ডায়মন্ড হারবার, 22 জুন: মরশুম শুরু হতে না হতেই ছোট ইলিশ ধরার অবৈধ কারবার শুরু হয়ে গিয়েছে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় । সোমবার ভোররাত থেকে নামখানা ও কাকদ্বীপ মৎস্যবন্দরে খোকা ইলিশ বোঝাই বহু ট্রলার এসে ভিড়ছে । ছোট ইলিশ ভরতি আরও অনেক ট্রলার বঙ্গোপসাগর থেকে ইলিশ বোঝাই হয়ে দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার বিভিন্ন ঘাটের দিকে পৌঁছচ্ছে বলে সূত্রের খবর । সরকারি নিয়মকে একরকম বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এভাবেই একশ্রেণির লোভী ও অসাধু ট্রলার মালিক ও ব্যবসায়ীর এহেন কাজ করছে ৷ যার জেরে ক্ষুব্ধ মৎস্যজীবীদের একটা বড় অংশ । নিজেদের ব্যবসায় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তাঁরা ।
15 এপ্রিল থেকে 14 জুন পর্যন্ত নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরার ক্ষেত্রে প্রতি বছরের মতো এ বছরেও জারি ছিল সরকারি নিষেধাজ্ঞা । সেই সময়সীমা পেরোতে না পেরোতেই গত 15 জুন কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, রায়দিঘি, ফ্রেজারগঞ্জ ও ডায়মন্ড হারবার মৎস্যবন্দর থেকে গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেয় একের পর এক ট্রলার ও ট্রলি । সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে 90 সেন্টিমিটারের কম ফাঁসযুক্ত জাল ব্যবহার করা ও 500 গ্রামের কম ওজনের ইলিশ ধরা সম্পূর্ণ বেআইনি । কিন্তু তা না মেনেই সোমবার কাকদ্বীপ ও নামখানার মৎস্যবন্দরে সমুদ্রফেরত বহু ট্রলার ও ট্রলিতে 150 থেকে 250 গ্রাম ওজনের 30 টন ইলিশ আসে । সেগুলি রাতেই ডায়মন্ড হারবারের নগেন্দ্রবাজার মাছের আড়তে বিক্রিও হয়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে । এমন ছোট ইলিশ বোঝাই আরও ট্রলার বঙ্গোপসাগর থেকে নামখানা, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার, ফ্রেজারগঞ্জ-সহ বিভিন্ন ঘাটে ফিরতে শুরু করেছে ।
এই বিষয়ে কাকদ্বীপ ফিশারমেন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতির অভিযোগ, কোনওরকম নজরদারি ছাড়াই ইলিশের মরশুমের শুরুতেই যেভাবে এক শ্রেণির অসাধু ট্রলার মালিক ও কারবারী অধিক মুনাফা লাভের আশায় ছোট ইলিশ ধরার ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন তা ক্রমশই দ্রুত রাজ্যের মৎস্য শিল্পের উপর ভয়ংকর আঘাত হানতে চলেছে । তাঁর কথায়, "50টি ট্রলারে সোমবার রাতে বড় ইলিশ এসেছে মাত্র 2 টন । যেখানে 10টি ট্রলার 30 টন ছোট ইলিশ নিয়ে ভিড়েছে । আরও অনেক ট্রলার সমুদ্র থেকে ছোট ইলিশ ধরে বিভিন্ন ঘাটে ভিড়বে । ইতিমধ্যেই যে সমস্ত ইলিশ ভরতি ট্রলার ঘাটে ভিড়েছে, তার মধ্যে খোকা ইলিশ তো রয়েছেই, এমনকী হাতের তালুর আকৃতির ও মোবাইলের আকৃতির ইলিশও অধিক পরিমাণে ধরা হয়েছে বলে খবর ।"
আরও পড়ুন : ষষ্ঠীর বাজারে পদ্মা নয়, মায়ানমার ইলিশেই রসনা তৃপ্তি জামাইদের
তাঁর অভিযোগ, মোহনা থেকে সমুদ্রে নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম না করেই অসাধু ব্যবসায়ীরা ট্রলি নেট ব্যবহার করে শুধু ছোট ইলিশ নয়, সমুদ্র ছেঁচে তুলে নিচ্ছেন বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য ছোট মাছ । প্রজননে বাধা পেয়ে সমুদ্রে স্বাভাবিকভাবেই ক্রমশ কমে যাচ্ছে ইলিশ-সহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের সংখ্যা । বিষয়টি মৎস্যদফতরের নজরে এনেছেন বলে জানান তিনি । তাঁর কথায়, "অবিলম্বে প্রশাসন এই অবৈধ কারবারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অদূর ভবিষ্যতে সমুদ্রে শেষ হবে ইলিশ-সহ অন্যান্য মৎস্যভাণ্ডার ৷"