ETV Bharat / state

Durga Puja 2023: 278 বছরের পুরনো দেব সরকার বাড়ির পুজো, সপ্তমী-দশমী হয় 131 কিলোগ্রাম চালের নৈবেদ্য - দেব সরকার

ফলতার দেব সরকার বাড়ির পুজোয় হয় সপ্তমী থেকে দশমী পর্য়ন্ত 131 কিলোগ্রাম চালের নৈবেদ্য ৷ চারপুরুষ ধরে প্রতিমা তৈরি করে আসছেন চিত্রকর পরিবার ৷

Durga Puja
ফলতার দেব সরকার বাড়ির পুজো
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 12, 2023, 10:00 PM IST

সপ্তমী-দশমী হয় 131 কিলোগ্রাম চালের নৈবেদ্য

ফলতা, 12 অক্টোবর: প্রায় 350 বছরের পুরনো ফলতার মালা গ্রামে দেব সরকার বাড়ি । জমিদারি আর নেই ৷ আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে ফিকে হয়েছে পুরনো জৌলুসও ৷ তবে 278 বছর ধরে প্রাচীন রীতিনীতি মেনেই দেব সরকার বাড়িতে হয়ে আসছে উমার আরাধনা ৷ সপ্তমী থেকে দশমী হয় 131 কিলোগ্রাম চালের নৈবেদ্য ৷ এই পুজোর নেপথ্যে রয়েছে লম্বা ইতিহাস ৷

পলাশীর যুদ্ধের প্রাক্কালে মালারে দেব সরকার বংশের উত্থান ঘটে । আনুমানিক 350 বছর আগে বিহারীলাল দেব ব্যবসায়িক সূত্রে ফলতার মালা গ্রামে আসেন । তিনি ছিলেন কলকাতার সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়িক পরিবারের সদস্য । তিনি মালা নিবাসী নাগ বংশের মেয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং মালা গ্রামেই নিজ বসতি নির্মাণ করেন । তৎকালীন সময়ে কলিকাতা থেকে দক্ষিণবঙ্গের সুন্দরবনের লাট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল তাঁর ব্যবসা বাণিজ্য । গাঙ্গেয় জমিতে ধানের সুফলের জন্য ফলতায় বিশাল ধানের আরত ছিল বিহারীলাল দেবের এবং ধান ব্যবসার মূল কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠেছিল ফলতা ।

বিহারীলাল দেব এখানে প্রতিষ্ঠা করেন কুলদেবতা শ্রী শ্রী লক্ষ্মীজনার্দন জিউর মন্দির । পরে ব্যবসা এবং জমিদারি বৃদ্ধির পর বিহারীলাল দেবের পুত্র কালিকৃষ্ণ দেব বাংলার 1152 বঙ্গাব্দে প্রথম এই অঞ্চলে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন । পরে প্রজাদের মৈত্রী এবং মিলনের জন্য বাংলার নববর্ষের সময় গোষ্ট মেলার প্রচলন করেন তিনি । পরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি 'সরকার' উপাধিতে তাঁকে ভূষিত করে । তখন থেকে এলাকায় দেব সরকার নামে পরিচিত হয় এই পরিবার ।

এই দেব সরকার বাড়িতে দুর্গাপুজোর সময় আমন্ত্রিত থাকতেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাহেবেরাও । দুর্গা মঞ্চের সামনে সুবিশাল আটচালা নির্মাণ করা হয়েছিল ৷ আর সেই আটচালাতে দুর্গাপুজোর সময় সাতদিনব্যাপী চলত যাত্রাপালা ও কবিগান । মহিলাদের মনোরঞ্জনের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হত ভেতরের মহলে । স্বদেশি আন্দোলনের সময়কালে দেব সরকার বাড়ির দুর্গাপুজোতে চারণ কবি মুকুন্দ দাস কবি গান গেয়েছিলেন । পরবর্তীকালে স্বদেশি আন্দোলনের পৃষ্ঠভূমি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এই দেব সরকার বাড়ি ।

আরও পড়ুন: বিঘাটির চক্রবর্তীদের দুর্গাপুজোয় মা বাঁধা থাকেন শিকলে!

