হিলি, 7 অক্টোবর : হিলি সীমান্ত দিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চলছে একাধিক লরি । ওভারলোডিং লরি বড় পাথর নিয়ে বাংলাদেশ যাচ্ছে । সম্পূর্ণ বিষয়টিই না কি পুলিশ জানে ! কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করেনি । এই কাজের সঙ্গে জড়িয়ে এনামুল হকের নাম । বিরোধীরা বলছে, শাসকদলের নেতার ঘনিষ্ঠ সে । ফলে এখন হিলি আন্তর্জাতিক চেকপোস্টের সর্বেসর্বা এনামুলই । কিন্তু এই এনামুলের উপর রয়েছে CBI-র নজর ।
আন্তর্জাতিক গোরু পাচারকারীদের কথা উঠলেই আসে মুর্শিদাবাদের এনামুল হকের নাম । একসময় হিলি সীমান্তে রমরমা বেআইনি গোরু-পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিল সে । তারই পরিবারের অধীনস্থ সংস্থা JHM সংস্থা । সেই সংস্থা ও এনামুলের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে CBI-র তদন্তে ।
JHM সংস্থার একাধিক লরি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ যাতায়াত করে । সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ওভারলোডিং পাথর ব্যবসার সঙ্গে তারা যুক্ত বলে অভিযোগ । প্রতিদিন গড়ে এই সংস্থার 10-15টি লরি বাংলাদেশ যায় । হিলিতে অশোক মালো নামে এক ব্যক্তি সংস্থার ব্যবসা দেখাশোনা করেন । হিলি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ব্যবসার লাইন কীভাবে পেল তারা ? অভিযোগ, রাজ্যের প্রভাবশালী এক নেতার সূত্রেই এনামুলের পরিবারের এই সংস্থা লাইন পেয়েছে । শাসকদলের রাজ্যস্তরের নেতার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় বর্তমানে হিলি আন্তর্জাতিক চেকপোস্টের সর্বেসর্বা এনামুলই ।
সংস্থার কার্যত দায়িত্বে এনামুলের তিন ভাগ্নে জাহাঙ্গির আলম, হুমায়ন কবীর ও মেহেদি হাসান । এদের নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে সংস্থার নাম । বছর দুই তিন আগে হঠাৎ এই হিলি সীমান্তে 150টিরও বেশি পাথর বোঝাই লরি রাতারাতি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল এই সংস্থা । অভিযোগ, সেই সময়ে রাজ্যের শাসকদলের এক প্রভাবশালী নেতার হাত ধরে হিলি সীমান্ত দিয়ে ব্যবসার লাইন করে নিয়েছিল এনামুল । সেই থেকেই এখনও পর্যন্ত হিলি সীমান্ত দিয়ে আন্তর্জাতিক পাথর রপ্তানির ব্যবসা করে আসছে JHM সংস্থা ।
সংস্থার পক্ষ থেকে বীরভূম ও সংলগ্ন এলাকা থেকে বোল্ডার বা বড় পাথর নিয়ে আসা হয় । বীরভূম থেকে সরকারি নির্দেশ মোতাবেক পাথর নিয়ে আসে । কিন্তু পতিরামে আসার পর প্রতি লরিতে ওভারলোডিং পাথর তোলা হয় । এরপর সেই পাথর বাংলাদেশের রপ্তানি করা হয় । অভিযোগ, পুলিশ জানলেও কোনও ব্যবস্থা নেয় না । দু'বছরের বেশি সময় ধরে একচেটিয়া ভাবে ও সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ওভারলোডিং পাথর বাংলাদেশের রপ্তানি করা হচ্ছে । পণ্য রপ্তানি বা আমদানিকারীরা এনিয়ে বিশেষ মাথা ঘামায় না । তবে এনামুল হকের উপর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার নজর । ফলে অস্বস্তিতে হিলির আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীরাও । যেকোনও সময় হিলি সীমান্তে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তের স্বার্থে আসতে পারে ।
সূত্রের খবর, JHM সংস্থার 100টিরও বেশি লরি আছে । যার বেশিরভাগই হিলি সীমান্ত দিয়ে পাথরের ব্যবসা করে । এই সংস্থার মূল কর্ণধার এনামুল হক । তবে দেখাশোনা করে তার ভাগ্নেরা । শুধুমাত্র লরি বা পাথরের ব্যবসা নয় । আন্তর্জাতিক গোরু পাচারকারী হিসেবেও উঠে আসে মুর্শিদাবাদের এনামুল হকের নাম ।
প্রায় 10-12 বছর আগে হিলি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে গোরু পাচারের রমরমা কারবার ছিল । জেলার অভিজ্ঞ মহলের মত অনুযায়ী, এই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে গোরু পাচার করার সবথেকে আদর্শ সীমান্ত । তবে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে সীমান্তে BSF নিরাপত্তায় গোরু পাচারের সংখ্যা একদম তলানিতে ঠেকেছে ।
এবিষয়ে JHM সংস্থার এক লরি চালক জানান, তিনি এই নিয়ে দ্বিতীয় বার হিলিতে পাথর নিয়ে এলেন । বীরভূম থেকে পাথরগুলি নিয়ে এসেছেন । এই লরির মালিক ও এনামুল হক সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে বলে তিনি জানান । এই সংস্থার আরেক লরির কর্মী জাহাঙ্গির শেখ বলেন, "আমি বীরভূম থেকে বড় পাথর নিয়ে হিলিতে এসেছি । লরির মালিক কে তা জানি না ।"
হিলি এক্সপোর্টারস অ্যান্ড কাস্টমস ক্লিয়ারিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অশোক মণ্ডল জানান, বেশ কয়েক বছর ধরেই হিলি সীমান্ত দিয়ে JHM সংস্থার লরি পাথর নিয়ে বাংলাদেশ যায় । প্রথমদিকে একসঙ্গে একদিন 150টি লরি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল হিলির রাস্তায় । বর্তমানে ওই সংস্থার 10-15টি লরি বড় পাথর বাংলাদেশ নিয়ে যায় ।
যদিও শাসকদলের প্রভাবের বিষয়টি কার্যত উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল । জেলার তৃণমূল কো-অর্ডিনেটর সুভাষ চাকি বলেন, দল এই বিষয়ে কিছু জানে না । রটনা অনেকেই রটায় । কিন্তু তা সবসময় সত্যি হয় না । দলের নজরে এমন কিছু আসেনি । CBI তদন্ত করছে । তদন্তে জানা যাবে, এর সঙ্গে কারা যুক্ত ।
কিন্তু BJP-র অভিযোগ, শাসকদলের প্রভাব অবশ্যই রয়েছে । দক্ষিণ দিনাজপুর BJP-র সাধারণ সম্পাদক বাপি সরকার বলেন, "এনামুল হকের কথা আমরা শুনেছি । শাসকদলের প্রভাব অবশ্যই আছে । না হলে এইভাবে ব্যবসা করা সম্ভব না ।"