কোচবিহার, 9 ডিসেম্বর: সীমান্তে পথ ভুলে ভারতে ঢুকে পড়েছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন মহম্মদ নয়ন ৷ তিনবছর পর সোশাল মিডিয়ার সৌজন্যে ফের পরিবারকে ফিরে পেলেন বাংলাদেশের এই যুবক ৷ বছর তিনেক আগে নয়ন ভারত-বাংলাদেশের কাঁটাতারহীন সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়েছিলেন ৷ তখন থেকেই নয়নের খোঁজ চালাচ্ছিলেন পরিবার এবং আত্মীয়রা ৷ চলতি বছরের মাঝামাঝি, সোশাল মিডিয়ায় নয়নের ছবি দেখে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, তিনি ভারতে রয়েছেন ৷ তার পর দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া ও চিকিৎসার পর সুস্থ মহম্মদ নয়নকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন তাঁর বাবা রহিদুল মিঞা ৷
জানা গিয়েছে, তিন বছর আগে কোচবিহারের দিনহাটায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের অরক্ষিত অংশ দিয়ে ভুল করে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন ঢাকার বাসিন্দা মহম্মদ নয়ন ৷ মানসিক ভারসাম্যহীন নয়ন বহুদিন ধরেই নিখোঁজ ছিলেন ৷ পরবর্তী সময়ে মেখলিগঞ্জের চ্যাংরাবান্ধার ভিআইপি মোড়ে ওই যুবককে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন স্থানীয়রা ৷ তাঁকে নাম জিজ্ঞাসা করা হলে কিছুই বলতে পারেন না ৷ এমনকী বাড়ির ঠিকানাও জানতেন না ৷ তখনই কয়েকজন ব্যক্তি নয়নের ছবি সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন ৷ তাঁরাই চ্যাংরাবান্ধায় নয়নের থাকার ব্যবস্থা করেন ৷
এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে নয়নের বাবা রহিদুল মিঞা, সোশাল মিডিয়ায় ছেলের ছবি দেখেন ৷ সেখানে নয়নের পরিচয় ও পরিবারের খোঁজে বার্তা দেওয়া হয়েছিল ৷ সেই দেখে রহিদুল স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ৷ সেইমতো নয়নের খোঁজ মিলতেই চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ভারতে আসেন রহিদুল ৷ সঙ্গে ছেলের পাসপোর্ট এবং অন্যান্য পরিচয়পত্রও নিয়ে এসেছিলেন ৷ কিন্তু বিনা পাসপোর্ট ও ভিসায় ভারতে আসায় নয়নের বাংলাদেশে ফেরা নিয়ে আইনি জটিলতা তৈরি হয় ৷ এর পর মেখলিগঞ্জ থানার পুলিশ নয়নকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে ৷
বিষয়টির সুরাহা করতে নয়নকে মেখলিগঞ্জ মহকুমা আদালতে পেশ করা হয় ৷ সেখানে বিচারক তাঁর মানসিক সমস্যার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন ৷ সেই সঙ্গে তাঁকে চিকিৎসা করানোর নির্দেশ দেন ৷ তখন থেকে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত সেপ্টেম্বর মাসে চিকিৎসকরা নয়নকে সুস্থ ঘোষণা করেন ৷ এর পর 29 নভেম্বর ঢাকায় নয়নের পরিবারকে খবর পাঠায় প্রশাসন ৷ সেই মতো নয়নের বাবা ফের ভারতে আসেন ৷ এ দিন মহম্মদ নয়নকে সবরকম আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ৷
কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট হয়ে বাবার সঙ্গে নিজের দেশে ফিরে গেলেন মহম্মদ নয়ন ৷ বর্তমানে তিনি সুস্থ ৷ রহিদুল জানিয়েছেন, তিনি যে ছেলেকে ফিরে পাবেন, তা ভাবেননি ৷ বাংলাদেশের বুড়িমারি চেকপোস্টের ওসি মহম্মদ নূর হাসান কবির জানান, ভারতের স্বহৃদয় ব্যক্তি সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট না দিলে, হয়তো নয়নকে তাঁর পরিবারের কাছে ফেরানো যেত না ৷ ভারত তথা রাজ্য প্রশাসনের উদ্যোগকেও সাধুবাদ জানান তিনি ৷
আরও পড়ুন: