ভাঙড়, 15 জুন: মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিনও অশান্ত হয়ে উঠল ভাঙড় । ঝড়ল রক্ত । গুলিতে মৃত্যু হয়েছে শাসক এবং বিরোধী দু'পক্ষের কর্মীই। মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার দুপুরেও উত্তপ্ত হয়ে উঠল দক্ষিণ 24 পরগনার ভাঙড় (2 নং ব্লক) বিডিও অফিস চত্বর। আর এদিনই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হল এক আইএসএফ কর্মীর। অন্যদিকে, গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে দুই তৃণমূল কর্মীরও । যার জেরে, মনোনয়ন পেশের শেষদিনে মোট তিনজনের মৃত্যু হল ভাঙড়ে । উত্তর থেকে দক্ষিণ, রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন পর্বেই বলি তিনজন ।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিন ছিল বৃহস্পতিবার । অভিযোগ, তার একদিন আগে থেকেই আরাবুল এবং শওকত মোল্লার নেতৃত্বে এলাকায় দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করে দুষ্কৃতীরা । আইএসএফ কর্মী-সমর্থকদের আরও অভিযোগ, বুধবারই কার্যত পুলিশের সামনেই তৃণমূলের তরফে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, আইএসএফ কর্মীরা মনোনয়ন জমা দিতে এলে তাদের পিঠের চামড়া তুলে দেওয়া হবে । এর সঙ্গেই মুহূর্মুহূ বোমা, গুলির আওয়াজে গত তিনদিনে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল ভাঙড়। এরপর আর সময় নষ্ট করেননি ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী । এমনকী ঘটনার ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে নবান্নে পৌঁছে গিয়েছিলেন খোদ আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী । যদিও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়নি । আর নবান্নের বাইরে দাঁড়িয়েই তিনি কার্যত ভাঙড়ের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন । কার্যত নওশাদের সেই আশঙ্কাই এদিন অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল ।
পঞ্চায়েতে মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রথম দিন থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ভাঙড় । যা অব্যাহত থাকল মনোনয়নের শেষ দিনও । এদিন দুপুর থেকেই দফায় দাফায় উত্তেজনা ছড়ায় ভাঙড় বিডিও অফিস চত্বর। অভিযোগ, মুড়ি-মুড়কির মতো পড়তে থাকে বোমা। বারুদের গন্ধে ভরে যায় গোটা এলাকা। অশান্তির জেরে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক আইএসএফ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ । জানা গিয়েছে ওই আইএসএফ কর্মীর নাম মইনুদ্দিন মোল্লা। ঘটনায় আহত হয়েছিলেন আরও কয়েকজন । জানা গিয়েছে, আহত আরও দুই তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁরাও গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন বলে শাসকদলের তরফে দাবি করা হয়েছে । জানা গিয়েছে, বিডিও অফিসের পাশে স্থানীয় একটি পুকুরের পাশ থেকে একজনের দেহ মিলেছে । কাশীপুর থানার পুলিশ সেই দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় । পুলিশ জানিয়েছে মৃত ব্যক্তির নাম আলাউদ্দিন মোল্লা । অন্যদিকে, রশিদ মোল্লা নামে আরও একজনের দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ । এরপরই, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশবাহিনী। কার্যত পুলিশের সঙ্গেও খণ্ড যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে দুষ্কৃতীরা।
আরও পড়ুন: 'ভাঙড়ের অশান্তিতে দায়ী আইএসএফ, চোপড়ার ঘটনাতেও যুক্ত নয় তৃণমূল', দাবি মমতার
অন্যদিকে, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি করা হয় পাশাপাশি পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। এর ফলে, বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন বলে পালটা দাবি করা হয়েছে পুলিশের তরফে। আইএসএফ কর্মীদের অভিযোগ, তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দিচ্ছে তৃণমূল। তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী বিডিও অফিস চত্বর নিজেদের দখলে রেখেছে বলেও অভিযোগ আইএসএফের। এমনকী সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েও আক্রান্ত হয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে। সবমিলিয়ে ভোটের আগেই অগ্নিগর্ভ ভাঙড়।