কুশমণ্ডি, 12 জুন : খাতায় কলমে ঘরটা ওমপ্রকাশ ঝাঁ-র । তিনি কুশমুণ্ডি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল পঞ্চায়েত উপপ্রধান । তাঁর ফাঁকা ঘরেই বসত মধুচক্রের আসর । এমনই অভিযোগ গ্রামবাসীদের । সেই ঘর থেকেই গ্রামবাসীরা এক যুবতি সহ তিনজনকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিল । তাদের মধ্যে একজন যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি অম্বরীশ সরকারের ঘনিষ্ঠ । ঘটনাটি দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডি থানার খাগড়াকুটি এলাকার ।
গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, রাত পোহালেই বসত মধুচক্রের আসর । নিষেধ করলেই মিলত হুমকি । ক্ষমতার ভয় দেখানো হত । তাঁদের অভিযোগ, পুলিশকে বারবার জানালেও কোনও কাজ হয়নি । ফলে গতকাল গ্রামবাসীরা নিজেরাই উদ্যোগ নেয় মধুচক্রের আসর হাতেনাতে ধরতে ।
গ্রামবাসীরা জানান, অন্যদিনের মত গতরাতেও সেই ফাঁকা ঘরে আসে বেশ কয়েকজন যুবক ও এক যুবতি । মদ মাংসের পাশাপাশি পাশের জঙ্গলে ওই যুবতির সঙ্গে যুবকরা শারীরিক সম্পর্ক করছিল অভিযোগ । সেখান থেকেই তাদের হাতেনাতে ধরে গ্রামবাসীরা । তবে তাদের হাত থেকে পালিয়ে যায় দু'জন । ধৃতদের নাম মহম্মদ আজ়িজ় ওরফে বাচ্চু (26), রবিউল ইসলাম (28) । বাচ্চু অম্বরিশ সরকারের ঘনিষ্ঠ এবং তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত এলাকায় । আর রবিউল পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার ।
ফাঁকা ঘরটিতে ঢুকে দেখা যায় ইতিউতি ছড়িয়ে আছে মদের বোতল । একপাশে রান্নার সরঞ্জাম । একটি চৌকি, চেয়ার টেবিল । পাশের জঙ্গলে পাতা একটি বিছানা ।
এবিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মানিক সরকার জানান, ওই ঘরটিতে অনেকদিন থেকে মধুচক্রের আসর চলত। এর আগেও বেশ কয়েকবার নিষেধ করলেও তারা ক্ষমতার ভয় দেখিয়ে আসছিল। রোজ রাতেই ওই ঘরে মদের আসর বসত। বাইরে থেকে ছেলেমেয়ে সব আসত। গতকালও চার পাঁচজন মোটর বাইকে চেপে এসেছিল । সঙ্গে ছিল একটি মেয়ে। এরপরই তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলেন স্থানীয়রা ।
এবিষয়ে যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি অম্বরীশ সরকার বলেন, "উপপ্রধানের বাড়িতে কী হয় আমি জানি না । সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম । তবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না । কোনওরকম অসামাজিক কাজ আমরা বরদাস্ত করব না । আইন আইনের পথে চলবে । থানার সঙ্গে কথা বলেছি এবং প্রশাসনকে বলেছি উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে ।" উপপ্রধান ওমপ্রকাশ ঝাঁ বাইরে থাকার জন্য এই বিষয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি ।
অন্যদিকে, কুশমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক মানবেন্দ্র সাহা বলেন, "এলাকার একটি ঘরে দেহব্যবসা চলছে এমন খবর পাই আমরা । অভিযান চালিয়ে দু'জন যুবক সহ এক যুবতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । ধৃতদের গঙ্গারামপুর মহকুমা আদালতে পাঠানো হয়েছে । ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে । এই ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কি না তাও দেখা হচ্ছে ।"