ভাঙড়, 9 অগস্ট : গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে দক্ষিণ 24 পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা ৷ চাষের জমিতে জল জমে যাওয়ায় ধান ও সবজি চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ৷ দক্ষিণ 24 পরগনার শস্য ভাণ্ডারের অন্যতম উত্স ভাঙড় ৷ ভাঙড়ের শানপুকুর, ভোগালি, পোলের হাট, ভগবানপুর, চন্দনেশ্বর, শাঁকশহর, তাড়দহ, মৌসল-সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর সবজি ও ফুলের চাষ হয় ৷ টানা বৃষ্টির জেরে ধান চাষের পাশাপাশি পটল, ঝিঙে, উচ্ছে, বেগুন-সহ বিভিন্ন ধরনের গ্রীষ্মকালীন ফসল মাঠেই পচে যাচ্ছে ৷ গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির জেরে চাষের জমিগুলি কার্যত জলাশয়ে পরিণত হয়েছে ৷ ডুবে গিয়েছে ক্ষেতের ফসল ৷ এর ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে কৃষকদের ৷ প্রসঙ্গত, ভাঙড়ে উত্পাদিত সবজি ও ফুল কলকাতা-সহ লাগোয়া শহরতলির বাজারগুলিতে বিক্রির জন্য পাঠানো হয় ৷ এছাড়া, দুর্গাপুর, রায়গঞ্জ, শিলিগুড়িতেও পণ্য রফতানি করেন কৃষকরা ৷ এমনকী, ভাঙড়ের ফুল, সবজি ও ফল গাছের চারা দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াতেও পাঠানো হয় ৷ টানা বৃষ্টির জেরে সেইসব চারাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷
আরও পড়ুন : বৃষ্টি কমলেও নামেনি জল, বাসন্তীর বিস্তীর্ণ এলাকায় হাঁটু জল
ভাঙড়ের চিলেতলা, ভুমরু, বানিয়াড়া, পাঁচগাছিয়া, পোলের হাট, কালিকাপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর ফুল চাষ হয় ৷ পুজোর আগে এইসব এলাকার বহু চাষি গাঁদা, রজনীগন্ধা, গোলাপ চাষ করেছিলেন ৷ কিন্তু গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ফুল চাষেরও দফারফা হয়ে গিয়েছে ৷ ভাঙড়-2 ব্লকের প্রায় 2 হাজার হেক্টর জমিতে পটল, ঝিঙে, উচ্ছে, বেগুন, লাউ, কুমড়ো-সহ বিভিন্ন আনাজ চাষ করা হয় ৷ ব্লকের প্রায় 5 হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়। বৃষ্টিতে 10 শতাংশেরও বেশি জমির আনাজ ও ধান জলের তলায় চলে গিয়েছে ৷ অন্যদিকে, ভাঙড়-1 ব্লকের 590 হেক্টর জমির মধ্যে 200 হেক্টর জমির আমন ধানের বীজতলা জলের তলায় চলে গিয়েছে ৷ প্রায় 2 হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের ফলন জলমগ্ন হয়ে গিয়েছে ৷ প্রায় 300 হেক্টর জমির আনাজ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ৷
ভুমরু গ্রামের এক কৃষক বলেন, ‘‘আমি এক বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছিলাম ৷ সব মিলিয়ে 25-30 হাজার টাকা খরচ হয়েছে ৷ ইতিমধ্যে বাজারে বেগুন উঠতে শুরু করেছে ৷ কিন্তু টানা বৃষ্টিতে জমিতে জল জমে গিয়েছে ৷ জল না নামলে গাছ পচে যাবে ৷ ফসলের ক্ষতি হবে ৷ যা পরিস্থিতি, তাতে চাষের খরচের টাকাটুকুও উঠবে কিনা বুঝতে পারছি না ৷’’ পানাপুকুর গ্রামের এক চাষি বলেন, ‘‘30 তিরিশ হাজার টাকা খরচ করে 10 কাঠা জমিতে পটল চাষ করেছিলাম ৷ টানা বৃষ্টিতে মাঠে জল জমে গিয়েছে ৷ গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। ফসল পচতে শুরু করেছে ৷’’
আরও পড়ুন : WATER LOGGED AMTA: তিনদিনের বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কায় আমতার সবজি চাষিরা
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, যদি আর বৃষ্টি না হয় এবং জমি থেকে জল দ্রুত নেমে যায়, তা হলে ক্ষতির আশঙ্কা কিছুটা কম ৷ কিন্তু আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, এখনও দক্ষিণবঙ্গের উপর থেকে নিম্নচাপ সরেনি ৷ আগামী বুধবার থেকে দক্ষিণবঙ্গ-সহ গোটা রাজ্যেই বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে ৷ আর তাতেই প্রমাদ গুণছেন ভাঙড়ের কৃষকরা ৷ তাঁদের সাফ কথা, আবহাওয়ার এই প্রকোপ চলতে থাকলে পথে বসতে হবে তাঁদের ৷ সেক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতা না পেলে আর্থিক ক্ষতি সামাল দেওয়া যাবে না ৷