দার্জিলিং, 13 জানুয়ারি: পাহাড় মানেই চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য । পাহাড় মানেই অজানার খোঁজে ঘুড়ে বেড়ানো । পাহাড়ে যতই ঘোরা যাক না কেন, প্রতিদিন নতুন নতুন জায়গার আবিস্কার করায় একটা আলাদা প্রাপ্তি । পাহাড় মানে শুধু দার্জিলিংয়ের (Darjeeling Tourist Spot) ঘুম বা মিরিক নয় । এখন পাহাড়ে শান্তির খোঁজে আনাচে কানাচে পৌঁছে যেতে চাইছেন পর্যটকরা ।
পাহাড়ে জড়িয়ে ইতিহাস
কিন্তু পাহাড়েও ইতিহাস কম নেই । পাহাড় জুড়ে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের নানা ইতিহাস (British Era Bridge)। যেমন জড়িয়ে রয়েছে গিদ্ধা পাহাড়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মংপংয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দার্জিলিংয়ে সিস্টার নিবেদিতার স্মৃতি । এ সবের পাশাপাশি পাহাড়ে রয়েছে ব্রিটিশ আমলে তৈরি নানা নিদর্শন । যাকে ঘিরে এখন পর্যটকদের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই । সে রকমই হল দার্জিলিংয়ের পুমং চা বাগান সংলগ্ন ব্রিটিশ আমলের ঝুলন্ত সেতু (Barbotey Hanging Bridge)। যা আজও বয়ে নিয়ে চলছে সেই সময়ের ইতিহাস ।
পর্যটনের নয়া ঠিকানা বারবোটে ঝুলন্ত সেতু
পর্যটনের মরশুমে দার্জিলিং ঘুরতে যান অনেকেই । কিন্তু এমনও একটি জায়গা রয়েছে যা অনেকের কাছেই অজানা । পাহাড়ে থাকা ঐতিহাসিক বারবোটে ঝুলন্ত সেতু দার্জিলিংয়ের অন্যতম প্রধান আকর্ষণের জায়গা হয়ে উঠেছে (New Tourist Destination)। দার্জিলিংয়ের তাকদহের পুমং চা-বাগান এলাকায় ব্রিটিশ আমলে তৈরি বারবোটে ঝুলন্ত সেতু । সেই ব্রিজকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা । ব্রিটিশ আমলের এই ঝুলন্ত সেতু দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটক যেতে শুরু করেছেন । ইতিমধ্যেই ওই সেতুকে কেন্দ্র করে এলাকায় দোকান, হোম স্টে গড়ে উঠেছে । এ ছাড়াও ব্রিজের কারণে স্থানীয় চালকরাও অর্থ উপার্জনের সুযোগ পেয়েছেন ।
সেতুটি কোথায় অবস্থিত ?
পুমং বারবোটের ঝুলন্ত সেতু দার্জিলিংয়ের তাকদহের গেইলে বানজিয়াং-এ অবস্থিত । গেইলে বানজিয়াংয়ে একটি মাত্র পর্যটনস্থল রয়েছে । আর তা হল ওই ব্রিজ । জায়গাটি দার্জিলিঙের মল (পরিচিত ম্যাল হিসেবে) থেকে মাত্র 23 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । 1916 সালে ব্রিটিশরা কলকাতার একটি সংস্থাকে দিয়ে ওই সেতুটি নির্মাণ করিয়েছিল । মূলত সেই সময় পুমং, জিঙ্গলাম ও নামরিং নামে তিনটি বিখ্যাত ও সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত চা বাগান ছিল ।
আরও পড়ুন: বছরের শুরুতে রেকর্ড ভিড়! অতীতের সব নজির ভাঙল বেঙ্গল সাফারি পার্ক ও দার্জিলিং চিড়িয়াখানা
সমতল থেকে 17 হাজার ফিট উচ্চতায় 475 হেক্টর জমিতে ছিল সেই চা বাগান । সেই সময় ওই তিন চা বাগানে চিনা পাতা, ক্লোনাল ও অসম প্রজাতির উন্নতমানের চা উৎপাদন হত । কিন্তু যোগাযোগের মাধ্যম না থাকায় সেই সময় ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছিল ।
সেতু নির্মাণের ইতিহাস
বিষয়টি নজরে আসে ব্রিটিশদের । তারা কলকাতার সংস্থাকে দিয়ে 1916 সালে ওই সেতুটি নির্মাণ করায় । সেতুটির মাধ্যমে ছোট ছোট ঠেলা গাড়িতে চা পাতা কারখানায় পাঠানো হত । তবে বর্তমানে সাধারণ মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কায় ওই ঝুলন্ত সেতু দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । ওই সেতুটির আশপাশে ঘোরার জায়গাগুলি হল রংলির রংলিয়ত চা বাগান, তাকদাহ চা বাগান । এছাড়াও পুমং জলপ্রপাত রয়েছে ।
স্বনির্ভর হচ্ছেন স্থানীয়রা
এই সেতুকে কেন্দ্র করে স্বনির্ভর হয়ে উঠছেন স্থানীয়রা । এলাকার মানুষের দাবি, আগামী দিনে ওই সেতুটি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে । তবে এ ক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে এসে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে বলেও তাঁরা জানিয়েছেন । সেইসঙ্গে এই শতাব্দী প্রাচীন ব্রিজটি রক্ষণাবেক্ষণেরও প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা ।
পাশেই নির্মিত স্থায়ী সেতু
যদিও সম্প্রতি সাধারণ মানুষের জন্য ওই ঝুলন্ত সেতুর পাশে স্থায়ী সেতু নির্মাণ করেছে জিটিএ । ফলে ওই স্থায়ী সেতু দিয়ে যাওয়ার সময় পর্যটকরা ঝুলন্ত সেতুকে দেখে অল্প হলেও সেখানে সময় কাটান । স্থানীয় এলাকাবাসী বিপিন রাই ও নেওয়াস রাই বলেন, "এই সেতু ব্রিটিশ আমলের ইতিহাস বয়ে নিয়ে চলছে । এখন এখানে ধীরে ধীরে দোকানপাটও গড়ে উঠছে । মানুষ পেয়েছে নয়া রোজগারের পথ ৷"