কলকাতা, 2 মে : মৌমাছি কামড়ে দিয়েছে । কী করবেন ? সাপে কামড়ে দিয়েছে । কিন্তু, কোন ধরনের সাপ? কী ধরনের বিষ সেই সাপের ? কিংবা, বিষ খেয়ে ফেলেছেন কেউ । এই অবস্থায় কী করবেন? নানাবিধ বিষ সংক্রান্ত এমনই সব তথ্য জানতে ফোন করুন RG কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পয়জ়ন ইনফরমেশন সেন্টারের টোল ফ্রি নম্বরে । পূর্ব ভারতে এই পরিষেবা চালু রয়েছে এই হাসপাতালে ।
ভারতে বিষজনিত কারণে মৃত্যুর হার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি । সাপে কাটা অথবা বিষ পান করে যে সব রোগী মারা যান তাঁদের সংখ্যা অন্য যে কোনও দেশের তুলনায় এখানে বেশি । RG কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এই সেন্টারের ইনচার্জ অধ্যাপক সোমনাথ দাস বলেন, "এই ধরনের পরিস্থিতিতে এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল দেশে এই ধরনের পয়জ়ন ইনফরমেশন সেন্টার বা বিষ সংক্রান্ত তথ্য কেন্দ্র তৈরি করা । সাধারণ মানুষ যাঁকে সাপে কামড়েছে অথবা যিনি বিষ পান করেছেন, তিনি বা তাঁর পরিজনরা যদি ফোন করেন তাহলে প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়ে কিছু উপদেশ দেওয়া সম্ভব হবে এই সেন্টার থেকে । যার পরিপ্রেক্ষিতে সাপে কাটা রোগী অথবা বিষ পান করা রোগীর প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে । মূলত এই উদ্দেশ্য নিয়েই এই সেন্টারটি তৈরি করা হয়েছিল । এটা রাজ্য সরকারের নিজস্ব প্রজেক্ট ।"
একই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, "এই সেন্টারে আমরা একটি টোল ফ্রি ফোন নম্বর চালু রেখেছি । রোগী বা তাঁর পরিজনরা এই নম্বরে ফোন করলে বিনা খরচে তিনি প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন । আমাদের টোল ফ্রি নম্বরটি হল : 18003450033 ।"
এক বছর আগে চালু হয়েছে এই সেন্টারটি । সাধারণ মানুষ এই সেন্টারে ফোন করে কোন ধরনের বিষয় সাধারণত জানতে চান?
অধ্যাপক সোমনাথ দাস বলেন, "গত এক বছরের যে পরিসংখ্যান, সেটা অনুযায়ী সাধারণ মানুষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমাদের ফোন করেছেন সাপে কাটার বিষয়ে জানার জন্য । কোনও বিষাক্ত পোকা-মাকড়ের কামড় সহ প্রাথমিক চিকিৎসায় কী করতে হবে, এই সব বিষয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সব থেকে বেশি আমরা ফোন কল পেয়েছি ।"
কিন্তু, যখন কোনও বিষকে সনাক্ত করা যায় না বা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন না এমন কোনও ফোন কখনও পেয়েছেন?
অধ্যাপক সোমনাথ দাস বলেন, "অনেক জায়গা থেকেই ফোন আসে । সেটা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আসে । অনেকসময় ডাক্তারবাবুদের কাছ থেকেও আসে । যেখানে রোগী কোনও বিষ খেয়ে এসেছেন কিন্তু প্রাথমিক ভাবে বোঝা যাচ্ছে না সেটা কোন ধরনের বিষ । ডাক্তারবাবুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের ফোন করেন । উপসর্গগুলি শুনে অন্ততপক্ষে আমরা একটা আন্দাজ দিতে পারি যে কোন ধরনের বিষ সেটা হতে পারে । সেই অনুযায়ী চিকিৎসার পরামর্শও আমরা দিয়ে থাকি ।"
এই সেন্টারে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফোন আসে। টোল ফ্রি এই পরিষেবা সকাল 6টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চালু রয়েছে । অধ্যাপক সোমনাথ দাস বলেন, "সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা পদ্ধতির বিষয়ে আমরা কিছু জানাই না। শুধুমাত্র প্রাথমিকভাবে কী করা যেতে পারে আমরা সেটা জানাই । ডাক্তারবাবু যাঁরা আমাদের ফোন করেন তাঁদের আমরা সমগ্র চিকিৎসার পদ্ধতি, কী ভাবে চিকিৎসা করতে হবে, সেসব বিষয়ে অবহিত করি ।" তিনি আরও জানান, বিষ অথবা বিষক্রিয়াকে অন্ততপক্ষে দু'ভাগে ভাগ করা যেতে পারে । এক, কোনও বিষ যেটা কেউ খেয়ে ফেলেছেন । দুই, কোনও বিষ যেটা কোনও কিছুর মাধ্যমে শরীরে ঢুকেছে অর্থাৎ কি না সাপে কাটা। তিনি বলেন, "কিছু দিন আগে মাকড়সার কামড়ের কথা শোনা যাচ্ছিল । ট্যারেন্টুলা মাকড়সার কামড় । সেই সময় এর জন্য প্রচুর ফোন এসেছিল । মৌমাছির হুল ফোটানো নিয়েও ফোন এসেছে । প্রতিটি বিষয়ের ক্ষেত্রে পৃথক পৃথক পরামর্শ আমরা দিয়ে থাকি । সাপে কাটার ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে কী করতে হবে, এখন যেটা রেকমেন্ডেশন সেটাই বলা হয় । আগে যে দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধার বিষয়টি ছিল তা এখন আর নেই । আমরা যেটা বলে থাকি, যেখানে সাপ কামড়েছে তার নিচে একটা লম্বা লাঠি বা শক্ত কাঠ জাতীয় কোনও একটা কিছু দিয়ে তার দুটি প্রান্তকে এমনভাবে বাঁধতে হবে যেন সেই অংশটা বিশেষ নড়াচড়া করতে না পারে । আমরা বলি ইমমোবিলাইজ়েশন । এই ইমমোবিলাইজ়েশন করলেই দেখা যায় সাপের বিষ শরীরে ছড়িয়ে পড়া অনেক ধীর গতিতে হচ্ছে এবং আমরা রোগীকে বাঁচানোর জন্য অনেক সময় পেতে পারি ।"
এই ধরনের সেন্টার এ দেশে আরও দু'টি রয়েছে । একটি দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্স । অন্যটি, কেরলের অমৃতা ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্স । অধ্যাপক সোমনাথ দাস বলেন, "সব থেকে তাড়াতাড়ি আমাদের এই সেন্টার WHO-র স্বীকৃতি পেয়েছে । এক বছরের মাথায় গত শনিবার WHO-র কাছ থেকে আমরা চিঠি পেয়েছি যে আমাদের সেন্টারের কার্যকারিতা অনেক বেশি এবং প্রশংসনীয় । এই কারণে আমাদের এই সেন্টারকে, গোটা বিশ্বে এই ধরনের সেন্টারের যে ডেটাবেস রয়েছে WHO-র, তাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ।"