জয়নগর, 29 অগস্ট: দুর্গাপুজোয় প্রতিমা ও মণ্ডপের পাশাপাশি নজর কাড়ে ঠাকুরের সাজ ৷ শোলার গয়না থেকে মণ্ডপে মণ্ডপে ডাকের সাজে সেজে ওঠেন মা দুর্গাও তাঁর ছেলেমেয়েরা ৷ হাতেগোনা আর কয়েকটা দিন বাকি ৷ তাই এখন চরম ব্যস্ততা প্রতিমার অলংকার তৈরির সঙ্গে যুক্ত শিল্পীদের ৷ নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই তাঁদের ৷ দক্ষিণ 24 পরগনা জয়নগর থানা এলাকা দাস পাড়ার শিল্পীরা বংশপরম্পরায় করে চলেছেন এই গয়না তৈরির কাজ ৷ তাঁদের হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হয় রকমারি গয়নার সেট ও ডাকের সাজ ।
শিল্পী উত্তম দাস বলেন, "আমি 15 বছর ধরে এই কাজ করছি ৷ ঠাকুরের সব অলংকার তৈরি করি আমরা ৷ তবে পুজোর দু'তিনমাসই এই কাজ হয় ৷ এটার উপরই সারা বছর আমাদের সংসার চলে ৷ সরকার যদি আমাদের সাহায্য করে তাহলে ভালো হয় ৷"
প্রতিমার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে এই শোলার সাজ। জয়নগরে প্রতিমার সাজ তৈরির কাজে যুক্ত থাকে এলাকার অনেক পরিবারই ৷ বাপ ঠাকুরদার হাত ধরে শোলার গহনা ও ডাকের সাজে হাত পাকিয়েছেন দাস পাড়ার এইসব শিল্পীরা । বংশপরম্পরায় ধরে এই শিল্পই তাঁদের প্রধান জীবিকা ৷ এই কয়েক মাস ধরে প্রতিমার অলংকার তৈরি করেন তাঁরা ৷ আর তার থেকে যা রোজগার হয় তাতে বছরভোর চলে সংসার ।
শিল্পীদের বাড়ির সবাই কাজে হাত লাগালে একটি প্রতিমার সাজ তৈরি করতে সময় লাগে সপ্তাহখানেকের মতো । বিভিন্ন উচ্চতার প্রতিমার জন্য সেট তৈরি হয় ৷ তাতে খরচ হয় আনুমানিক 3 হাজার থেকে 10 হাজার টাকা । বিভিন্ন সাজের মধ্যে এখানে তৈরি হয় প্রতিমার মুকুট, আঁচলা, চালি, বুক চেলি, ঘাড় বেণী, কলকা ও কান মোগর প্রভৃতি। গয়নার সেট তৈরি হওয়ার পরে সেগুলি চলে যায় কলকাতার বড় বাজার থেকে কুমোরটুলিতে ৷
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীলাভের আশায় রং-কাদামাটি ছেড়ে ভিন রাজ্যে কারিগররা, সমস্যায় পটুয়াপাড়া
শিল্পী ছোট্টু মণ্ডল বলেন, "পড়াশোনার পাশাপাশি এই কাজ করি ৷ এই তিন মাস খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে যায় ৷ এত কাজের চাপ থাকে ৷ মুকুট, কলকা থেকে চুড়ি সব তৈরি করি আমরা ৷ আমাদের এইসব জিনিস বড়বাজারে বিক্রি হতে চলে যায় ৷" গয়না শিল্পীদের দাবি, সরকার বড় বড় শিল্পের পাশাপাশি এই ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উপর বিশেষভাবে নজর দিক ৷ তা না-হলে আগামী প্রজন্ম এই শিল্পকে আর পেশা করবে না । বরং তারা এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে ৷