কোচবিহার, 21 জুন : ভারত -বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ মহকুমা । এই মহকুমার কুচলিবাড়ি থানায় আট বছর ধরে কাজ করছেন এক কনস্টেবল । তাঁর নাম পলাশরঞ্জন বিশ্বাস । থানার OC, অন্যান্য কনস্টেবলদের বদলি হলেও পলাশবাবুর হয় না । এবার পলাশবাবুর বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ এনে তাঁর বদলির দাবিতে সরব হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ।
পলাশবাবুর বিরুদ্ধে সীমান্তে গোরুপাচার চক্র এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের ট্রাকগুলি থেকে পুলিশের নাম করে টাকা তোলার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে । স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, কুচলিবাড়ি থানার অন্তর্গত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের অনেক জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া নেই । তার সুযোগ নিয়ে সেখান দিয়ে গোরু পাচার হয় । মাঝেমধ্যে পুলিশি অভিযানে পাচারের সময় ধরা পড়ে গোরু । সেই গোরুগুলির অনেক সময় "স্পট নিলাম" হয় । পলাশবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিলামের সময় মোটা টাকা হাতিয়ে নেন । আরও অভিযোগ, তিনি চ্যাঙ্গরাবান্ধা সীমান্তে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতকারী ট্রাকগুলি থেকে জেলা পুলিশের নাম করে তোলা তোলেন । বিভিন্ন মহলের দাবি, আট বছর ধরে বকলমে পলাশরঞ্জন বিশ্বাসই কুচলিবাড়ি থানা চালাচ্ছেন ।
পলাশবাবুর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী সহ পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে জমা পড়েছে । একজন কনস্টেবল টানা আট বছর এক থানায় কিভাবে কর্মরত রয়েছেন এনিয়ে স্থানীয়দের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন । শুধু স্থানীয়রাই নন, পলাশবাবুর বিরুদ্ধে থানার পুলিশকর্মীদেরও একটি অংশ ক্ষুব্ধ । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কনস্টেবল বলেন, "ওনার (পলাশরঞ্জন বিশ্বাস) সঙ্গে সাহেবদের খাতির রয়েছে । তাই ওনাকে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না । "
এলাকার জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের নেতারাও পলাশবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে সরব । স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা মেখলিগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধক্ষ্য বাপি চক্রবর্তী বলেন, "ওই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে অনেকে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন । যার মধ্যে কয়েকটি অভিযোগ গুরুতর । বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের তরফে পুলিশ প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে । পুলিশ প্রশাসনের বিষয়টি দেখা উচিৎ ।" বাগডোকরা-ফুলকাডাবরি এলাকার তৃণমূল নেতা পুলিন চন্দ্র রায় বলেন, " গোরু নিলাম সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ওই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে । "BJP-র যুব মোর্চার জলপাইগুড়ি জেলা সাধারণ সম্পাদক জ্যোতিবিকাশ রায় বলেন,"ওই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ যে কতটা তীব্র তা এলাকায় কান পাতলেই বোঝা যায় ।"
যদিও যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই পলাশবাবু অবশ্য বলেন, "আমি 8 বছর নয়, 4 বছর ধরে কুচলিবাড়ি থানায় রয়েছি । আমি যে থানায় রয়েছি তার অধীনে চ্যাংরাবান্ধা চেকপোস্ট পড়ে না । তাই ট্রাকের থেকে তোলা তোলার অভিযোগও ভিত্তিহীন । গোরু নিলামের টাকা নেওয়ার অভিযোগও মিথ্যা ।" মেখলিগঞ্জ পুলিশের SDPO সিদ্ধার্থ দর্জি এনিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি । তবে কোচবিহারের পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পুরো বিষয়টির তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন ।