কালিম্পং, 7 জুলাই: প্রায় দুই যুগের দোড় গোড়ায় দাঁড়িয়ে ফের পাহাড়ের পঞ্চায়েত ভোট ৷ 22 বছর পর পাহাড়ে আবারও পঞ্চায়েতের ব্যালটে ছাপ দিতে চলেছেন মানুষ। তবে ত্রিস্তর নয়, পাহাড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে দ্বিস্তরীয় ৷ আর সেই ভোটেই পাহাড়ের মানুষের স্মৃতিতে ফের উঠে এল সুভাষ ঘিসিংয়ের নাম ৷ কারণ শেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় পাহাড়ে 'একনায়কতন্ত্র' চলছিল গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (জিএনএলএফ) নেতা সুভাষ ঘিষিংয়ের। পাহাড়ে সেই সময় প্রতিপক্ষ বলে তেমন কেউই ছিল না। লড়াইটা ছিল জিএনএলএফ বনাম ছোটখাটো কিছু আঞ্চলিক দল এবং নির্দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এবার সেই পাহাড়েই ফের পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে চলেছে।
দুই যুগে তিস্তা দিয়ে বয়ে গিয়েছে বহু জল। পাহাড়ের রাশ সুভাষ ঘিসিংয়ের হাত থেকে বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, বিনয় তামাং হয়ে এখন সেই দণ্ডের কর্তা অনিত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা। পালটে গিয়েছে রাজনৈতিক সমীকরণও। যেখানে এক সময় পাহাড়ে একচ্ছত্র রাজ ছিল জিএনএলএফ-এর। এক সময় যাঁকে পাহাড়ে জ্যোতি বসুর সঙ্গে তুলনা করা হত, তাঁর দলই জিএনএলএফ এখন অস্তিত্ব সংকটের কারণে জোট বেঁধেছে বিজেপির সঙ্গে। কিন্তু সমীকরণ পালটালেও পঞ্চায়েত ভোটকে নিয়ে পাহারবাসীর মধ্যে উচ্ছ্বাস দ্বিগুণ হারে বেড়েছে এত বছর পরও ৷ এই দুই দশক শেষে লোকসভা নির্বাচন, বিধানসভা নির্বাচন এবং জিটিএ নির্বাচন দেখেছে পাহারবাসী। কিন্তু গ্রামীণ স্তরের জন্য পঞ্চায়েত ভোট যে অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠেছিল সেটা তারা ঠারেঠোরে বুঝতে পারছিলেন।
দেরি হলেও সেই সুযোগ এল পাহারবাসীর কাছে। আর পঞ্চায়েত ভোটকে ঘিরে যে শুধুমাত্র পাহারবাসীদের মধ্যেই উচ্ছ্বাস রয়েছে তা নয়, চনমনে রয়েছেন ভোট কর্মীরাও। সবমিলিয়ে পাহাড়ের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে শেষ কথা বলবে পাহাড়বাসী। শুক্রবার সকাল থেকে পাহাড়ে ভারী বৃষ্টি। আর সেই দুর্যোগ মাথায় নিয়েই ভোটকেন্দ্রের মুখে রওনা দিয়েছেন ভোটকর্মীরা। এবার কালিম্পং জেলার 42 টি গ্রাম পঞ্চায়েতে ভোটারের সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ 75 হাজার। 263টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র রয়েছে সেখানে। 273 টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও 76 টি পঞ্চায়েত সমিতি আসনে নির্বাচন হবে।
আরও পড়ুন: প্রতি বুথে রাখতে হবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাফ সেকশন জওয়ান, কমিশনকে প্রস্তাব বিএসএফের
এদিন সকালে স্কটিশ ইউনিভার্সিটি ইনিস্টিউটে ডিসিআরসিতে প্রস্তুতি দেখা গেল তুঙ্গে। গোটা রাজ্যে যে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে নিয়ে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠছে, তার ঠিক উলটো ছবিই কার্যত দেখা গেল পাহাড়ে। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ভোট কেন্দ্রমুখী হতে দেখা গিয়েছে ভোট কর্মীদের। ডিসিআরসিতে উপচে পড়েছে ভিড়ও। কড়া নিরাপত্তা বলয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে ডিসিআর কেন্দ্র। তবে নির্বিঘ্নেই ভোটের যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে একে একে বেরিয়ে যেতেও দাখা গিয়েছে ভোট কর্মীদের। ভোট কর্মী সি পি কাঠিওয়ারা জানান, এখানে দীর্ঘ সময় পঞ্চায়েত ভোট না হওয়ায়, মানুষ ইভিএমে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ফের ব্যালট পেপারে ভোট হবে। তিনি বলেন, "20 বছর পর ভোট হচ্ছে। ভালোই লাগছে।" আরেক ভোট কর্মী র্যাপেল রাই বলেন, "উচ্ছ্বাসের সঙ্গে আমরা সবাই কাজ করছি। তবে বৃষ্টির জন্য একটু অসুবিধা হচ্ছে।"