বালুরঘাট, 17 অগাস্ট : রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে বালুরঘাট বিমানবন্দর ৷ সেটিকে নতুন করে চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল বর্তমান সরকার । ইতিমধ্যেই কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে বালুরঘাটে বিমানবন্দরের নতুন রানওয়ে, সীমানার প্রাচীরসহ অন্যান্য পরিকাঠামো তৈরি করছে জেলা প্রশাসন । তবে ঠিক কবে চালু হবে বালুরঘাট বিমানবন্দর তা নিয়ে রয়েছে সংশয় । এদিকে বালুরঘাট বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে শুরু করে চারপাশ আগাছায় ভরে গেছে । বিমানবন্দর চালু হলে প্রত্যন্ত এই জেলার সঙ্গে অন্য রাজ্য ও দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেকটাই উন্নতি হবে ।
বালুরঘাট ব্লকের ডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের মাহিনগর এলাকায় রয়েছে বালুরঘাট বিমানবন্দর । প্রায় 50 একর জমির উপর রয়েছে বিমানবন্দরটি । বিমানবন্দরটি তৈরির পিছনে কাহিনি আছে ৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সামরিক প্রয়োজনে ব্রিটিশরা বালুরঘাটে একটি অস্থায়ী বিমানবন্দর তৈরি করেছিল । যদিও পরবর্তীকালে পঞ্চাশের দশকে সেখান থেকে সুরেখা এয়ার সার্ভিস তাদের বিমান পরিষেবা স্থায়ীভাবে চালু করে । কিন্তু ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় সেটিও বন্ধ হয়ে যায় । অবশেষে 1984 সালে এয়ার সার্ভিস ডোনিয়ার গোত্রের বিমান বালুরঘাট বিমানবন্দর থেকে চলাচল শুরু হয় । পরে অবশ্য তা বেশ কয়েকটি কারণে বন্ধ হয়ে যায় । ম্যানুয়াল নেভিগেশন সিস্টেমের জন্য নির্দিষ্ট জায়গার বদলে অন্য অঞ্চলে ভুল করে নেমে পড়ে বিমানটি । ফলে, ধীরে ধীরে যাত্রী সংখ্যা কমতে থাকে বালুরঘাট বিমানবন্দরের । ধীরে ধীরে তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় । এদিকে দীর্ঘদিন সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় বালুরঘাট বিমানবন্দর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল । বাম আমলেও পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল বালুরঘাট বিমানবন্দর । সেটিকে সংস্কার বা বাঁচানোর কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ । ফলে, 33 বছরেরও বেশি সময় ধরে এই এয়ারপোর্ট দিয়ে কোনওরকম বিমান চলাচল করেনি ।
তবে বর্তমান সরকার বালুরঘাট বিমানবন্দরটি পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেয় । ফলে, 2016 সালে পূর্ত দপ্তরের পক্ষ থেকে প্রথম ধাপে 11 কোটি 50 লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয় । সেই টাকায় মূলত রানওয়ে, সীমানা প্রাচীর, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জসহ অন্যান্য পরিকাঠামো তৈরি করা হয় । আগের থেকে বেশ কয়েকশো মিটার রানওয়ে তৈরি করা হয় । পাশাপাশি, গোটা বিমানবন্দরজুড়ে CCTV - র ব্যবস্থা করা হয়েছে । বর্তমানে এই বিশাল জমির মধ্যে প্রায় দেড় কিলোমিটার জায়গা জুড়ে রয়েছে রানওয়ে । বর্তমানে বালুরঘাট বিমানবন্দর থেকে উড়ান চালুর সব রকম পরিকাঠামো তৈরি থাকলেও বিমানবন্দরটি আবারও চালুর বিষয়ে কোনওরকম ভূমিকা নেই রাজ্য সরকারের । এদিকে বিগত দু'বছর ধরে বালুরঘাট বিমানবন্দরটি তৈরির পর থেকে পড়ে থাকায় রানওয়ে থেকে গোটা চত্বর আগাছায় ভরে গেছে । আগে বিমানবন্দরে কর্মী থাকলেও তিনি অবসর নেওয়ার পর নতুন করে কোনও কর্মী নিয়োগ করেনি এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া । বর্তমান সরকার 2017 সাল থেকে একাধিকবার ঘোষণা করেছে বালুরঘাট বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে । তবে ঘোষণা অবধিই রয়েছে , এখনও পর্যন্ত চালু হয়নি বালুরঘাট বিমানবন্দরটি ।
এবিষয়ে বালুরঘাটের ব্লকের মালঞ্চা এলাকার যুবক তুহিন দাস জানান, লোকমুখে শুনেছেন বালুরঘাট বিমানবন্দরের কাজ শেষের দিকে । বিমানবন্দর চালু হলে তাঁদের সুবিধা হত । শুধুমাত্র প্রত্যন্ত দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা নয়, প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারতে আসেন, তাঁরাও সুবিধা পেতেন । তাই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে তাঁদের আবেদন, দ্রুত বালুরঘাট বিমানবন্দর থেকে উড়ান পরিষেবা চালু করা হোক ।
এবিষয়ে তৃণমূল যুবর নেতা রোহন চক্রবর্তী বলেন, বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক । তবে পরিত্যক্ত বালুরঘাট বিমানবন্দরকে ফের চালুর বিষয়ে সব রকম উদ্যোগ নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত সরকার । তবে এই বিষয়টি শুধুমাত্র রাজ্য সরকারের নয় ৷ কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন । ফলে, কিছু সমস্যা থাকায় বিমানবন্দরটি এখনও চালু হয়নি । তবে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে যে বিরোধিতাই থাক , সাধারণ মানুষের কথা ভেবে বিমানবন্দরটি দ্রুত চালু করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন তিনি ।
অন্যদিকে, জেলাশাসক নিখিল নির্মল বলেন, কোরোনার জন্য বর্তমানে সবকিছুই বন্ধ রয়েছে । তবে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকরা বালুরঘাট বিমানবন্দর পরিদর্শন করে গেছেন । এনিয়ে বর্তমানে নতুন কোনও তথ্য নেই ।