কুলপি, 15 মে: উলট পুরাণ! জীবিত ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে বার্ধক্য ভাতা । গত দু'বছর ধরে ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন বৃদ্ধ দম্পতি । টাকার অভাবে বন্ধ চিকিৎসাও । দক্ষিণ 24 পরগনার কুলপি ব্লকের ঢোলাহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের তেলে গ্রামের ঘটনা । বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই একে অন্যকে দোষ দিয়েছেন পঞ্চায়েত সদস্য থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা ।
যদিও গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য বিজেপির চিত্তরঞ্জন হালদার ভাতা বন্ধের ঘটনায় ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন । তিনি পঞ্চায়েত কর্মীর উপর দায় চাপিয়েছেন । ঢোলা পঞ্চায়েতের প্রধান রুবিয়া বিবি কয়ালের স্বামী তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা হোসেন কয়াল ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পঞ্চায়েত সদস্য ও কর্মীদের উপর দায় চাপিয়েছেন ।
যদিও বৃদ্ধের অভিযোগ, তিনি বামপন্থী হওয়ায় তাঁর ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । এই বিষয়ে কুলপির বিডিও সৌরভ গুপ্ত জানান, পঞ্চায়েত থেকে ওই নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল । পুনরায় ভাতা চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে । পঞ্চায়েতের কাছে নথি পাঠানো আছে ৷
খড়ের ছাউনি আর ছিটে বেড়ার মাটির দেওয়ালের এক চিলতে ঘরে বাস করেন 79 বছরের বৃদ্ধ বিজয় হাতি । স্ত্রী কাননবালা ও অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে টানাটানির সংসার তাঁর । দীর্ঘ দশ বছর ধরে বার্ধক্যভাতা পেতেন । কিন্তু গত দু'বছর আগে হঠাৎ তাঁর ভাতা বন্ধ হয়ে যায় । এরপর পঞ্চায়েত ও বিডিও অফিসে খোঁজখবর শুরু করে জানতে পারেন, সরকারি নথিতে তাঁকে মৃত দেখানো হয়েছে । যার ফলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ভাতা । পুনরায় ভাতা চালুর আবেদন নিয়ে পঞ্চায়েত, বিডিও, জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন বিজয়বাবু । কিন্তু কোনওমতে ভাতা পুনরায় চালু হয়নি ।
ভাতার টাকাতেই চলত তাঁদের চিকিৎসা । তবে তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসাও করাতে পারছেন না তাঁরা । যত দিন যাচ্ছে চিকিৎসার অভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তাঁরা । এই বিষয়ে বিজয় হাতি বলেন, "দু'বছর আগে প্রথম ভাতা বন্ধ হতেই আমি খোঁজ নিতে পঞ্চায়েত ও বিডিও অফিসে গিয়েছিলাম । সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখার পর তৎকালীন বিডিও জানিয়েছিলেন, আমাকে বার্ধক্যভাতার নথিতে মৃত দেখিয়ে নাম কেটে দেওয়া হয়েছে । কীভাবে এটা হলো, তা খতিয়ে দেখে বিডিও সাহেব যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন । কিন্তু তাতেও কিছু কাজের কাজ হয়নি ৷ যেহেতু আমি অন্য দল করি, তাই হয়তো আর কোনও কাজ হয়নি । ভাতা চালুর জন্য জেলাশাসকের কাছেও আবেদন জানিয়েছিলাম । কিন্তু কোনও কাজ হয়নি ।" এদিকে পরিবারের অভাবের কথা তুলে ধরে দ্রুত স্বামীর বার্ধক্য ভাতা চালুর দাবি জানান স্ত্রী কাননবালাও ।
আরও পড়ুন : স্বামী জীবিত তবু বিধবা ভাতা পাচ্ছেন স্ত্রী ! আজব কাণ্ড মেদিনীপুরে