কাকদ্বীপ, 11 অগস্ট : ছটফটে ছেলেটা আজ বড়ই শান্ত হয়ে গিয়েছে। করোনা আবহে স্কুল বন্ধ ৷ কিন্তু ঘরে বসে যে পড়াশোনা করবে, শরীরে সেই শক্তিটুকুও আর নেই ৷ কী দিন, কী রাত, চব্বিশটা ঘণ্টাই কাটে বিছানায় শুয়ে ৷ কিন্তু কী এমন ঘটল ? যার জন্য মাত্র 10 বছরের একটা বাচ্চাকে এভাবে দিন কাটাতে হচ্ছে ? প্রশ্ন শুনেই কেঁদে ফেললেন তার মা ৷ সামনে এল হতদরিদ্র পরিবারের করুণ কাহিনি ৷
আরও পড়ুন : ক্যান্সার আক্রান্ত সঙ্গীতশিল্পীর পরিবারের পাশে রায়গঞ্জ পুলিশ
দক্ষিণ 24 পরগনার কাকদ্বীপের বিশালাক্ষীপুরের বাসিন্দা সাগর রানা ৷ বয়স মাত্র 10 বছর ৷ ছোট থেকেই ছটফটে ৷ অথচ আজ তার সামান্য নড়াচড়া করারও ক্ষমতা নেই ৷ সাগরের মা ছন্দা জানালেন, বছর কয়েক আগের কথা ৷ রোজকার মতোই সেদিনও স্কুলে গিয়েছিল সাগর ৷ তখন সে পড়ত দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৷ হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়ে ছোট্ট ছেলেটা ৷ স্কুলের শিক্ষকরাই তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান ৷ ছেলের অবস্থা শুনে হাসপাতালে পৌঁছন সাগরের মা-বাবা ৷ চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, সাগরের অবস্থা খুব খারাপ ৷ তাকে বাঁচাতে হলে গাঁ-গঞ্জে ফেলে রাখলে চলবে না ৷ উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে হবে শহরের কোনও বড় হাসপাতালে ৷
এরপর কাকদ্বীপ থেকে ডায়মন্ড হারবার হয়ে কলকাতা ৷ একের পর এক হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে সাগরকে ৷ পরীক্ষায় জানা গিয়েছে, সাগরের মস্তিষ্কে বাসা বেঁধেছে টিউমার ৷ তাকে সুস্থ রাখতে ইতিমধ্যেই কয়েকটা অস্ত্রোপচার করা হয়েছে ৷ কিন্তু, তাতেও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি সে ৷ এর আগে ছেলের চিকিৎসার জন্য ঘটি, বাটি বেচে বেঙ্গালুরু গিয়েছিল রানা দম্পতি ৷ সাগরকে সারিয়ে তুলতে গেলে আবারও তাকে নিয়ে সেখানে যেতে হবে তাঁদের ৷ কিন্তু সেই খরচ জোগাবে কে ? উত্তর অজানা ৷
সাগরের বাবা সুব্রত রানা পেশায় কর্মকার ৷ স্থানীয় একটি কামারশালে কাজ করতেন তিনি ৷ লকডাউন সেই কামারশাল বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ সংসার চালাতে তাই রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন তিনি ৷ কিন্তু, করোনা আবহে সেই কাজও খুব একটা বেশি হয় না ৷ যেটুকু রোজগার হয়, তাতে সংসারই চলে না ঠিক মতো ৷ তার উপর ছেলের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করা তাঁর পক্ষে কার্যত অসম্ভব ৷
আরও পড়ুন : Financial help : দুর্ঘটনায় মৃতের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য রাজ্য সরকারের
এই অবস্থায় ছেলের ভবিষ্যৎ ভেবে শিউরে উঠছে হতদরিদ্র এই দম্পতি ৷ ছেলেকে আদৌ বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন কি না, জানা নেই সুব্রত-ছন্দার ৷ তাঁদের আর্তি, কোনও সংগঠন বা প্রশাসন যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়, কিংবা পাশে দাঁড়ান কোনও সহৃদয় ব্যক্তি, তাহলে হয়ত আবারও জীবনে ফিরবে সাগর ৷ বড় হবে আর পাঁচটা বাচ্চার মতোই ৷ তা না হলে যেকোনও দিন যেকোনও চরম পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে তাঁদের ৷