ভাঙড়, 5 মার্চ: দলের কর্মীদের চাঙ্গা করতে গিয়ে একের পর এক বেফাঁস মন্তব্য করে বসলেন ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম ! যা নিয়ে শুরু হয়েছে নয়া বিতর্ক (Controversy over Arabul Islam Speech) ৷ কখনও দলের 'লড়াকু' কর্মীদের প্রশংসায় তাঁর মুখ ফসকে বেরোল, 'যাঁরা সন্ত্রাস করেন' ! আবারও কখনও সরকারি প্রকল্পের উপভোক্তাদের দিলেন হুঁশিয়ারি ! এমনকী, তাঁর মুখে শোনা গেল লিঙ্গবৈষম্যমূলক মন্তব্যও !
প্রায় দেড়মাস কারাবাসে থাকার পর শনিবার জামিনে মুক্তি পান আইএসএফ নেতা তথা ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী ৷ যদিও তাঁর জামিন আদালত আগেই মঞ্জুর করেছিল ৷ কিন্তু, তা কার্যকর করতে আরও কিছুটা সময় লেগে যায় ৷ এই ঘটনায় উচ্ছ্বসিত আইএসএফ কর্মীরা দিকে দিকে আনন্দে মেতে ওঠেন ৷ নওশাদের মুক্তিকে বাম, বিজেপি, কংগ্রেসের মতো বিরোধীরাও স্বাগত জানিয়েছে ৷ কিন্তু, এই ঘটনায় বেজায় চটেছেন আরাবুল ৷ শনিবার ভাঙড়ের বিজয় বাজারে আয়োজিত একটি দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দেন তিনি ৷ সেখান থেকেই একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করতে শোনা যায় আরাবুলকে ৷
নওশাদের মুক্তিতে আইএসএফের 'উৎসব পালন'কে কটাক্ষ করেন আরাবুল ৷ তাঁর কথায়, "(নওশাদ) জামিন পাওয়ার পর ভাঙড়ে এমন উৎসব চলছে, এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যেন মনে হচ্ছে সে (নওশাদ) ভারতবর্ষের নতুন প্রধানমন্ত্রী !" এরপরই দলীয় নেতাকর্মীদের সংগঠন আরও মজবুত করার বার্তা দেন আরাবুল ৷ বলেন, "একুশের ভোটে কোনও কারণে আমরা ভাঙড়ে হেরেছি ৷ ওরা (আইএসএফ) ভাঙড়ে এলাকা দখল করতে চাইছে ৷ আপনারা শান্তভাবে বসুন ৷ প্রতিটি বুথে বসুন ৷ মিটিং করুন ৷ কর্মীদের ডাকুন ৷ যারা লড়াই করে, নেতৃত্ব দেয় বুথে বুথে, 'সন্ত্রাস করে'!..."
সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, এখানে 'সন্ত্রাস' শব্দটি হয়তো মুখ ফসকেই বলে ফেলেছেন আরাবুল ! কিন্তু, বিরোধীরা তো সেই কবে থেকেই ভাঙড়ে 'তৃণমূলের সন্ত্রাস' নিয়ে সরব ৷ তাহলে কি জ্বালাময়ী ভাষণ দেওয়ার আবেগে সেই অভিযোগই স্বীকার করে ফেললেন আরাবুল ?
এখানেই শেষ নয় ৷ শনিবারের কর্মসূচিতে মানুষের ভোটদানের সাংবিধানিক অধিকারেও কার্যত হস্তক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেন আরাবুল ৷ তিনি বলেন, "লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা নেব, আর নওশাদকে ভোট দেব ! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাব, আর নওশাদকে ভোট দেব ! সেটা আমরা হতে দেব না !" ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন হল, মানুষ কাকে ভোট দেবে, সেটা তো মানুষই ঠিক করবে ৷ তাহলে আরাবুল কোন এক্তিয়ারে এমন কথা বলছেন ? তাছাড়া, আমজনতাকে পরিষেবা প্রদান, জনকল্যাণমুখী প্রকল্প রূপায়ন তো সরকারের একান্ত পালনীয় কর্তব্য ৷ আমজনতা সেসবের সুবিধা ভোগ করবেন, সেটিই স্বাভাবিক ৷ কিন্তু, তারপরও যদি বিরোধী কোনও রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ভোটে জেতেন, তার জন্য কি এই সাধরণ উপভোক্তা তথা ভোটারদের এভাবে হুমকি দেওয়া যায় ? আর 'মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের খাব' কথারই বা অর্থ কী ? মমতা রাজ্য়ের মুখ্যমন্ত্রী ৷ সেই পদে থেকে তিনি যদি রাজ্যবাসীর জন্য কোনও জনকল্য়াণমুখী প্রকল্প চালু করেন, তাহলে কি সেই পরিষেবাকে 'মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের খাব' বলে ব্যাখ্য়া করা যায় ?
আরও পড়ুন: বাড়ি ফিরলেন নওশাদ, ফুরফুরায় মিষ্টি বিতরণ
আরাবুল আরও বলেছেন ৷ বলেছেন, "তৃমমূল কংগ্রেস হাতে চুড়ি পরে বসে নেই !" সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, চুড়ি সাধারণত মহিলারা পরেন ৷ কিন্তু, তার অর্থ এই নয় যে মহিলারা অক্ষম ৷ রাজ্য়ের মুখ্যমন্ত্রী নিজেও একজন মহিলা ৷ সেখানে তাঁর দলেরই একজন নেতা এভাবে লিঙ্গবৈষম্যমূলক মন্তব্য করেন কীভাবে ? শনিবারের এই কর্মসূচিতে আরাবুল ছাড়াও তৃণমূলের আরও অনেক স্থানীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন ৷ তাঁদের সকলের সামনেই এভাবে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করেন আরাবুল ৷ যার জেরে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে তাঁকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে ৷