বালুরঘাট, 26 অগস্ট: স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি নামে একটি বিরল রোগে আক্রান্ত দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের নয় মাসের এক শিশু । এই রোগের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল । প্রয়োজন সাড়ে 17 কোটি টাকা ৷ তাই চিকিৎসার খরচ নিয়ে কার্যত দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়েছে পরিবারের । কারণ, দুই বছর বয়সের মধ্যে চিকিৎসা না হলে মৃত্যু হতে পারে ওই শিশুর । একমাত্র ছেলের জীবন বাঁচাতে অর্থ সাহায্যের আর্জি নিয়ে সোশাল মিডিয়া বার্তা দিয়েছেন বাবা ধ্রুব মণ্ডল ও মা সঙ্গীতা ৷ শিশুর মা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সকলের কাছে আবেদন জানিয়েছেন সাহায্যের জন্য ৷
বিরল রোগে আক্রান্ত ন’মাসের শিশু: বালুরঘাট শহরের মঙ্গলপুর এলাকার বাসিন্দা ধ্রুব মণ্ডল । তিনি একজন ভারতীয় সেনাকর্মী । স্ত্রী সঙ্গীতা মণ্ডল গৃহবধূ । তাঁদের একমাত্র ছেলে জন্মের নয় মাস পরেও স্বাভাবিক নয় । বালুরঘাটের এক শিশু বিশেষজ্ঞর কাছে গত এপ্রিল মাসে যান ওই শিশুর পরিবারের লোকেরা । সেখানে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শিশুর জিনগত সমীক্ষা করা হয় । এরপরেই জানা যায় শিশুটি স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি রোগে আক্রান্ত । বিরলতম এই রোগের কথা শুনেই চমকে ওঠে পরিবার ।
সঠিক চিকিৎসা করতে প্রথমে কলকাতা ও তারপর দিল্লির এইমসে নিয়ে যাওয়া হয় ছোট্ট ছেলেটিকে । কিন্তু সেখানেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর একই রোগ স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি টাইপ-ওয়ান এর কথা জানান চিকিৎসকরা । স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি টাইপ-ওয়ান খুবই বিপজ্জনক রোগ । চিকিৎসা ছাড়া, অনেক আক্রান্ত শিশু দুই বছর বয়সের আগেই মারা যায় । এই রোগে আক্রান্ত শিশুরা বসতে পারে ৷ কিন্তু তাদের পক্ষে দাঁড়ানো বা কোনও সাহায্য ছাড়া হাঁটা কঠিন হয়ে পড়ে ।
কী ধরনের রোগ, চিকিৎসার উপায় কী: চিকিৎসকরা জানান, স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (এসএমএ) একটি জেনেটিক রোগ, যা বিশেষভাবে মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের মোটর নিউরন স্নায়ু কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে । হাত, পা, বুক, গলা, মুখ ও জিভের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে মোটর নিউরন । সেই সঙ্গে পেশীর নড়াচড়া যেমন হাঁটা, কথা বলা, গিলতে ও শ্বাস নেওয়াতেও নিয়ন্ত্রণ করাও এই মোটর নিউরোনের কাজ ।
চিকিৎসকরা আরও জানিয়েছেন, এই রোগটি এতটাই বিপজ্জনক যে সময় মতো চিকিৎসা না হলে আক্রান্তের জীবনও চলে যেতে পারে । এসএমএ-র সবচেয়ে সাধারণ রূপটি একটি পরিবর্তিত বা অনুপস্থিত জিনের কারণে ঘটে । এটি সারভাইভাল মোটর নিউরন জিন ওয়ান (এসএমএন-1) নামে পরিচিত । এটি সাধারণত মোটর নিউরনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন উৎপাদনের জন্য কাজ করে ।
দু’বছরের বয়সের মধ্যে এর সঠিক চিকিৎসা না হলে সপ্তর্ষিকে আর বাঁচানো সম্ভব না বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা । কিন্তু স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি নামের এই মারণ রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল । চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই রোগের জন্য ব্যবহৃত একটিমাত্র ইনজেকশন রয়েছে ৷ তার নাম, জোলজেনসমা ৷ যার দাম প্রায় সাড়ে সতেরো কোটি টাকা, যা ভারতে অমিল । শুধুমাত্র বিদেশ থেকে এই ইনজেকশনটি এনেই বাঁচানো সম্ভব ছোট্ট ওই শিশুটিকে ।
পরিবারের বক্তব্য: একজন সাধারণ সেনাকর্মীর পক্ষে এত খরচ বহন করা অসম্ভব ব্যাপার । যার ফলে কার্যত মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে অসহায় ওই শিশুর পরিবারের । কিন্ত কোনোভাবেই যেন হাল ছাড়তে নারাজ সেনাকর্মী ওই শিশুর বাবা ধ্রুব মণ্ডল । ছেলের এই বিরলতম রোগের চিকিৎসার জন্য সকলের কাছে করজোড়ে আবেদন জানিয়েছেন সোশাল মিডিয়ায় ৷
শিশুর মা সঙ্গীতা মণ্ডলের দাবি, বালুরঘাট থেকে দিল্লি সব জায়গায় একই রিপোর্ট সামনে এসেছে । রোগের সমস্ত উপসর্গও তাঁর ছেলের মধ্যে রয়েছে । কিন্তু কিভাবে ছেলের জীবন ফেরাবেন, তা তারা ভাবতেই পারছেন না । এত টাকাও কীভাবে জোগাড় হবে, সেটাও বুঝতে পারছেন না । একমাত্র দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই পারেন তাঁর ছেলের জীবন বাঁচাতে ।
কিন্তু কীভাবে জুটবে এই বিপুল অঙ্কের টাকা ? তা ভেবেই যেন ডুকরে কাঁদছেন শিশুর দিদিমা । একই চিন্তা বাড়িয়েছে প্রতিবেশী ও অনান্য আত্মীয়দের মধ্যেও । মাত্র 15 মাসের মধ্যে সাড়ে 17 কোটি টাকা জোগাড় করে কি আদৌও ছোট্ট শিশুটির জীবন ফেরাতে পারবে তার পরিবার ? যে প্রশ্নই যেন এখন চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে গোটা বালুরঘাট শহরে ৷ শিশুটির দাদুর দাবি, যদি সহৃদয় ব্যক্তিরা তাঁদের সাহায্য করেন, তবে নাতির চিকিৎসা করাতে পারবেন তাঁরা ।
আরও পড়ুন: বিরল স্নায়ুরোগ! খুদের চিকিৎসার খরচ 18 কোটি, আর্থিক সাহায্যের আবেদন পরিবারের