গড়িয়া, 3 জানুয়ারি: বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে মা-বাবা ও ছেলের ঝুলন্ত পচাগলা দেহ উদ্ধার । ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ 24 পরগনার রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার অন্তর্গত নরেন্দ্রপুর থানার গড়িয়া স্টেশন এলাকায় । মৃত তিনজন হলেন অপর্ণা মৈত্র (68), তাঁর স্বামী স্বপন মৈত্র (75) এবং তাঁদের ছেলে সুমনরাজ মৈত্র (39)। দরজা ভিতর থেকে আটকানো ছিল । সেকারণেই পুলিশের প্রাথমিকভাবে অনুমান করছে পরিবারের সকলে আত্মঘাতী হয়েছেন । মৃত্যুর আগে সোশাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন সুমনরাজ মৈত্র । পুলিশের হাতে এসেছে ভিডিয়োটি ৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকদিন ধরে এই পরিবারের কাউকে বাইরে বেরতে দেখা যাচ্ছিল না । গতকাল থেকে ওই ফ্ল্যাটের ভিতর দিয়ে পচা গন্ধ বের হচ্ছিল । বারবার ডেকেও কারোর সাড়া মিলছিল না । এরপরেই আজকে খবর দেওয়া হয় পুলিশে । পুলিশ আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে এসে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন ৷ সেসময় ঝুলন্ত অবস্থায় তিনজনের দেহ দেখতে পান তাঁরা ।
প্রতিবেশী স্বর্ণলতা পাত্র বলেন, "ওই পরিবারে অশান্তি ছিল বলে তো কিছু জানতাম না । তবে পাড়ায় সকলের সঙ্গে খুব বেশি মেলামেশা করত না পরিবারটি । নিজেদের মতোই থাকত । কিন্তু কেন এমন কাণ্ড ঘটাল সেটা বলতে পারব না । গতকাল থেকেই ওই ফ্ল্যাটের আশেপাশে দুর্গন্ধ পাচ্ছিলাম আমরা । প্রথমে মনে হয় ইঁদুর মরার গন্ধ ৷ আজ সকালে গন্ধটা আরও তীব্র হয় ৷ সেই কারণেই পুলিশে খবর দেওয়া হয় । পুলিশ এসে দেহগুলি উদ্ধার করে নিয়ে যায় ৷"
পুলিশ জানিয়েছে, ঘরের তিনটি আলাদা জায়গা থেকে মা-বাবা ও ছেলের দেহগুলি উদ্ধার করা হয়েছে । তবে কেন পরিবারের তিনজনেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন, তা স্পষ্ট নয় । ঘরের মধ্যে থেকে কোনও সুইসাইড নোটও মেলেনি । ওই পরিবারের সঙ্গে কারও কোনও বিরোধ বা অশান্তি ছিল কি না খতিয়ে দেখছে পুলিশ । তদন্তকারী আধিকারিকরা মৃতদের ফোনগুলি বাজেয়াপ্ত করেছে ৷ সেগুলির কল লিস্ট ঘেঁটে দেখা হচ্ছে ৷ পাশাপাশি মৃতদের আত্মীয়দের খোঁজ করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে পুলিশ ।
এই বিষয়ে বারুইপুর পুলিশ জেলার ডিএসপি (ডিইবি)মোহিত মোল্লা বলেন, "স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছই এবং ঘরের দরজা ভেঙে তিনজনের দেহ উদ্ধার করি । কী কারণে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, তা ময়নাতদন্তের পর আমাদের কাছে পরিষ্কার হবে ৷ ইতিমধ্যেই প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি ৷ পাশাপাশি মৃতদের নিকটতম আত্মীয়দের খোঁজ চালাচ্ছি আমরা ।"
অন্যদিকে সুমনরাজ মৈত্রকে তাঁর ভিডিয়োতে বলতে শোনা গিয়েছে, কঠিন পদক্ষেপ নিতে চলেছেন তাঁরা ৷ পরিবারের অন্য কেউ এর সঙ্গে যুক্ত নন ৷ পরিবারে কেউ উপার্জন করার না থাকার কারণে এই কঠিন পদক্ষেপ বেছে নেওয়া হচ্ছে । ছোট মামার ওপরে সম্পূর্ণ আশ্রয়ই ছিল ওই পরিবারের । তাঁর মৃত্যুর পর সমস্ত টাকা ও নথি যেন ছোট মামার হাতে তুলে দেওয়া হয়, এমনটাই ভিডিয়োতে আবেদন করেছেন সুমন । এই মর্মান্তিক ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন সুমনের ছোট মামা । সংবাদমাধ্যমের কোনও প্রশ্নের তিনি জবাব দিতে পারেননি । এই ঘটনায় কার্যত বুরারি কাণ্ডের ছায়া দেখছে এলাকাবাসী ।
আরও পড়ুন: