কোচবিহার, 17 জুন : রাস্তার পাশে ছোটো একটা মন্দির । তাতে একটি মূর্তি । মূর্তি বললে হয়তো ভুল হবে, একটা মাথা । মন্ত্রোচ্চারণ করছেন পুরোহিত । সামনে সাজানো নৈবদ্য । অন্যদিকে ভোগের আয়োজন চলছে । কেউ কাটছেন ফল, তো কেউ পুজোর মাঝে শাঁখ বাজাচ্ছেন । আপাতদৃষ্টিতে দেখলে এই পুজো আর পাঁচটা পুজোর মতই । কিন্তু এই দেবতা একটু অন্যরকম । স্থানীয়রা বলেন, "টেনশন দেবতা" । পুজোর উদ্দেশ্য, মানুষের মধ্যে থেকে টেনশন দূর করা ।
যত দিন যাচ্ছে বাড়ছে জনসংখ্যা । তারসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চাকরিপ্রার্থী । কিন্তু সেই অনুযায়ী বাড়ছে না কর্মসংস্থানের সুযোগ । ফলে কাজের জন্য কেউ যাচ্ছেন ভিনরাজ্যে তো কেউ ছোটোখাটো কাজ করে দিন গুজরান করছেন । বাড়ছে চিন্তা । যার জেরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম । এবার সেই চিন্তা থেকে বাঁচতে অভিনব পুজো করলেন কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের কয়েকজন ।
টেনশন দেবতা । তবে এই দেবতার নেই কোনও হাত-পা । একটা পাথরের উপর কালো রং দিয়ে আঁকা চোখ-নাক-মুখ । কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ ব্লকের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী নিজতরফ গ্রামপঞ্চায়েতের ৭৬ নিজতরফ ভেরভেরির বাড়ি এলাকায় এই পুজো হয় । বছর তিনেক আগেই স্থানীয় যুবকরা এই টেনশন দেবতার পুজোর সূচনা করে । তখন ছোটো করে হলেও দিন দিন এই পুজো ক্রমশ বড় হচ্ছে ।
![1](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/3580805_wb_tension.jpg)
কিন্তু শুধু মাথা পুজো ? প্রশ্ন করা হয় এক যুবককে । চাকরিপ্রার্থী ওই যুবক বললেন, "টেনশন তো হাত পায়ে থাকে না । থাকে মাথায় । তাই এই মাথা পুজো ।" সন্তোষ রায়, কমল বর্মণ, সহদেব অধিকারীরা বলেন, "পড়াশোনা করার পরেও চাকরির খবর নেই। সীমান্তের এই গ্রামে স্থায়ী কর্মসংস্থানেরও তেমন সুযোগও নেই। বেকারত্ব নিয়ে একটা চিন্তা সর্বদাই তাড়া করে বেড়ায় ।" টেনশন থেকে মুক্তি পেতেই তাঁরা প্রতিবছর টেনশন দেবতার আরাধনায় সামিল হচ্ছেন । যার ব্যতিক্রম হয়নি এবারও ।
ফলে একটা কাল্পনিক মূর্তি এঁকে সেখানেই পুজো করছেন বাসিন্দারা । তাঁরা জানালেন, কমছে চিন্তা । ভালোভাবে থাকা যাচ্ছে ।
পুজোর উদ্যোক্তাদের কথায়, "তেমন কাজের সুযোগ না থাকায়, পড়াশোনা করেও চাকরির খোঁজে এলাকার অনেক যুবক ভিনরাজ্যে থাকে । এছাড়াও আছে সাংসারিক চিন্তা । এইসব চিন্তাভাবনা দূর করতেই টেনশন পুজো করা হচ্ছে ।"
কিন্তু দেবতার নাম টেনশন কেন ? এই নামে কি আদৌ কোনও দেবতা আছে ?
প্রশ্নের উত্তরে উদ্যোক্তারা জানান, ধন সম্পত্তির দেবতা লক্ষ্মী, যন্ত্রাংশের দেবতা বিশ্বকর্মা । এক্ষেত্রে যদি দেবতা থাকতে পারে তাহলে টেনশনের কেন দেবতা হবে না ? নিজেরাই তাই পাথর দিয়ে এই দেবতা তৈরি করেছেন ।
পুরোহিত দেবারু বর্মণ জানান, অনেক দেবতার নাম তিনি শুনেছেন, কিন্তু টেনশন দেবতার নাম কখনও শোনেননি । তাই প্রথম দিকে এলাকার যুবকদের কাছ থেকে টেনশন দেবতার পুজো করার অনুরোধ পাওয়ার পর এই পুজো করতে রাজি হননি তিনি । কারণ, এই দেবতার মন্ত্র কেমন হবে সেটা তাঁর বাপ-ঠাকুরদার কাছ থেকে কখনও শোনেননি । কিন্তু যুবকরা নাছোড়বান্দা । শেষ পর্যন্ত পুজো করতে রাজি হন । তিন বছর ধরে দেবারুই পুজো করে আসছেন ।
তবে কী মন্ত্র পড়েন পুরোহিত ?
তিনি জানান, দেবতার নিকট প্রার্থনা করা হয় যাতে যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ আসে । তবে সবটাই অবশ্য বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল । স্থানীয় বাসিন্দা গণেশ অধিকারী, জ্যোতিষ বর্মণরা বলেন, "এই টেনশন দেবতা প্রতিষ্ঠার পর থেকে গ্রামের অনেকেই এখন সমস্যা হলে এখানে এসে প্রার্থনা করেন । অনেকের টেনশন দূরও হয়েছে ।"