতিবার গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালায় কার্শিয়াং ফরেস্ট ডিভিশনের (ওয়াইল্ড লাইফ) বাগডোগরা রেঞ্জ ৷ একটি পূর্ণবয়স্ক হরিণের দু'টি মৃগনাভি এবং হিমালয়ের জঙ্গলে বসবাসকারী উড়ন্ত কাঠবিড়ালির চামড়া-সহ হাতেনাতে ধরা পড়ে সিকিমের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্তা ৷ জানা গিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ওই বন্যপ্রাণ সামগ্রীর বাজারমূল্য তিন থেকে পাঁচ কোটি টাকা ৷ ধৃত ড্যানি শেরিং ভুটিয়াকে শুক্রবার শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে তোলা হবে বলে খবর ৷
মৃগনাভি বা কস্তুরী পুরুষ হরিণের নাভিতে অবস্থিত সুগন্ধী গ্রন্থি নিঃসৃত এক ধরনের তরল পদার্থ ৷ মিলন বা প্রজনন ঋতুতে পুরুষ হরিণের পেটের কাছের কস্তুরী গ্রন্থি থেকে সুগন্ধ বের হয় ৷ ওই গন্ধ মেয়ে হরিণকে আকৃষ্ট করে ৷ পুরুষ হরিণের দশ বছর বয়স হলে ওই নাভির গ্রন্থি পরিপক্ব হয় ৷ ঠিক সেই সময় হরিণটিকে হত্যা করে তার নাভি থেকে কেটে বের করে নেওয়া হয় পুরো গ্রন্থিটি ৷ তারপর রোদে শুকনো হয় ৷ একটি পূর্ণাঙ্গ কস্তুরী গ্রন্থির ওজন প্রায় 60-65 গ্রাম ৷ আন্তর্জাতিক কালোবাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে মৃগনাভির ৷
এই বিষয়ে উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) ভাস্কর জেভি বলেন, "সিকিমের এক অবসরপ্রাপ্ত প্রাক্তন পুলিশ কর্তা এই পাচারের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন ৷ তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে ৷ ঘটনায় আর কেউ জড়িত রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷"
বাগডোগরার রেঞ্জ অফিসার সোনম ভুটিয়া বলেন, "এটা একটা বড় সাফল্য ৷ সকালে এক দায়িত্ববান নাগরিক আমাদের ফোন করেন ৷ তিনি যে হোটেলে ছিলেন, সেখানে তিনি বন্যপ্রাণীর সামগ্রী নিয়ে কথোপকথন শুনতে পান ৷ তিনি সঙ্গে সঙ্গে আমাদের খবর দেন ৷ আমরাও তড়িঘড়ি অভিযান চালাই ৷ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার হয় মৃগনাভি ও উড়ন্ত কাঠবিড়ালির চামড়া ৷ আমি আমার 16 বছরের চাকরিতে হয়তো এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এই মৃগনাভি উদ্ধার দেখলাম ৷ এটা খুবই বিরল এবং বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর সামগ্রী ৷ উড়ন্ত কাঠবিড়ালির চামড়া এই প্রথমবার উদ্ধার হল ৷ দিল্লি থেকে কেউ এখানে আসছিল ৷ তার কাছে পাচার হওয়ার কথা ছিল ৷ আমরা সব দিক তদন্ত করে দেখছি ৷"
সিকিমের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) প্রদীপ কুমার বলেন, "ঘটনাটি শুনেছি ৷ সব খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷" জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি সংলগ্ন শিবমন্দির এলাকায় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে একটি হোটেলে ওই অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্তা মৃগনাভি ও কাঠবিড়ালির চামড়া বিক্রির বিষয়ে ফোনে কথা বলছিল ৷ সেই কথোপকথন পাশে থেকে শুনতে পেয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দা বন দফতরকে জানান ৷ খবর পাওয়ামাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের কাছে অভিযুক্তকে পাকড়াও করে বাগডোগরা রেঞ্জের বনকর্মীরা ৷
তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয় 20 ও 24 গ্রামের দু'টি মৃগনাভি এবং উড়ন্ত কাঠবিড়ালির চামড়া, যার ওজন 140 গ্রাম । ওই দু'টি প্রাণীই বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির শিডিউল 1 তালিকার অন্তর্ভুক্ত ৷ এরপরই জিজ্ঞাসাবাদ করলে ধৃত নিজেকে সিকিম পুলিশের প্রাক্তন ডিএসপি পরিচয় দেয় এবং তাকে গ্রেফতার করে বন দফতর ৷ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বন আধিকারিকরা জানতে পারেন, নেপাল থেকে সিকিমে হাতবদল হয়ে ওই দুই সামগ্রী পৌঁছয় ধৃতের কাছে ৷ সিকিম থেকে শিলিগুড়িতে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে আসা হয়েছিল ৷ বাগডোগরায় 2 কোটি 70 লক্ষ টাকার বিনিময়ে সেটি হাতবদল হয়ে দিল্লিতে পাচারের পরিকল্পনা ছিল ৷
আরও পড়ুন: