রায়দিঘি ও ভাঙড়, 12 জুলাই: গণনা ঘিরে রক্তাক্ত হল দক্ষিণ 24 পরগনার রায়দিঘি, ভাঙড় ৷ খুন একাধিক দলীয় কর্মী ও এক স্থানীয় । রায়দিঘিতে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষে তৃণমূল নেতাকে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল বিজেপির বিরুদ্ধে ৷ অন্যদিকে মঙ্গলবার গভীর রাতে ভাঙড়ে আইএসএফ-তৃণমূলের মধ্যে বোমাবাজি, গুলি চলে । মৃত্যু হয়েছে দুই আইএসএফ কর্মীর । অভিযোগের তির তৃণমূলে বিধায়ক শওকত মোল্লা ও প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রায়দিঘি বিধানসভার কাশিনগর গ্রামপঞ্চায়েতের চাঁদপাশা গ্রামে মৃত্যু হয়েছে তৃণমূল কর্মী বিপ্লব হালদারের (35) ৷ বুধবার সকালে বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা দূরে পড়ে ওই ব্যক্তির রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় ৷ এই ঘটনায় বিজেপির দিকে আঙুল তুলছে তৃণমূল ৷ অভিযোগ, স্থানীয় বুথে বিজেপি প্রার্থী জয়ী হন ৷ এরপর থেকেই শাসক ও গেরুয়া শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ চরম আকার নেয় ৷ বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বিপ্লব হালদারকে কুপিয়ে খুন করেছে ৷ কারণ, এই বুথে তৃণমূলের সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন তিনিই ৷ তাই তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি ৷ যদিও খুনের ঘটনা অস্বীকার করেছে গেরুয়া শিবির ৷ পুলিশ ইতিমধ্যে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে ৷
মঙ্গলবার রাত বাড়তেই নতুন করে উত্তপ্ত হয় ভাঙড়ের কাঠালিয়া, শানপুকুরের চণ্ডীহাট গ্রাম ও চালতাবেড়িয়া ৷ কাঁঠালিয়ায় পঞ্চায়েত ভোটগণনা কেন্দ্রের বাইরে পড়তে থাকে একাধিক বোমা ৷ রাতে এলাকাজুড়ে শুধু বোমা গুলির শব্দ শোনা যায় ৷ গুলির আঘাতে জখম হয়েছেন বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাকসুদ হাসান এবং তাঁর দেহরক্ষীও ৷ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে আইএসএফের বিরুদ্ধে ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটাতে হয় ৷ জানা গিয়েছে, তৃণমূল-আইএসএফ হিংসার ঘটনায় এক তৃণমূল সমর্থক গুরুতর আহত হয়েছেন ৷ চণ্ডীহাট গ্রামের বেশ কয়েকজন তৃণমূল সমর্থকের বাড়িতেও ভাঙচুর হয়েছে বলে অভিযোগ ৷ অন্যদিকে, রাতের অন্ধকারে কংগ্রেসের জয়ী প্রার্থীর বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ৷
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েতের ফল স্পষ্ট, ঘাসফুল শিবিরে স্বস্তিতেও উজ্জীবিত বিরোধীরা
এদিকে ভাঙড়ে রাজনৈতিক হিংসার ঘটনায় মৃত দুই আইএসএফ কর্মীর একজনের স্ত্রী গর্ভবতী বলে জানা গিয়েছে । মৃতের নাম হাসান আলি মোল্লা (26) ৷ তিনি গুরুতর জখম অবস্থায় আরজিকর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৷ বুধবার সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর আসে ৷ মৃতের শ্বশুরের অভিযোগ, "আইএসএফ জিতেছিল বলে ওরা আনন্দ করছিল ৷ সেই সময় রাতে খবর আসে হাসানের গুলি লেগেছে ৷ তৃণমূলের লোকজন ওকে গুলি করেছে ৷"
রাজনৈতিক দলের হিংসার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন এক স্থানীয় ব্যক্তিও ৷ মৃতের নাম রাজু মোল্লা (27) ৷ মঙ্গলবার রাতে তিনি ঘটকপুকুরে তাঁর দিদির বাড়ি যাচ্ছিলেন ৷ সেই সময় কাঁঠালিয়া হাইস্কুলের গণনাকেন্দ্রে বোমা-গুলি লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে যান তিনি ৷ পিঠে গুলি লাগে রাজু মোল্লার ৷ তাঁকে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন ৷
মৃতের গর্ভবতী স্ত্রী বলেন, "আরাবুল-শওকতের লোকজন ব়্যাফের পোশাক পরে এসে ওকে গুলি করেছে ৷ তিনজন এসেছিল ৷ আরাবুলের ছেলেও এসেছিল ৷ আমি ওদের শাস্তি চাই ৷ আমার তিনটে বাচ্চাকে অনাথ করে দিল ৷" হাসানের ভাইয়েরও অভিযোগ, আরাবুল-শওকতের নেতৃত্বে দলবল ব়্যাফের পোশাক পরে গুলি করেছে ৷ মৃত আরেক আইএসএফ কর্মীর নাম রেজাবুল গাজি (24) ৷ মৃতের বাড়ি দক্ষিণ 24 পরগনার ভোগালি 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের 191 নম্বর বুথ এলাকায় ৷
বুধবার সকাল থেকে এলাকা থমথমে ৷ ভাঙড়ে জারি হয়েছে 144 ধারা ৷ মোতায়েন রয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী ৷ পড়ে রয়েছে ভাঙচুর অবস্থায় থাকা পুলিশের গাড়ি। স্থানীয়দের অভিযোগ তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লা এবং প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৷ এলাকাবাসীর বক্তব্য, "আর নেওয়া যাচ্ছে না ৷ আমরা শান্তি চাইছি ৷" রাতে পুলিশ চলে যাওয়ার পর আরাবুল আর শওকতের দলবলই হামলা চালিয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা ৷
আরও পড়ুন: গণনার রাতে অগ্নিগর্ভ ভাঙড়, গুলিবিদ্ধ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার