কলকাতা, ২১ মার্চ: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের (Nishith Pramanik) উপর হামলার ঘটনায় বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে পুলিশ । কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) মামলা চলাকালীন সে বিষয়টি বেমালুম চেপে গিয়েছে রাজ্য সরকার ৷ জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এবার তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলল কেন্দ্র । পাশাপাশি কেন্দ্রের আইনজীবীর অভিযোগ, একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে হামলার ঘটনায় পুলিশ কী পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্যের শাসক দলের সমর্থকদের বিরুদ্ধে রিপোর্টে তারও কিছুই উল্লেখ করা হয়নি ৷ শুধু দায়সারা রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে বলেও কটাক্ষ করেছেন অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী ।
মঙ্গলবার মামলার শুনানিতে মন্ত্রীর পক্ষে আইনজীবী সৌম্য মজুমদার বলেন, "বিজেপি সমর্থকরা যখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে নিয়ে আসছিল তখনই সেখানে শাসকদলের লোকদের জমায়েত ছিল । সেখানে রাজ্য পুলিশও উপস্থিত ছিল । নিশীথ প্রামাণিক পৌঁছনোর পর থেকেই পাথর ছোড়া শুরু হয় ।" এ ঘটনার জন্য সরাসরি রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহর দিকে আঙুল তুলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আইনজীবী ৷ আদালতে তিনি বলেন, "উদয়ন গুহ'র নির্দেশে সেখানে জমায়েত করেছিল শাসক দল। নিশীথ প্রামাণিকের গতিবিধি আটকানোর জন্যই এই জমায়েত করা হয়েছিল ।" একইসঙ্গে, সরাসরি পুলিশের দিকে আঙুল তুলে আইনজীবী অভিযোগ করেন, পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
এদিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আইনজীবী সওয়ালে বলেন, "নিশীথ প্রামাণিকের উপর হামলার পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে । কারণ তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য। তাঁর উপর আক্রমণ হলে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধী দলকে আটকানো, ভয় দেখানো অনেক সহজ হবে ৷" এলাকার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাও প্রশ্নের মুখে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "দিনহাটা অত্যন্ত ছোট একটা জায়গা । একজন মন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে যদি প্রশ্ন ওঠে তবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কী অবস্থায় তা সহজেই অনুমেয় ৷" কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ-এর সাব ইনসপেক্টর অজয় রায় গত 27 ফেব্রুয়ারি এই ঘটনার পরই স্থানীয় থানায় এফআইআর দায়ের করেন ৷ মন্ত্রীর কনভয়ে হামলা, গাড়ির কাঁচ ভাঙা, গুলি চালানো, লাঠি নিয়ে আক্রমণ করা এসব কিছুই অভিযোগে জানানো হয় । আইনজীবী এদিন আদালতে দাবি করেন,"অত্যন্ত পরিকল্পনা করে এই আক্রমণ চালানো হয়েছিল । যারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কিছুই করা হয়নি । নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশের থাকলেও তারা তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যার্থ হয়েছে ।"
পুলিশ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে । এমনকি তদন্ত করে তেমন কোনও রিপোর্টও তারা দিতে পারে নি । সে কারণে গোটা ঘটনার তদন্ত কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে করানো উচিত বলেও মনে করছে নিশীথ প্রামাণিকের আইনজীবী ৷ পাশাপাশি এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার পক্ষেও এদিন রোরদার সওয়াল করেন তিনি ৷ অন্যদিকে, অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী বলেন, "কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর উপর হামলা করা হচ্ছে পুলিশ কিছু করতে পারছে না, এটা প্রমাণ করছে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে ।" মামলা দায়ের করার ক্ষেত্রেও পুলিশ সম্পূর্ণ পক্ষপাত করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি । তাঁর কথায়, "পুলিশ কি পদক্ষেপ নিয়েছে তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে রিপোর্টে তার কিছুই বলা হয় নি । দায়সারা রিপোর্ট দিয়েছে পুলেশ ।"
আরও পড়ুন: সোনাপাচার রুখতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর
যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল এদিন বলেন, "যে ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন তিনি ঘটনার দিন ওই স্থানে উপস্থিত ছিলেন না । এলাকা শান্তিপূর্ণই ছিল ।" পুলিশ যা পদক্ষেপ নিয়েছে তার উল্লেখ করে তিনি জানান, এই ঘটনায় সায়েবগঞ্জ থানার তরফে ইতিমধ্যেই একটি মামলা রুজু করা হয়েছে । এবং এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট 21 জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । ঘটনাস্থল ছাড়াও এলাকার বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজও সংরক্ষণ করেছে পুলিশ । বিচারপতিকে ভিডিও ফুটেজের পাশাপাশি সেইসব সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেন তিনি ।
ঘটনার দিন বেশ কিছু অস্ত্রশস্ত্র, লাঠি, মোটর সাইকেল এলাকা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এছাড়াও কিছু কার্তুজের ফাটা সেলও মিলেছে। অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, "পুলিশ মোটেও বসে নেই ।" এদিন সকালে বিচারপতি রাজা শেখর মান্থার বেঞ্চে নিজেদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফয়াইয়ার খারিজের দাবিতে আবেদন জানান বিজেপি কর্মীরা । আদালত সূত্রে খবর, বিজেপি কর্মীদের মামলা প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ফেরত পাঠিয়েছেন বিচারপতি মান্থা । প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ আগামিকাল বুধবার মামলাটি শুনবেন বলে জানিয়েছে ।