কাশীপুর, 25 অক্টোবর: বয়স কত কেউ জানে না । কবেই বা এর সূত্রপাত হয়েছিল, কার হাত ধরে হয়েছিল, সে সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল নন এলাকার মানুষজন । তবে স্থানীয়দের দাবি, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে কাশীপুরের কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল । তখন থেকেই এখানে একটানা পুজো হয়ে আসছে । ফি বছর সেই মন্দিরের কালীপুজো (Kali Puja 2022) ঘিরেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির (Communal harmony) অনন্য নজির ধরা পড়ে ভাঙড়ের কাশীপুর গ্রামে (Kashipur Kali Puja)। এলাকার কাশীপুর কালী মন্দিরে পুজোর আয়োজন করেন হিন্দু-অহিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ । পুজো উপলক্ষে প্রত্যেকেই মেতে ওঠেন আনন্দে । গভীর রাতে পুজো শেষে খিচুড়ি ভোগ খান আমজনতা । ভোর পর্যন্ত চলে সেই ভোগ বিতরণ (South 24 parganas)।
এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের দাবি, তাঁদের বাবা ঠাকুরদারাও বলতে পারেননি ঠিক কীভাবে, কবে এই কালী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । যদিও কাশীপুর মন্দির কমিটির কর্তা গৌতম কর্মকার বলেছেন, তাঁদের পূর্বপুরুষরা রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে ভাঙড়ের কাশীপুরে এই কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । স্বপ্নাদেশ পেয়ে তাঁদের এক পূর্ব পুরুষ এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন ।
প্রথম দিকে মাটির ঘর আর খড়ের চাল থাকলেও একশো বছর আগে কংক্রিটের নতুন মন্দিরে দেবীর অধিষ্ঠান হয়েছে । কাশীপুর ছাড়াও ভাঙড়ের নাংলা, সাতভাইয়া, পোলেরহাট, নওয়াবাদ, ছেলেগোয়ালিয়া, মঙ্গলপুর-সহ 15-20টি গ্রামের মানুষ এখানে পুজো দিতে আসেন বছরভর । তাঁদের পরিজনেদের জন্য মানত করেন । ভক্তদের দাবি, দেবী কালী এখানে জাগ্রত । নিষ্ঠাভরে কিছু প্রার্থনা করলে ভক্তের আহ্বানে সাড়া দেন তিনি । বারাসত, মধ্যমগ্রাম, দমদম, বারুইপুর, হাওড়া থেকেও ভক্তরা আসেন কাশীপুর কালীবাড়িতে ।
আরও পড়ুন: কালিয়াগঞ্জের কালীপুজোয় গেলেই পৌঁছে যাবেন মৌমাছির দেশে
মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা অরূপ মুখোপাধ্যায় বললেন, "এই মন্দিরে মানত করে জীবনের বেশকিছু মনস্কমনা পূরণ হয়েছে । তাই বারে বারেই মায়ের দর্শনে এখানে ছুটে আসি, রীতি মেনে পুজো দিই ।"
মন্দিরের পুরোহিত বিজকৃষ্ণ ভট্টাচার্য বলেন, "অমাবস্যার রাতে প্রথা মেনে ছাগল বলি হয় । খিচুড়ি ভোগ বিতরণ হয় সারা রাত ধরে । গত বছর এখানে দু হাজার মানুষ পাত পেড়ে খিচুড়ি খেয়েছিলেন । এ বছর লোকসংখ্যা আরও বাড়বে ।"
শুধু হিন্দুরাই নন, পুজোয় আয়োজনে হাত লাগান ভিন্ন ধর্মের মানুষেরাও ৷ এলাকার যুবক মান্নান মোল্লা, ইসমাইল মোল্লা, নূর ইসলাম মোল্লারা বললেন, "পুজোর দিন অনেক রাত পর্যন্ত আমরাও জেগে পুজো উপভোগ করি, প্রসাদ খাই ।" মঙ্গলপুরের গৃহবধূ মধুমিতা মণ্ডল বলেন, "ছোটরা দল বেঁধে এখানে আসে বাজি পোড়ায়, আমরা বড়রা সেটা উপভোগ করি । এত আন্তরিকতা, নিষ্ঠা আর কোথাও দেখা যায় না ।" এলাকার বাসিন্দা শশাঙ্ক চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, "কাশীপুরে প্রতিষ্ঠিত কালীবাড়ি থাকায় এ তল্লাটে আর কোনও বারোয়ারী কালীপুজো হয় না ।"
কালী মন্দির ছাড়াও ওই একই জায়গায় দুর্গা, শিব, শনি ও হরি, রাধাগোবিন্দ মন্দির আছে । এককথায় এটাই ভাঙড়ের মন্দির নগরী । ভাঙড় 2 ব্লকের বিডিও কার্তিকচন্দ্র রায় বলেন, "হিন্দু-মুসলিম সকলের ঐকান্তিক সহযোগিতায় প্রত্যেক বছর নিষ্ঠার সঙ্গে এই কালীপুজো হয়ে আসছে । গোটা ভাঙড়ের কাছে সম্প্রীতির এক অনন্য পীঠস্থান এই মন্দির প্রাঙ্গণ ।"