বালুরঘাট, ৯ ফেব্রুয়ারি : দেড় মাস ধরে বন্ধ স্কুলের ক্লাসরুম। গত শুক্রবার অতিরিক্ত জেলাশাসকের নির্দেশে বন্ধ স্কুলের তালা ভাঙা হলে প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের আলমারি থেকে পাওয়া যায় একটি পিস্তল। ঘটনাটি চককাশি শ্যামসুন্দর হাই স্কুলের। বালুরঘাট থানার পুলিশ ঘটনাস্থানে পৌঁছে পিস্তলটি উদ্ধার করে। পরে জানায়, সেটি খেলনা। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) মৃণালকান্তি রায় সিংহ পুরো বিষয়টি পর্ষদকে জানান।
মাস দেড়েক আগে দুই শিক্ষকের মধ্যে কাজিয়ার জেরে প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক স্কুলের মূল গেট ও ক্লাসরুমে তালা দিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। জেলা স্কুল পরিদর্শকের নির্দেশেও ক্লাসরুমের তালা খোলা যায়নি। কার্যত বাধ্য হয়ে স্কুলের বারান্দা ও খোলা আকাশের নিচে ত্রিপল টাঙিয়ে ক্লাস চালু হয়। গত বৃহস্পতিবার জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ নিয়ে এসে স্কুলের ক্লাসরুমের তালা ভাঙেন। পাশাপাশি প্রধান শিক্ষকের আলমারি ভেঙে সব নথি বের করেন। সেই সময়ই বের হয় পিস্তলটি।
চককাশি শ্যামসুন্দর হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে ২০০১ সালে কাজে যোগদেন শুভেন্দু চক্রবর্তী। ওই স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৩০০ জন। শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন ১১ জন। ২০১২ সালে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে শুভেন্দু চক্রবর্তীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে ম্যানেজিং কমিটি। তবে সেই বরখাস্তটি অনুমোদন করেনি পশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদ। মাস কয়েকের মধ্যেই তিনি কাজে যোগ দেন। ২০১৬ সালে নানা কারণ দেখিয়ে ফের তাঁকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয় সঞ্জয় মণ্ডল নামে এক শিক্ষককে। বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আপিল কমিটির দ্বারস্থ হন। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, আপিল কমিটি শুভেন্দু চক্রবর্তীর পক্ষে রায় দেয়। তাঁকে কাজে যোগ দিতে বলা হয়। ১ ডিসেম্বর স্কুলে যোগ দেন তিনি। ২২ জানুয়ারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেন। ৩১ জানুয়ারি তাঁর কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়। ঠিক তার আগে ২৩ জানুয়ারি প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় কুমার মণ্ডল স্কুলে তালা মেরে চাবি নিয়ে চলে যান। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা করা হয় স্কুলেরই রিতা দাস নামে সহকারি শিক্ষিকাকে। কিন্তু, সঞ্জয়বাবু কাজে যোগ না দেওয়ায় স্কুলের বারান্দায় ক্লাস শুরু হয়।
এই বিষয়ে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রিতা দাস বলেন, "মেন গেট ও অফিস ঘরটি খুলে দিয়ে গেছিলেন DI। সেই ঘরে একদিকে একটি ক্লাস চলছে। বাকি ক্লাস হচ্ছে বারান্দায়।"
অন্যদিকে ভারপ্রাপ্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক মৃণালকান্তি রায় সিংহ বলেন, " প্রধান শিক্ষকের ঘর থেকে একটি পিস্তল পাওয়া গেছে। সেটি পুলিশ উদ্ধার করেছে। সঞ্জয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে পর্ষদে পুরো বিষয়টি জানানো হয়েছে।"
DSP হেড কোয়ার্টার ধীমান মিত্র জানান, পিস্তলটি খেলনার বলেই মনে হচ্ছে। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।