ঘোড়ামারা দ্বীপ, 28 মে: ঘোড়ামারা দ্বীপের মানুষদেরকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এবার এগিয়ে এল দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ৷ তাদের উদ্যোগে সেখানে তৈরি হয়েছে একটি বহুমুখী কমিউনিটি সেন্টারের ৷ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে নতুন মাথা গোজার আশ্রয় পেয়ে ভীষণ খুশি দ্বীপের বাসিন্দারা ৷
কথায় আছে, 'নদীর ধারে বাস তার ভাবনা বারো মাস' ৷ এই প্রবাদ যেন ঘোড়ামারার দ্বীপ এলাকার বাসিন্দাদের জন্যই তৈরি হয়েছে । মূল ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ঘোড়ামারা দ্বীপকে ঘিরে রয়েছে নদী ও সমুদ্র । এক দিকে বটতলা, মুড়িগঙ্গা ও হুগলি নদী । অন্য দিকে বঙ্গোপসাগর । সাগরদ্বীপে যাওয়ার সময়ে ডান দিকে পড়ে ঘোড়ামারা দ্বীপ । এক সময়ে সাগরদ্বীপের অংশ ছিল এটি । প্রবীণ বাসিন্দারা জানালেন, সাগর ও ঘোড়ামারা দ্বীপের মাঝে ছোট একটি খাল ছিল । অনেকে সাঁতরে ওই খাল পেরোতেন । সেই খাল এখন বেড়ে প্রায় 8-9 কিলোমিটার চওড়া নদী হয়ে গিয়েছে ।
ক্রমশ ক্ষয়ে যাচ্ছে দুটো দ্বীপ। ঘোড়ামারা ভাঙছে দ্রুত । প্রত্যেক বার কোটালের সময়ে বাঁধ ভেঙে জল ঢোকে । প্রতিবারই কেউ না কেউ ভিটেমাটি হারান । ক্ষতি হয় চাষের জমি, পানের বরজের । বহু পরিবার এই ঘোড়ামারা দ্বীপ ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে । কিন্তু জন্মভিটের টানে এখনও বহু পরিবার পড়ে রয়েছে ঘোড়ামারাতে । প্রতিবছর একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় এসে ঘোড়ামারা দ্বীপকে যেন তছনছ করে দিয়ে যায় । ঘোড়ামারা দ্বীপে এখন প্রায় হাজার পরিবারের বাস । এক প্রান্তে রয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকে নির্মীয়মান ফ্লাড সেন্টার ৷ কিন্তু অন্য প্রান্তে প্রশাসনের তরফ থেকে নেই কোন সাইক্লোন সেন্টার । ফলে ঘোড়ামারার অন্যপ্রান্তে মানুষদের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় খোলা আকাশের নীচে কিংবা এলাকার অন্যান্য বাসিন্দার বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয় ।
আরও পড়ুন: ঘোড়ামারা দ্বীপের চরে ডুবল বাংলাদেশি জাহাজ, উদ্ধার 13 কর্মী
ঘোড়ামারা দ্বীপের মানুষজনের এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছে দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন । দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে ঘোড়ামারা দ্বীপে 55 লক্ষ টাকা খরচে বানানো হল একটি বহুমুখী কমিউনিটি সেন্টার । প্রাকৃতিক বিপর্যয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়া ঘোড়ামারা দ্বীপে দুই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এই ভূমিকায় অত্যন্ত খুশি ঘোড়ামারা দ্বীপ এলাকার বাসিন্দারা । তারা জানান, ঘোড়ামারা দ্বীপের এক প্রান্তে প্রশাসনের তরফ থেকে সাইক্লোন সেন্টার রয়েছে ৷ তবে অন্যপ্রান্তে তা না থাকায় যখন কোনওরকম প্রাকৃতিক বিপর্যয় আঘাত হানে সেই সময় এখান থেকে এই সাইক্লোন সেন্টারে আসতে মানুষজনকে অত্যন্ত দুর্ভোগ পোহাতে হয় ।
ঘোড়ামারা দ্বীপের এক বাসিন্দা দেবাশিস পাল বলেন, "বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ঘোড়ামারা দ্বীপ ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছে । বসবাসের অযোগ্য ঘোষণা করে দিয়েছে রাজ্য সরকার । প্রাণভয়ে ঘোড়ামারা দ্বীপ থেকে অনেকেই অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে । বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘোড়ামারা দ্বীপের ওপর আঘাত আনার পর কী করতে হবে ঘোড়ামারা দ্বীপ এলাকার বাসিন্দারা কার্যত বুঝে উঠতে পারে না । কাছাকাছি কোনও বন্যা কবলিতদের জন্য নির্মিত জায়গা বা ফ্লাড সেন্টার না থাকায় বিভিন্নরকম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে খরকুটোর মত ভেসে যেতে হয় ঘোড়ামারা দ্বীপ এলাকার বাসিন্দাদের । দুই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে ঘোড়ামারা দ্বীপ বাসিন্দাদের জন্য যে ফ্লাড সেন্টার করা হয়েছে । তাতে আমার মনে হয় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় ঘোড়ামারা দ্বীপ এলাকার বাসিন্দারা অনেকটাই রক্ষা পাবে ।"
আরও পড়ুন: ঘোড়ামারা দ্বীপের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের জমির পাট্টা দিল রাজ্য সরকার
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এক সদস্য মিনাল ভট্টাচার্য বলেন, "আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে ক্রমশ ঘোড়ামারা দ্বীপ ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে । এছাড়াও বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ঘোড়ামারা দ্বীপ আস্তে আস্তে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে । ঘোড়ামারা দ্বীপের মানুষজনকে এই সমস্যা হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এই দুই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে প্রায় 55 লক্ষ টাকা ব্যয়ে ঘোড়ামারা দ্বীপে একটি তিন তলা নবনির্মিত কমিউনিটি সেন্টারের উদ্বোধন করা হল। এই ফ্লাড সেন্টারটি ঘোড়ামারা দ্বীপ এলাকার বাসিন্দাদের বহু কাজে লাগবে । কোনওপ্রকার প্রাকৃতিক বিপর্যয় এলে এই ফ্লাড সেন্টারে নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারবে দ্বীপ এলাকার বাসিন্দারা । এছাড়াও আমাদের এই সংগঠনের পক্ষ থেকে ঘোড়ামারা দ্বীপের মানুষজনকে স্বনির্ভর গড়ে তুলতে বিভিন্নরকম বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এই ফ্লাড সেন্টারে । এর পাশাপাশি ঘোড়ামারা দ্বীপের বাচ্চাদের বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও কোচিং ক্লাস দেওয়া হবে ।"