মাথাভাঙা, 11 ফেব্রুয়ারি: "আপনাদের সকলকে সাক্ষী রেখে কথা দিলাম ! আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব ৷" শনিবার কোচবিহারের মাথাভাঙায় জনসভা করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Abhishek Banerjee Rally in Cooch Behar) ৷ সভামঞ্চ থেকে 'বিএসএফের অত্যাচার' নিয়ে সরব হন তিনি ৷ সেই 'অত্য়াচারের নমুনা' হিসাবে উল্লেখ করেন একটি 'ঘটনা' ৷ অভিষেক দাবি করেন, শুধুমাত্র পাচারকারী সন্দেহে প্রেমকুমার বর্মন নামে 23 বছরের এক যুবককে নৃশংসভাবে খুন করেছেন বিএসএফ জওয়ানরা ৷ প্রেমকুমারের পরিবারকে সুবিচার পাইয়ে দিতে তাঁদের পাশে থেকে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দেন অভিষেক ৷ মঞ্চে ডেকে নেন নিহত প্রেমকুমারের মা, বাবা ও এক আত্মীয়কে ৷
এদিনের সভামঞ্চ থেকে অভিষেক জানান, প্রেমকুমার বর্মন দিনহাটা-1 ব্লকের ভারবাঁধা গ্রামে বাসিন্দা ছিলেন ৷ পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করার জন্য ভিনরাজ্য়ে কাজ করতেন তিনি ৷ প্রায় 4 বছর পর গ্রামে ফিরেছিলেন গত বছর ৷ 2022 সালের 24 ডিসেম্বর অন্য়ান্য দিনের মতোই ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠেন প্রেমকুমার ৷ তারপর বাড়ির কাছেই একটি মাঠে হাঁটতে যান তিনি ৷ সেখানে মাত্র এক-দু'হাত দূরত্ব থেকে তাঁকে গুলি করেন বিএসএফ জওয়ানরা ৷ অভিষেকের দাবি, ওই যুবককে লক্ষ্য করে পেলেট গান চালানো হয়েছিল ৷ অভিষেক জানান, প্রেমকুমার বর্মনের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তাঁর কাছে রয়েছে ৷ তাতে বলা হয়েছে, ওই যুবকের শরীরে মোট 180টি পেলেট ছোড়া হয়েছিল ! বেশিরভাগ গুলির লক্ষ্য ছিল তাঁর দুই পা ৷ প্রেমকুমারের দুই পা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল এই আক্রমণে ৷ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জেরেই তাঁর মৃত্যু হয় বলেও দাবি করেন অভিষেক ৷ তিনি জানান, এক বিশেষজ্ঞ তাঁকে বলেছেন, তিনি তাঁর 40 বছরের কেরিয়ারে এমন নৃশংস হত্যা দেখেননি !
আরও পড়ুন: পাহারাদারের নাম অভিষেক, কেশপুরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূলের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’
এরপরই অভিষেক বলেন, "প্রেমকুমার একজন তরতাজা রাজবংশী যুবক ছিলেন ৷ কেন তাঁকে এভাবে খুন করা হল ? তিনি কী পাচার করছিলেন ? তাঁর কাছে কি গুলি, বন্দুক ছিল ? তাঁর কাছ থেকে কি গরু, সোনা উদ্ধার হয়েছিল ? তাহলে কেন তাঁকে মারা হল ? আমি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে, বিএসএফের কাছে এর জবাব চাই ৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ডেপুটি তো এখানকারই সাংসদ ৷ তিনি কেন এই ঘটনা নিয়ে সরব হলেন না ? এঁরা শুধু মুখে রাজবংশী প্রেমের কথা বলেন ৷ আর এঁদের অধীনে থাকা বাহিনী রাজবংশিদের এভাবে খুন করে ! আমি 48 ঘণ্টা সময় দিচ্ছি, রাজবংশিদের নিয়ে আপনাদের (বিজেপি তথা কেন্দ্রের) কী অবস্থান, সেটা স্পষ্ট করুন ৷"
এদিনের সভামঞ্চে উপস্থিত হন নিহত প্রেমকুমার বর্মনের মা সুখীমণি বর্মন এবং বাবা শিবেন বর্মন ৷ অভিষেক তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দেন ৷ বলেন, "আমি নিজে এই বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব ৷ আইনি লড়াই লড়ব ৷ হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট যত দূর যাওয়ার, যাব ৷ আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব ৷"