গঙ্গাসাগর, 24 ডিসেম্বর: হাতে আর মাত্র 2 সপ্তাহ ৷ তারপরেই শুরু হতে চলেছে 2023 সালের গঙ্গাসাগর মেলা (Gangasagar Mela 2023)। আর এই মেলাকে ঘিরে ইতিমধ্যে প্রশাসনিক তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ এবছর গঙ্গাসাগরে পুণ্যার্থীদের রেকর্ড সমাগম হতে পারে বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন ৷ কুম্ভ মেলা না থাকার কারণে, গঙ্গাসাগরে পুণ্যার্থীদের ভিড় আছড়ে পড়বে ৷ আর সেখানেই এবার গঙ্গাসাগর মেলায় তুলে ধরা হবে রাজ্যের বিশিষ্ট পাঁচটি মন্দির ৷ প্রতি বছর গঙ্গাসাগর মেলায় অন্য রাজ্য তথা দেশ-বিদেশ থেকে বহু পুর্ণ্যার্থীরা আসেন ৷
অনেক পুণ্যার্থীরা গঙ্গাসাগর মেলায় এলেও তাঁরা রাজ্যের পাঁচটি ঐতিহ্যবাহী মন্দির তারাপীঠ, কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বর, তারকেশ্বর ও জহুরা কালীবাড়ি দর্শনের সুযোগ পান না ৷ এবার পুণ্যার্থীদের কথা মাথায় রেখে গঙ্গাসাগর মেলার প্রাঙ্গণে অস্থায়ী কাঠামোর মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে রাজ্যের ওই পাঁচ ঐতিহ্যবাহী মন্দির (Temporary Structures of 5 Temples of State will be Displayed) ৷ সেখানে জায়েন্ট স্ক্রিন বসিয়ে সরাসরি ওই মন্দিরগুলির পুজো দেখানো হবে ৷ চাইলে পুণ্যার্থীরা সেখান থেকেই পুজো দিতে পারবেন ৷
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই ব্যবস্থাপনার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলার মন্দির’। শুক্রবার গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে এক সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা জানান দক্ষিণ 24 পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা ৷ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি শামিমা শেখ ৷ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে 12-14 জানুয়ারি পর্যন্ত তিনদিন সাগরতটে সন্ধ্যা আরতির ব্যবস্থা করা হবে ৷ গত বছর একদিন সন্ধ্যা আরতির ব্যবস্থা ছিল ৷ প্রতিদিন সন্ধ্যা আরতির নির্দিষ্ট সময় জানিয়ে দেওয়া হবে ৷ এ ছাড়াও, এবার পুণ্যার্থীদের কাছে গঙ্গাসাগর মেলা স্মরণীয় করে রাখতে ‘বন্ধন’ নামে শংসাপত্রের ব্যবস্থা করা হচ্ছে ৷ সাগর মেলা প্রাঙ্গণে ফটো-কিয়স্ক তৈরি করা হচ্ছে ৷ সেই কিয়স্কে গিয়ে ছবি তুললেই তৎক্ষণাৎ মিলবে পুণ্যার্থীর নিজস্ব ছবি দেওয়া শংসাপত্র ৷ বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজিতে ছাপানো এই শংসাপত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সাগরমেলা ভ্রমণের জন্য ধন্যবাদ জানানো হবে ৷
গঙ্গাসাগর থেকে বাবুঘাট পর্যন্ত নজরদারি থাকবে প্রশাসনের ৷ এর জন্য প্রায় 2100টি সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে ৷ গত বছর গঙ্গাসাগর মেলায় প্রায় 20 লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছিল ৷ এবার পুণ্যার্থীর সংখ্যা 30 লক্ষ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রশাসনের ৷ প্রশাসন সূত্রের খবর, আগামী তিন-চারদিনের মধ্যে মুড়িগঙ্গা নদীতে ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে ৷ তবে, যেখানে যেখানে সমস্যা থাকবে সেখানে ড্রেজিংয়ের কাজ চলতে থাকবে ৷ 20 ঘণ্টা যাতে ভেসেল চালানো যায়, সেই ব্যবস্থা করা হবে ৷ তিনটি পর্যায়ে 30টি ভেসেল চলবে ৷
পুণ্যার্থীদের জন্য থাকছে 500 বেসরকারি বাস ৷ তবে যাত্রী ভাড়া বাড়ানো হবে না ৷ স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে এবার 21টি জেটি তৈরি করা হয়েছে ৷ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের পাশাপাশি 142টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিষেবা দেবে ৷ গঙ্গাসাগর মেলাকে পরিবেশবান্ধব করা হচ্ছে ৷ প্লাস্টিকমুক্ত জোন তৈরি করা হচ্ছে ৷ মেগা কন্ট্রোলরুম থাকছে ৷ ভেসেল, লঞ্চের সঙ্গে রাখা ডিভাইসের মাধ্যমে জানা যাবে, কোথাযও ভেসেল আটকে গিয়েছে কিনা ৷ তেমন ঘটলে তৎক্ষণাৎ উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হবে ৷
আরও পড়ুন: এবছর গঙ্গাসাগর মেলায় হবে সাগর আরতি, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী
হেলিকপ্টার পরিষেবার জন্য ইতিমধ্যে তিনটি হেলিপ্যাড তৈরি হয়ে গিয়েছে ৷ গত বছরের মতো এ বছরও ই-স্নানের ব্যবস্থা থাকছে ৷ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গঙ্গাসাগর মেলাকে তুলে ধরা হবে ৷ মেলার মাঠের বর্জ্য দ্রুত সাফ করার জন্য 10 হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর ৷ জঞ্জাল বহনের জন্য 30টি ‘ই-কার্ট’ থাকবে ৷
দক্ষিণ 24 পরগনার জেলা পরিষদের সভাধিপতি শামিমা শেখ বলেন, ‘‘আগের থেকে এই সরকারের আমলে গঙ্গাসাগর মেলার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে । এই মেলাকে কুম্ভ মেলার সমতুল্য করার চেষ্টা হচ্ছে ৷ আমরা চাই, গঙ্গাসাগর মেলাকে জাতীয় মেলার মর্যাদা দেওয়া হোক ৷ আগে পুণ্যার্থীদের গঙ্গাসাগর মেলায় এলে কর দিতে হত ৷ আমাদের মুখ্যমন্ত্রী সেই কর তুলে দিয়েছেন ৷ পুণ্যার্থীদের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে তাঁদের পরিবার 2 লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য পেত ৷ আমাদের সরকার 5 লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য করছে ৷’’
দক্ষিণ 24 পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা জানান, ‘‘গঙ্গাসাগর মেলাকে আরও উন্নত করতে আমরা সব রকম ভাবে প্রস্তুত ৷ পরিবেশবান্ধব মেলা করা হবে ৷ পুণ্যার্থীদের জন্য এবার আমরা বাংলার পাঁচটি ঐতিহ্যবাহী মন্দিরকে মেলা প্রাঙ্গণে তুলে ধরব ৷ গঙ্গাসাগর মেলাকে পুণ্যার্থীদের কাছে স্মরণীয় করে রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে ৷’’ সব তীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর একবার ৷ এখন এই প্রবাদ যেন অতীত হয়ে গিয়েছে ৷ সব তীর্থ একবার গঙ্গাসাগর বারবার ৷ আর 3 সপ্তাহ পর প্রার্থনা আর ভক্তির মেলবন্ধন ঘটবে গঙ্গাসাগরে ৷