ETV Bharat / state

জয়শ্রীরাম ইদানিং আমদানি করা হয়েছে : অমর্ত্য সেন

বাঙালির সংস্কৃতিতে জয়শ্রীরাম ছিল না । বাইরে থেকে তা আনা হয়েছে । একথা বললেন অমর্ত্য সেন ।

অমর্ত্য সেন
author img

By

Published : Jul 6, 2019, 4:27 AM IST

Updated : Jul 6, 2019, 7:39 AM IST

কলকাতা, 6 জুলাই : জয়শ্রীরাম বাঙালি সংস্কৃতিতে ছিল না । এখন তা বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়েছে । গতকাল একথা বলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ।

গতকাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে "কলকাতা আফটার ইন্ডিপেনডেন্স : আ পার্সোনাল মেমোয়ার" শীর্ষক একটি বক্তৃতা দেন অমর্ত্য সেন । সেখানে নিজের বাল্যকাল, ছাত্রজীবনের স্মৃতিচারণা করেন । শান্তিনিকেতন থেকে এসে প্রেসিডেন্সিতে পড়াশোনা, কফি হাউজ়ে অধ্যাপকদের সঙ্গে আলোচনা, মাত্র 23 বছর বয়সে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নতুন বিভাগ চালু করার অভিজ্ঞতা শোনান তিনি । নিজের থেকে বেশি বয়সি অধ্যাপকদের সঙ্গে কীভাবে কাজ করতেন সেই অভিজ্ঞতাও ভাগ করে নেন ।

Amartya Sen
মঞ্চে অর্মত্য সেন

বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকরা তাঁকে জয়শ্রীরাম ধ্বনি নিয়ে প্রশ্ন করেন । জবাবে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, "জয়শ্রীরাম নিয়ে যেটা বলছেন, সেটা যে প্রাচীন বাঙালির বক্তব্য, এরকম শুনিনি । এটা ইদানিং আমদানি (করা হয়েছে ) ।" কোনও রাজনৈতিক দলের নাম না করে অমর্ত্য সেন বলেন, "লোককে প্রহার করতে হলে ওটা (জয়শ্রীরাম) বলানোর চেষ্টা করা হয় । না বললে মারধর করা হয় । বাঙালি সভ‍্যতার সঙ্গে এর যোগ আছে বলে আমার কোনও ধারণা নেই । " পাশাপাশি, গত কয়েক বছরে কলকাতায় রামনবমী পালনের চল বেড়েছে । এনিয়ে অমর্ত্য সেন বলেন, "রামনবমী এখন শুনছি না কি কলকাতায় খুব হচ্ছে । আগে হয়েছে বলে শুনিনি । আমার চার বছরের নাতনি আছে । তাকে জিজ্ঞাসা করলাম দেবদেবীর মধ্যে তোমার কাকে পছন্দ ? সে অনেক চিন্তা করে বলল মা দুগ্গা । আমাদের দেশে মা দুর্গার যা প্রতিপত্তি তার সঙ্গে এই রামনবমীর তুলনা ঠিক করা যেতে পারে না । যুদ্ধ করার জন্য ইদানিং এগুলি বাইরে থেকে আনা হয়েছে । "

Amartya Sen
পুষ্পস্তবক দিয়ে অমর্ত্য সেনকে স্বাগত জানানো হয় ।

পড়শি বাংলাদেশ নিয়েও প্রশ্ন করা হয় অমর্ত্য সেনকে । উত্তরে তিনি বলেন, "একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল । 25 বছর আগে ভারতের থেকে বাংলাদেশের আয় 20 শতাংশ কম ছিল। এখন ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের 50 শতাংশ কম আয় হয়। ভারত আয়ের দিক থেকে অনেক এগিয়েছে । শুধু এটুকুই । অন্যদিকে, বাংলাদেশে লাইফ এক্সপেনটেন্সি (গড় আয়ু) তিন বছর বেড়েছে । আগে সেদেশে চাইল্ড মর্টালিটি (শিশুমৃত্যুর হার) সবথেকে বেশি ছিল । এখন তা কমেছে । ভারত ও পশ্চিমবঙ্গের থেকে বেশি ফার্টিলিটি রেট (জন্মহার) ছিল, এখন তা অনেক কম । নারীশিক্ষার হারে আগে ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গের থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ । এখন অনেক এগিয়েছে । দেখা গেছে, একটা সময় লাইফ এক্সপেক্টেন্সি, চাইল্ড মর্টালিটি, লিটারেসিতে ভারতের থেকে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ । এখন ভারতের থেকে অনেক এগিয়ে গেছে । বাংলাদেশ আমাদের সবদিক থেকে পিছনে ফেলে দিয়েছে । অদ্ভুতভাবে, হতে পারে একইভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশে আমাদের পিছনে ফেলে দিচ্ছে ।"