জমিদারি প্রথা না থাকায় বর্তনামে এই পরিবারের বড় রাজপ্রাসাদের গায়ে জমেছে আগাছার জঙ্গল । রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছে দেব সরকার বাড়ির ঠাকুর দালানের এক অংশ । তবে অতীতের সেই ঐতিহ্য এখনও পর্যন্ত ধরে রেখেছে দেব সরকার বাড়ির বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা । জৌলুসে ভাঁটা পড়লেও এখনও সেই রীতিনীতি বহাল রয়েছে । দেব সরকার বাড়ির দুর্গাপুজো এ বছর 279তম বর্ষে পদার্পণ করেছে । প্রতি বছর জন্মাষ্টমীর পরের দিন অর্থাৎ নন্দোৎসবের দিন প্রাচীন কাঠামোর উপর 'কাঠামো পুজো' করা হয় এখানে । দেব সরকার বাড়িতে প্রতিমা হয় এক চালার উপর । একটি সুপ্রাচীন বেল গাছে দেবীর বোধন হয় । মল্লিকপুরের চক্রবর্ত্তী পরিবার এই দেব সরকার বংশের কুলপুরোহিত । কিন্তু পরবর্তীকালে বেলসিংহার মৈত্র পরিবার এই পুজোর পৌরহিত্য করে ।

বর্তমানে মৃৎশিল্পী শ্রীকান্ত চিত্রকর বংশ পরম্পরায় এখানে মূর্তি নির্মাণ করে আসছেন । আর ঢুলিদাররা বংশ পরম্পরায় চাঁদপালার অদূরে সন্তোষপুর থেকে আসেন । গ্রামের সাধারণ মানুষ এই দুর্গোৎসবের আনন্দে মেতে ওঠেন । দুর্গাপুজোর দিনগুলোতে দেব সরকার বংশের সমস্ত পরিবার পরিজন দেশ বিদেশ থেকে মালা গ্রামে আসেন । এ বিষয়ে পরিবারের সদস্য তাপসকুমার দেব সরকার বলেন, "জমিদারি প্রথা আর নেই ৷ আর্থিক সংকটের মধ্যে পুজোর জৌলুসে ভাঁটা পড়েছে । আগে যে পরিমাণ চালের নৈবেদ্য করা হত এখন আর সেই পরিমাণ নৈবেদ্য হয় না । তবে এখনও বলিদান প্রথা রয়েছে ৷ কিন্তু আগের মতন পুজোর চারদিন বলি আর হয় না । বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা এই পুজোর হাল ধরেছে । নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত থাকে পরিবারের সদস্যরা ।"

আরও পড়ুন: সেজে উঠছে বেহালা নূতন দল, দর্শনার্থী প্যান্ডেলে ঢুকলেই বিনামূল্যে ফুচকা পাবেন!

পরিবারের অন্য সদস্য স্মৃতিরেখা দেব সরকারের কথায়, পুজোর চারটে দিন তাঁরা চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে কাটান । নৈবেদ্য থেকে শুরু করে পুজোর অন্যান্য কাজে পুরুষদের পাশাপাশি পরিবারের মহিলা সদস্যরা হাত লাগায় । পরিবারের যে সকল সদস্যরা দেশে বা বিদেশে রয়েছে তাঁরা পুজোর দিনগুলিতে বাড়িতে ফিরে । প্রচুর আনন্দের সঙ্গে এই পুজোকে উপভোগ করে সকলে । বিশেষ করে দশমীর দিন সিঁদুর খেলা ৷

সপ্তমী-দশমী হয় 131 কিলোগ্রাম চালের নৈবেদ্য

ফলতা, 12 অক্টোবর: প্রায় 350 বছরের পুরনো ফলতার মালা গ্রামে দেব সরকার বাড়ি । জমিদারি আর নেই ৷ আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে ফিকে হয়েছে পুরনো জৌলুসও ৷ তবে 278 বছর ধরে প্রাচীন রীতিনীতি মেনেই দেব সরকার বাড়িতে হয়ে আসছে উমার আরাধনা ৷ সপ্তমী থেকে দশমী হয় 131 কিলোগ্রাম চালের নৈবেদ্য ৷ এই পুজোর নেপথ্যে রয়েছে লম্বা ইতিহাস ৷

পলাশীর যুদ্ধের প্রাক্কালে মালারে দেব সরকার বংশের উত্থান ঘটে । আনুমানিক 350 বছর আগে বিহারীলাল দেব ব্যবসায়িক সূত্রে ফলতার মালা গ্রামে আসেন । তিনি ছিলেন কলকাতার সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়িক পরিবারের সদস্য । তিনি মালা নিবাসী নাগ বংশের মেয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং মালা গ্রামেই নিজ বসতি নির্মাণ করেন । তৎকালীন সময়ে কলিকাতা থেকে দক্ষিণবঙ্গের সুন্দরবনের লাট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল তাঁর ব্যবসা বাণিজ্য । গাঙ্গেয় জমিতে ধানের সুফলের জন্য ফলতায় বিশাল ধানের আরত ছিল বিহারীলাল দেবের এবং ধান ব্যবসার মূল কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠেছিল ফলতা ।

বিহারীলাল দেব এখানে প্রতিষ্ঠা করেন কুলদেবতা শ্রী শ্রী লক্ষ্মীজনার্দন জিউর মন্দির । পরে ব্যবসা এবং জমিদারি বৃদ্ধির পর বিহারীলাল দেবের পুত্র কালিকৃষ্ণ দেব বাংলার 1152 বঙ্গাব্দে প্রথম এই অঞ্চলে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন । পরে প্রজাদের মৈত্রী এবং মিলনের জন্য বাংলার নববর্ষের সময় গোষ্ট মেলার প্রচলন করেন তিনি । পরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি 'সরকার' উপাধিতে তাঁকে ভূষিত করে । তখন থেকে এলাকায় দেব সরকার নামে পরিচিত হয় এই পরিবার ।

এই দেব সরকার বাড়িতে দুর্গাপুজোর সময় আমন্ত্রিত থাকতেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাহেবেরাও । দুর্গা মঞ্চের সামনে সুবিশাল আটচালা নির্মাণ করা হয়েছিল ৷ আর সেই আটচালাতে দুর্গাপুজোর সময় সাতদিনব্যাপী চলত যাত্রাপালা ও কবিগান । মহিলাদের মনোরঞ্জনের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হত ভেতরের মহলে । স্বদেশি আন্দোলনের সময়কালে দেব সরকার বাড়ির দুর্গাপুজোতে চারণ কবি মুকুন্দ দাস কবি গান গেয়েছিলেন । পরবর্তীকালে স্বদেশি আন্দোলনের পৃষ্ঠভূমি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এই দেব সরকার বাড়ি ।

আরও পড়ুন: বিঘাটির চক্রবর্তীদের দুর্গাপুজোয় মা বাঁধা থাকেন শিকলে!

জমিদারি প্রথা না থাকায় বর্তনামে এই পরিবারের বড় রাজপ্রাসাদের গায়ে জমেছে আগাছার জঙ্গল । রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছে দেব সরকার বাড়ির ঠাকুর দালানের এক অংশ । তবে অতীতের সেই ঐতিহ্য এখনও পর্যন্ত ধরে রেখেছে দেব সরকার বাড়ির বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা । জৌলুসে ভাঁটা পড়লেও এখনও সেই রীতিনীতি বহাল রয়েছে । দেব সরকার বাড়ির দুর্গাপুজো এ বছর 279তম বর্ষে পদার্পণ করেছে । প্রতি বছর জন্মাষ্টমীর পরের দিন অর্থাৎ নন্দোৎসবের দিন প্রাচীন কাঠামোর উপর 'কাঠামো পুজো' করা হয় এখানে । দেব সরকার বাড়িতে প্রতিমা হয় এক চালার উপর । একটি সুপ্রাচীন বেল গাছে দেবীর বোধন হয় । মল্লিকপুরের চক্রবর্ত্তী পরিবার এই দেব সরকার বংশের কুলপুরোহিত । কিন্তু পরবর্তীকালে বেলসিংহার মৈত্র পরিবার এই পুজোর পৌরহিত্য করে ।

বর্তমানে মৃৎশিল্পী শ্রীকান্ত চিত্রকর বংশ পরম্পরায় এখানে মূর্তি নির্মাণ করে আসছেন । আর ঢুলিদাররা বংশ পরম্পরায় চাঁদপালার অদূরে সন্তোষপুর থেকে আসেন । গ্রামের সাধারণ মানুষ এই দুর্গোৎসবের আনন্দে মেতে ওঠেন । দুর্গাপুজোর দিনগুলোতে দেব সরকার বংশের সমস্ত পরিবার পরিজন দেশ বিদেশ থেকে মালা গ্রামে আসেন । এ বিষয়ে পরিবারের সদস্য তাপসকুমার দেব সরকার বলেন, "জমিদারি প্রথা আর নেই ৷ আর্থিক সংকটের মধ্যে পুজোর জৌলুসে ভাঁটা পড়েছে । আগে যে পরিমাণ চালের নৈবেদ্য করা হত এখন আর সেই পরিমাণ নৈবেদ্য হয় না । তবে এখনও বলিদান প্রথা রয়েছে ৷ কিন্তু আগের মতন পুজোর চারদিন বলি আর হয় না । বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা এই পুজোর হাল ধরেছে । নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত থাকে পরিবারের সদস্যরা ।"

আরও পড়ুন: সেজে উঠছে বেহালা নূতন দল, দর্শনার্থী প্যান্ডেলে ঢুকলেই বিনামূল্যে ফুচকা পাবেন!

পরিবারের অন্য সদস্য স্মৃতিরেখা দেব সরকারের কথায়, পুজোর চারটে দিন তাঁরা চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে কাটান । নৈবেদ্য থেকে শুরু করে পুজোর অন্যান্য কাজে পুরুষদের পাশাপাশি পরিবারের মহিলা সদস্যরা হাত লাগায় । পরিবারের যে সকল সদস্যরা দেশে বা বিদেশে রয়েছে তাঁরা পুজোর দিনগুলিতে বাড়িতে ফিরে । প্রচুর আনন্দের সঙ্গে এই পুজোকে উপভোগ করে সকলে । বিশেষ করে দশমীর দিন সিঁদুর খেলা ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.