কোচবিহার, 18 জুন : প্রতিবছর শহিদ বেদিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে যাচ্ছেন নেতা, মন্ত্রীরা ৷ কিন্তু কেউ প্রতিশ্রুতি পূরণ করেননি ৷ তিনবিঘা আন্দোলনে তিনটি শহিদ পরিবারের তিন সদস্যকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী পরেশ চন্দ্র অধিকারী ৷ অন্যদিকে বিরোধী শিবির, বিজেপিও পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছিল ৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউই পাশে থাকেনি ৷ ফলে শহিদ দিবস বয়কট করলেন শহিদ পরিবারের সদস্যরা (Martyrs Families boycott Tin Bigha Martyr Day) ৷
তাঁদের কথায়, নেতা বা মন্ত্রী যেই হোক, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি আর শুনবেন না ৷ পোস্টারে লিখে কড়া বার্তাও দিয়েছেন ৷ নিজেরাই এবার থেকে শ্রদ্ধা জানাবেন, এমনটাই জানালেন কোচবিহারের সীমান্তে ঐতিহাসিক তিনবিঘা আন্দোলনের শহিদ পরিবারের সদস্যরা ৷ আগামী 26 জুন শহিদ দিবস পালনের আগে এমনই পদক্ষেপ নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা ৷ ভারত-বাংলাদেশ কাঁটাতার সংলগ্ন এলাকায় তিনটি শহিদ বেদিতেই পড়েছে পোস্টার। তাতে লেখা, 'শহিদ বেদিতে কেউ মাল্যদান করবেন না ।'
কিন্তু কেন এই পদক্ষেপ ? শহিদ পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, বর্তমানে রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী পরেশ চন্দ্র অধিকারী শহিদ পরিবারগুলির দাবি মতো কর্মসংস্থানের আশ্বাস দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির এক বছর পেরিয়ে গেলেও কোনও কর্মসংস্থান হয়নি। তাই এবার মাল্যদান বয়কটের ডাক দিয়েছেন তাঁরা ।
আরও পড়ুন : চাঁদা নিলেই বহিষ্কার, শহিদ দিবসের প্রস্তুতি বৈঠকে কড়া বার্তা অভিষেকের
প্রসঙ্গত, কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ ব্লকের তিনবিঘা করিডর বাংলাদেশকে হস্তান্তরের প্রতিবাদে আন্দোলন করতে গিয়ে 3 জন শহিদ হন । পাশাপাশি বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছিলেন । 1981 সালে শহিদ হন সুধীর রায়, 1992-এ শহিদ হন ক্ষীতেন অধিকারী ও জীতেন রায় । অভিযোগ, তারপর থেকে শহিদ পরিবারগুলিকে শাসকদল-সহ অন্যান্য দল কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসলেও তা হয়নি । ক্ষীতেন অধিকারীর ছেলে পুলক অধিকারী আক্ষেপের সঙ্গে বলেন , "তিনবিঘা আন্দোলনের শহিদ দিবসে প্রত্যেক বছর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মাল্যদান করলেও আমাদের পরিবারগুলির দিকে কেউ তাকান না ।"
শহিদ সুধীর রায়ের ছেলে ভূপেন রায় বলেন, "আমার বাবা যখন শহিদ হন আমি তখন খুবই ছোটো ৷ বাবার মৃত্যুর পর চরম দারিদ্র্যতার সঙ্গে লড়াই করেছি ৷ প্রশাসন-সহ নেতাদের কাছে কর্মসংস্থানের ভিক্ষা চেয়েছি আমরা । কিন্তু কেউ পাশে দাঁড়াননি ৷ বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী পরেশ চন্দ্র অধিকারী কর্মসংস্থানের আশ্বাস দেন । কিন্তু এক বছর কেটে গেলেও কেউ কথা রাখেননি । তাই শহিদ বেদিতে মাল্যদান বয়কট করলাম ।"
আরও পড়ুন : ব্যারাকপুরের স্কুল থেকে জয়েন্টে প্রথম হিমাংশু, উচ্ছ্বসিত পরিবার ও অধ্যক্ষ
শহিদ জীতেন রায়ের পরিবারের সদস্যরা অন্যত্র থাকায় ভূপেন রায় ও পুলক অধিকারীই সেখানে পোস্টার লাগিয়েছেন। পুলক অধিকারী বলেন, "আমাদের আশ্বাসের বদলে কর্মসংস্থান যতদিন না সুনিশ্চিত হয়, ততদিন কাউকে শহিদ বেদিতে মাল্যদান করতে দেব না । আমরা 3 শহিদ পরিবার ও কয়েকজন আহতের পরিবার দিনের পর দিন অনেক কষ্টে দিনযাপন করছি, কেন্দ্র অথবা রাজ্য সরকার আমাদের দেখুক ।"
শহিদ পরিবারগুলির দাবিকে সমর্থন জানিয়েছেন তিনবিঘা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কুচলিবাড়ি সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক উৎপল রায় ৷ তিনি বলেন, "মন্ত্রী পরেশ চন্দ্র অধিকারী নিজেও তিনবিঘা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । তিনবিঘা আন্দোলন থেকেই তিনি পরিচিতি পান। এখন তিনি মন্ত্রী। তাঁর উচিত শহিদ পরিবারগুলির পাশে থাকা । নিজের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করা ৷" এই বিষয়ে মন্ত্রী পরেশ চন্দ্র অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি ।