কলকাতা, 6 জুলাই : জয়শ্রীরাম বাঙালি সংস্কৃতিতে ছিল না । এখন তা বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়েছে । গতকাল একথা বলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ।
গতকাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে "কলকাতা আফটার ইন্ডিপেনডেন্স : আ পার্সোনাল মেমোয়ার" শীর্ষক একটি বক্তৃতা দেন অমর্ত্য সেন । সেখানে নিজের বাল্যকাল, ছাত্রজীবনের স্মৃতিচারণা করেন । শান্তিনিকেতন থেকে এসে প্রেসিডেন্সিতে পড়াশোনা, কফি হাউজ়ে অধ্যাপকদের সঙ্গে আলোচনা, মাত্র 23 বছর বয়সে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নতুন বিভাগ চালু করার অভিজ্ঞতা শোনান তিনি । নিজের থেকে বেশি বয়সি অধ্যাপকদের সঙ্গে কীভাবে কাজ করতেন সেই অভিজ্ঞতাও ভাগ করে নেন ।
বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকরা তাঁকে জয়শ্রীরাম ধ্বনি নিয়ে প্রশ্ন করেন । জবাবে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, "জয়শ্রীরাম নিয়ে যেটা বলছেন, সেটা যে প্রাচীন বাঙালির বক্তব্য, এরকম শুনিনি । এটা ইদানিং আমদানি (করা হয়েছে ) ।" কোনও রাজনৈতিক দলের নাম না করে অমর্ত্য সেন বলেন, "লোককে প্রহার করতে হলে ওটা (জয়শ্রীরাম) বলানোর চেষ্টা করা হয় । না বললে মারধর করা হয় । বাঙালি সভ্যতার সঙ্গে এর যোগ আছে বলে আমার কোনও ধারণা নেই । " পাশাপাশি, গত কয়েক বছরে কলকাতায় রামনবমী পালনের চল বেড়েছে । এনিয়ে অমর্ত্য সেন বলেন, "রামনবমী এখন শুনছি না কি কলকাতায় খুব হচ্ছে । আগে হয়েছে বলে শুনিনি । আমার চার বছরের নাতনি আছে । তাকে জিজ্ঞাসা করলাম দেবদেবীর মধ্যে তোমার কাকে পছন্দ ? সে অনেক চিন্তা করে বলল মা দুগ্গা । আমাদের দেশে মা দুর্গার যা প্রতিপত্তি তার সঙ্গে এই রামনবমীর তুলনা ঠিক করা যেতে পারে না । যুদ্ধ করার জন্য ইদানিং এগুলি বাইরে থেকে আনা হয়েছে । "
পড়শি বাংলাদেশ নিয়েও প্রশ্ন করা হয় অমর্ত্য সেনকে । উত্তরে তিনি বলেন, "একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল । 25 বছর আগে ভারতের থেকে বাংলাদেশের আয় 20 শতাংশ কম ছিল। এখন ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের 50 শতাংশ কম আয় হয়। ভারত আয়ের দিক থেকে অনেক এগিয়েছে । শুধু এটুকুই । অন্যদিকে, বাংলাদেশে লাইফ এক্সপেনটেন্সি (গড় আয়ু) তিন বছর বেড়েছে । আগে সেদেশে চাইল্ড মর্টালিটি (শিশুমৃত্যুর হার) সবথেকে বেশি ছিল । এখন তা কমেছে । ভারত ও পশ্চিমবঙ্গের থেকে বেশি ফার্টিলিটি রেট (জন্মহার) ছিল, এখন তা অনেক কম । নারীশিক্ষার হারে আগে ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গের থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ । এখন অনেক এগিয়েছে । দেখা গেছে, একটা সময় লাইফ এক্সপেক্টেন্সি, চাইল্ড মর্টালিটি, লিটারেসিতে ভারতের থেকে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ । এখন ভারতের থেকে অনেক এগিয়ে গেছে । বাংলাদেশ আমাদের সবদিক থেকে পিছনে ফেলে দিয়েছে । অদ্ভুতভাবে, হতে পারে একইভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশে আমাদের পিছনে ফেলে দিচ্ছে ।"