গঙ্গাসাগর, 17 ডিসেম্বর: অপেক্ষা আর মাত্র কয়েকটা দিন ৷ নতুন বছরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হচ্ছে গঙ্গাসাগর মেলা 2024। গঙ্গাসাগর মেলাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক তৎপরতা তুঙ্গে। এবছর রেকর্ড সংখ্যক পুণ্যার্থীর ভিড় হতে চলেছে গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গণে, এমনটাই অনুমান করছে জেলা প্রশাসনিক আধিকারিকরা। কেবল এ রাজ্য নয়, ভিনরাজ্য এমনকী ভিনদেশি বহু পুণ্যার্থীর ভিড় জমে গঙ্গাসাগরে। মকর সংক্রান্তির কয়েকটা দিনে গঙ্গাসাগর যেন হয়ে ওঠে যেন 'মিনি ভারতবর্ষ'। লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে প্রিয়জনের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার বিষয়টি অস্বাভাবিক কিছু নয়। গঙ্গাসাগর মেলায় স্বজনহারাদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব পালন করে ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব (হ্যাম রেডিয়ো) নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
গত 30 বছর ধরে স্বজনহারাদের পরিবারের হাতে তুলে দিয়ে আসার কাজটি করে আসছে হ্যাম রেডিয়ো। 2024 গঙ্গাসাগর মেলার কথা মাথায় রেখে আরো দ্রুততার সাথে স্বজনহারাদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করল হ্যাম রেডিয়ো। 'মাই হ্যাভ ডট ইন' ওয়েবসাইটে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া মানুষদের ছবি আপলোড করবে হ্যাম রেডিয়ো ৷ খুব সহজেই হারিয়ে যাওয়া পুণ্যার্থীর পরিবার এই ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে প্রিয়জনকে খুঁজে পাবে। এ বিষয় ওয়েস্ট বেঙ্গল হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরিশ নাগ বিশ্বাস জানান, প্রতিবছর গঙ্গাসাগর মেলায় লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষের সমাগম হয় আর এই লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষের ভিড়েই হারিয়ে যায় তাদের প্রিয়জন। মূলত হারিয়ে যাওয়া মানুষদের উদ্ধার করে তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেয়। এক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যা সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। মূলত ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন পুণ্যলাভের আশায় এই গঙ্গাসাগর মেলায় আসে। তাদের ভাষাও আলাদা। অনেকে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় হারিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে তাদেরকে উদ্ধার করে তাদের থেকে সঠিক পরিচয় জানতে পারা যায় না। এর ফলে হারিয়ে যাওয়া মানুষদের পরিবারের খোঁজ পেতে অনেকটাই বেগ পেতে হয় আমাদেরকে।
সবমিলিয়ে 30 বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নয়া ওয়েবসাইট চালু করা হল বলে জানান ওয়েস্ট বেঙ্গল হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক। কীভাবে কাজ করবে এই ওয়েবসাইট ৷ ওয়েব ডেভেলপার সৌমিক ঘোষ জানাচ্ছেন, যে সকল মানুষজন গঙ্গাসাগর মেলায় এসে হারিয়ে যাবে সেই সকল মানুষজনের সচিত্র পরিচয় এই ওয়েবসাইটে পোস্ট করা হবে। এর ফলে আধুনিক যুগে স্মার্টফোনের দৌলতে হারিয়ে যাওয়া মানুষজনের পরিবারের সদস্যরা অতি দ্রুততার সাথে তাদের পরিজনকে খুঁজে পাবে।
তিনি আরও জানান, গঙ্গাসাগর মেলায় এসে যে সকল মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে কিংবা হারিয়ে যাবে সেই সকল পুণ্যার্থীদের ছবি এই ওই পোর্টালের পোস্ট করা হবে। এছাড়াও মূলত যেসকল পুণ্যার্থী এই গঙ্গাসাগর মেলায় এসে হারিয়ে যান অথচ যারা কথা বলতে পারেন না, তাদেরও ছবি এই ওয়েব পোর্টালে দেওয়া হবে। সবমিলিয়ে গঙ্গাসাগর মেলার কথা মাথায় রেখে প্রশাসনিক তৎপরতা যেমন নজরে পড়ছে, তেমনই হারিয়ে যাওয়া পুণ্যার্থীদের বাড়ি ফেরানোর জন্য ঐকান্তিক প্রচেষ্টা করে চলেছে হ্যাম রেডিয়ো। এখন দেখার বিষয়, মেলার সময় কতটা কার্যকরী হয় হ্যাম রেডিয়োর এই আধুনিক প্রযুক্তি।
আরও পড়ুন: