বংশীহারি, 28 মে : বংশীহারি ব্লকের একেবারে শেষ প্রান্তে আদিবাসী গ্রাম চটকাহার ৷ এই প্রত্যন্ত গ্রামে টিনের ঘরে তিন ছেলে ও নাতনিকে নিয়ে থাকেন প্রবীণ আদিবাসী কবি ভোজরাই হেমব্রম (Santali Poet Bhojrai Hembram Story) ৷ এই কবি কৃষি কাজে ব্যবহৃত জল উত্তোলনের কাজে খুব সামান্য বেতনে চাকরি করতেন ৷ তাঁর লেখা আদিবাসী ও বাংলা ভাষাযর কবিতা এবং একাধিক উপন্যাস আজ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় ৷ কিন্তু, আজও পর্যন্ত রাজ্য সরকারের তরফে যোগ্য সম্মানটুকু পাননি তিনি ৷ এমনকি কোনো সুযোগ-সুবিধাও পাচ্ছেন না তিনি ৷ পেনশনের সামান্য টাকায় সংসার চালাতে, গিয়ে বই ছাপানোর টাকা জোগাড় করতে পারছেন না ভোজরাই হেমব্রম ৷ তাঁর লেখা অনেক কবিতা এখনও পড়ে আছে ৷ কিন্তু, অর্থের অভাবে সেগুলি ছাপা হবে কিনা তা জানেন না কবি ৷
ছোট টিনের ঘরে বসেই হেমব্রম আজ পর্যন্ত বিভিন্ন ছোট-বড় কবিতা লিখেছেন এবং তা জারি রয়েছে ৷ কবিতার মাধ্যমে তিনি বারবার সমাজ সংস্কারের কথা তুলে ধরেছেন সাঁওতালি ভাষায় ৷ সাহিত্য সৃজনের জন্য 1993 সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আদিবাসী উন্নয়ন দফতর থেকে পেয়েছেন তাম্রফলক । 2003 সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর নামাঙ্কিত সম্মানে ভূষিত করেছেন বংশীহারির সাঁওতালি কবিকে ৷ কিন্তু, এত সম্মান পেলেও মাথা গোঁজার জন্য আজও পাকা ঘর পাননি তিনি ৷ প্রবীণ কবির আক্ষেপ সরকার পুরস্কার দিয়েছে তারপর আর ফিরে তাকায়নি ৷ এলাকার লোকজনের অভিযোগ কবি ভোজরাই হেমব্রমকে যোগ্য সম্মান দেওয়া হচ্ছে না ৷ রাজ্য সরকার কী কারণে তাঁকে যোগ্য সম্মান দিচ্ছে না ? তা জানানেই তাঁর পরিচিতদের ৷
এই বিষয়ে জয়দেব সাহা নামে এক গ্রামবাসী জানান, ‘‘উনি যে একজন লেখক তা আমরা সবাই জানি ৷ তিনি আদিবাসী হলেও বাংলা ভাষা খুব ভালভাবে বলতে পারেন ৷ উনি একজন লেখক কিন্তু লেখক এর সম্মান তিনি পাচ্ছেন না ৷ ওনার বাড়ি টিনের চাল দিয়ে তৈরি ৷ একজন গরীব মানুষের থেকেও শোচনীয় অবস্থা এই লেখকের ৷ সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে আজও তিনি বঞ্চিত ৷ আজ পর্যন্ত দেখলাম না যে, বাড়িতে কোন নেতা বা মন্ত্রী উপস্থিত হয় লেখকের সঙ্গে কথা বলেছেন ৷’’
সঞ্জয় পাল নামে আরও এক প্রতিবেশি জানান, ‘‘ভোজরাই হেমব্রমকে আমরা জেঠু বলেই চিনি ৷ এই প্রত্যন্ত গ্রামে টিনের ঘরে বসবাস করেন তিনি ৷ খুবই অবস্থা খারাপ অবস্থা ৷ আজ পর্যন্ত কোনও সরকারি সাহায্য পাননি ৷ তিনি আমাদের গ্রামে যোগ্য সম্মান পেলেও, বাইরে কোথাও সম্মান পান না ৷ আমরা চাইছি সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে শুরু করে ভাল বাড়িঘর হোক এই আদিবাসী লেখকের ৷’’
এই বিষয়ে আদিবাসী কবি ভোজরাই হেমব্রম কী বলছেন ? তাঁর কথায়, ‘‘আমি 1958 সাল থেকে কবিতা লেখা শুরু করি এবং 1966 সালে প্রথম তা প্রকাশিত হয় ৷ আমি যখন স্কুলে পড়তাম, তখন থেকেই কবিতা লেখা শুরু করি ৷ এখনও পর্যন্ত প্রচুর বই লিখেছি ৷ বাঁকুড়া, বিশ্বভারতী থেকে শুরু করে রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রচুর কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস আজও পড়ানো হয় আমার নামে ৷ বেশ কিছুদিন আগেই বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রচুর ছাত্রছাত্রী আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে ৷ কিছুক্ষণ সময় কাটালাম তাঁদের সঙ্গে ৷ এখনও বই লিখি ৷ কিন্তু, টাকার অভাবে তা প্রকাশ পায় না ৷ ছাপাতে পারব কিনা জানিনা !’’
এ নিয়ে বংশীহারি ব্লকের বিডিও সুদেষ্ণা পাল জানিয়েছেন, ভোজরাই হেমরমের বিষয়ে জেলার ডিআই অফিসে কথা বলবেন তিনি ৷ ওনার আর্থিক অবস্থা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও ৷ এর পর ভোজরাই হেমব্রম তাঁর যোগ্য সম্মান পান কিনা সেটাই দেখার ৷