কোচবিহার, 13 মে : শীতলকুচি যাওয়ার উদ্দেশে কোচবিহার বিমানবন্দরে নামলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় । এদিন বিএসএফের হেলিকপ্টারে দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ কোচবিহার বিমানবন্দরে নামেন তিনি । তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক ৷ বিমানবন্দরে নামার পর তিনি সোজা শীতলকুচির উদ্দেশে রওনা দেন।
বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই শীতলকুচি, সিতাই, দিনহাটা বিভিন্ন এলাকায় অশান্তির ঘটনা ঘটছে । সেখানকার আক্রান্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলবেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় । এরপর রাতে কোচবিহার সার্কিট হাউসে থাকবেন এবং আগামীকাল সকালে কোচবিহার বিমানবন্দর থেকে অসমের উদ্দেশে রওনা দেবেন । অসমের রাঙাপানি, গোয়ালপাড়া, শ্রীরামপুরে বিভিন্ন এলাকায় বহু আক্রান্ত বিজেপি কর্মীরা আশ্রয় নিয়েছেন । সেই ক্যাম্পে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানা গিয়েছে ।
হেলিকপ্টার থেকে নেমে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যপাল বলেন,"মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সংবিধান মেনে কাজ করা ৷ আর রাজ্যপালের দায়িত্ব হল সংবিধানকে সংরক্ষিত করা, সুরক্ষিত করা ৷ আর অনুচ্ছেদ 159 ধারা অনুযায়ী রাজ্যপালের কর্তব্য মানুষের সেবা করা ৷ মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক আদেশকে ঢাল বানিয়ে আমাকে চিঠি লিখে আমার যাওয়া নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছেন, তাতে আমি খুব অবাক হয়েছি ৷ রাজ্যপালকে হাতের মুঠোয় করা, সংবিধানকে অনাদর করা, এক প্রশাসনিক আদেশকে সংবিধানের থেকেও বেশি মনে করলে সেটা প্রজাতন্ত্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যায় ৷"
তিনি আরও বলেন, "পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি দেখে আমাকে অনেকে প্রশ্ন করছিলেন যে আমি রাজ্যপাল হয়ে কী করছি ? আমি সরকারকেও এই বিষয়ে জানতে চাই ৷ কিন্তু কিছুই জানতে পারেনি ৷ তখনই আমি স্থির করে নিই যে, এমন পদক্ষেপ করব যাতে মানুষের ঘায়ে একটু মলম লাগে ৷ আর যখন থেকে আমি রাজ্য সফরের কথা ঘোষণা করি, তখন থেকেই পরিবর্তন এসেছে ৷ যাঁরা চলে গিয়েছিলেন, তাঁরা ফিরে আসছেন ৷ এটা দেখে আমার ভাল লাগছে ৷ "
আরও পড়ুন, সংবিধান মেনে যা করার করব, মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা চিঠি রাজ্যপালের
মূলত ভোট পরবর্তী হিংসা দেখতেই আজ কোচবিহারে সফর ধনকড়ের । এদিকে, এই সফরকে ঘিরে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত চলছে ৷ চিঠি পাল্টা চিঠির পালা চলছে ৷ রাজ্যপালের সফরের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া চিঠি গিয়েছিল রাজভবনে । মুখ্যমন্ত্রী তাঁর চিঠিতে লিখেছিলেন, রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে এভাবে জেলা সফরে যেতে পারেন না রাজ্যপাল । এই প্রসঙ্গে রাজ্যপালকে সরকারি বিধি স্মরণ করিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, রাজ্য মন্ত্রিসভার সঙ্গে পরামর্শ না করে জেলা সফর করতে পারেন না রাজ্যপাল । এর উত্তরে গতকাল মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা কড়া চিঠি দিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ৷ চিঠিতে রাজ্যপাল লেখেন, সংবিধান মেনে যা যা করার সব করব ৷ রাজ্যপালের কথায়, "ভোট পরবর্তী হিংসায় বহু মানুষ অসহায় অবস্থায় রয়েছেন ৷ যা অস্বীকার করা যায় না ৷ আমি সংবিধান মেনেই যা করার করছি ৷ আশা করি আপনিও সংবিধান মান্যতা দেন ৷ সেক্ষেত্রে আমাদের একসঙ্গে কাজ করা উচিত ৷" রাজ্যপাল উল্লেখ করেন, "সংবিধানের আওতায় থেকেই আমি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য যা করার করব ৷"