কোচবিহার, ৩০ অগাস্ট : আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ ও কাশফুল জানান দিচ্ছে শরৎ এসেছে । কয়েকদিন পরই সপরিবারে মা দুর্গা মর্ত্যে আসবেন । কিন্তু দুশ্চিন্তার কালো মেঘ ঢাকি পাড়াগুলিতে । অন্যান্য বছর এসময় বায়না হয়ে যায় । কিন্তু এবার ভিনরাজ্য থেকে ডাক পাননি কোচবিহারের ঢাকিরা । স্থানীয় যেসমস্ত দুর্গাপুজো কমিটিগুলো রয়েছে তারাও ডাকেনি । ঢাকিদের কথায়, "কোরোনা ও লকডাউনের জেরে গত চার-পাঁচ মাসে পুজো পার্বন একবারে বন্ধ । দুর্গাপুজোর দিকে তাকিয়ে আছি । কিন্তু পুজো কমিটিগুলো থেকে এখনও কিছু জানায়নি ।"
কোচবিহারের গোসানিমারি অত্যন্ত ছোটো একটি জনপদ । আর গোসানিমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে জামবাড়ি গ্রামে ৩০-৩৫টি পরিবার রয়েছে, যারা বংশপরম্পরায় ঢাক বাজিয়ে আসছেন । সারাবছর বাড়িতে বসে বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেন আর স্থানীয় বিভিন্ন পুজো পার্বনে ঢাক বাজান । তবে পুজোর সময় ঢাকিদের একটা বড় অংশ অসমের গুয়াহাটি, তেজপুর, বদরপুর, লামডিং, মেঘালয়ের তুরা, শিলংয়ে যান ঢাক বাজাতে । মহালয়ার দিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন । পঞ্চমী কিংবা ষষ্ঠীর দিন পুজো প্যান্ডেলে পৌঁছে যান তাঁরা । যাঁরা ভিনরাজ্যে যান না তাঁরা স্থানীয় বিভিন্ন পুজো প্যান্ডেলে ঢাক বাজান । ঢাকিরা জানান, "ভিনরাজ্যে গেলে এক একজন কমপক্ষে 20 হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরি । আর স্থানীয় পুজো প্যান্ডেলে বাজালে হাজার পাঁচেক টাকার মতো থাকে ।" কিন্তু কোরোনা ও লকডাউনের কারণে ভাদ্র মাস এলেও এখনও বায়না হয়নি ঢাকিদের । অন্যান্য বছর এই সময় ঢাকি মহল্লাগুলিতে ঢাকের আওয়াজ জানান দিত পুজো এসে গেছে । কিন্ত এবার ঢাক নামাননি অনেকে । ধুলো জমেছে ঢাকের গায়ে ।
জামবাড়ির ঢাকি কাজল দাস বলেন, "গত পাঁচ মাস ধরে পুজো-পার্বন সব বন্ধ । ফলে আমাদের উপার্জন বন্ধ রয়েছে । ভাদ্র মাস পড়লেও ভিনরাজ্য থেকে ডাক আসেনি । স্থানীয় পুজো কমিটিগুলি এখনও যোগাযোগ করেনি ।" আর এক ঢাকি বিষ্ণু বাদ্যকর বলেন, "প্রতি বছর দুর্গাপুজোর দিকে তাকিয়ে থাকি । কিন্তু এখনও পর্যন্ত বায়না হয়নি । তা ছাড়া অসমের সঙ্গে যানবাহন চলাচল শুরু হয়নি । ফলে ভিনরাজ্যে ডাক এলেও সেখানে ঢাক বাজাতে যেতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে ।" প্রদীপ বাদ্যকর নামে একজন বলেন, "স্থানীয় যেসব দুর্গাপুজো মণ্ডপে ঢাক বাজাই, সেখানে যোগাযোগ করেছি । উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, পুজোর বিষয়ে কিছু ঠিক হয়নি ।" ঢাকি পরিবারের এক মহিলা সদস্য তারা দাস বলেন, "পুজো-পার্বন বন্ধ থাকায় ঢাক বাজানো বন্ধ । আর উপার্জন না হওয়ায় অত্যন্ত কষ্টে সংসার চালাচ্ছি ।" এই পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে সেদিকে তাকিয়ে ঢাকিরা ।