অমর্ত্য সেনের বক্তব্য

কলকাতা, 6 জুলাই : জয়শ্রীরাম বাঙালি সংস্কৃতিতে ছিল না । এখন তা বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়েছে । গতকাল একথা বলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ।

গতকাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে "কলকাতা আফটার ইন্ডিপেনডেন্স : আ পার্সোনাল মেমোয়ার" শীর্ষক একটি বক্তৃতা দেন অমর্ত্য সেন । সেখানে নিজের বাল্যকাল, ছাত্রজীবনের স্মৃতিচারণা করেন । শান্তিনিকেতন থেকে এসে প্রেসিডেন্সিতে পড়াশোনা, কফি হাউজ়ে অধ্যাপকদের সঙ্গে আলোচনা, মাত্র 23 বছর বয়সে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নতুন বিভাগ চালু করার অভিজ্ঞতা শোনান তিনি । নিজের থেকে বেশি বয়সি অধ্যাপকদের সঙ্গে কীভাবে কাজ করতেন সেই অভিজ্ঞতাও ভাগ করে নেন ।

Amartya Sen
মঞ্চে অর্মত্য সেন

বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকরা তাঁকে জয়শ্রীরাম ধ্বনি নিয়ে প্রশ্ন করেন । জবাবে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, "জয়শ্রীরাম নিয়ে যেটা বলছেন, সেটা যে প্রাচীন বাঙালির বক্তব্য, এরকম শুনিনি । এটা ইদানিং আমদানি (করা হয়েছে ) ।" কোনও রাজনৈতিক দলের নাম না করে অমর্ত্য সেন বলেন, "লোককে প্রহার করতে হলে ওটা (জয়শ্রীরাম) বলানোর চেষ্টা করা হয় । না বললে মারধর করা হয় । বাঙালি সভ‍্যতার সঙ্গে এর যোগ আছে বলে আমার কোনও ধারণা নেই । " পাশাপাশি, গত কয়েক বছরে কলকাতায় রামনবমী পালনের চল বেড়েছে । এনিয়ে অমর্ত্য সেন বলেন, "রামনবমী এখন শুনছি না কি কলকাতায় খুব হচ্ছে । আগে হয়েছে বলে শুনিনি । আমার চার বছরের নাতনি আছে । তাকে জিজ্ঞাসা করলাম দেবদেবীর মধ্যে তোমার কাকে পছন্দ ? সে অনেক চিন্তা করে বলল মা দুগ্গা । আমাদের দেশে মা দুর্গার যা প্রতিপত্তি তার সঙ্গে এই রামনবমীর তুলনা ঠিক করা যেতে পারে না । যুদ্ধ করার জন্য ইদানিং এগুলি বাইরে থেকে আনা হয়েছে । "

Amartya Sen
পুষ্পস্তবক দিয়ে অমর্ত্য সেনকে স্বাগত জানানো হয় ।

পড়শি বাংলাদেশ নিয়েও প্রশ্ন করা হয় অমর্ত্য সেনকে । উত্তরে তিনি বলেন, "একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল । 25 বছর আগে ভারতের থেকে বাংলাদেশের আয় 20 শতাংশ কম ছিল। এখন ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের 50 শতাংশ কম আয় হয়। ভারত আয়ের দিক থেকে অনেক এগিয়েছে । শুধু এটুকুই । অন্যদিকে, বাংলাদেশে লাইফ এক্সপেনটেন্সি (গড় আয়ু) তিন বছর বেড়েছে । আগে সেদেশে চাইল্ড মর্টালিটি (শিশুমৃত্যুর হার) সবথেকে বেশি ছিল । এখন তা কমেছে । ভারত ও পশ্চিমবঙ্গের থেকে বেশি ফার্টিলিটি রেট (জন্মহার) ছিল, এখন তা অনেক কম । নারীশিক্ষার হারে আগে ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গের থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ । এখন অনেক এগিয়েছে । দেখা গেছে, একটা সময় লাইফ এক্সপেক্টেন্সি, চাইল্ড মর্টালিটি, লিটারেসিতে ভারতের থেকে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ । এখন ভারতের থেকে অনেক এগিয়ে গেছে । বাংলাদেশ আমাদের সবদিক থেকে পিছনে ফেলে দিয়েছে । অদ্ভুতভাবে, হতে পারে একইভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশে আমাদের পিছনে ফেলে দিচ্ছে ।"

অমর্ত্য সেনের বক্তব্য
Intro:কলকাতা, 5 জুলাই: সাম্প্রতিককালে একদিকে কখনও জয় শ্রীরাম বলায়, কখনও না বলায় একাধিক হিংসা, মারধরের ঘটনা ঘটেছে। আজ এর তীব্র সমালোচনা করেন অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তাঁর মতে, লোককে মারধর করার জন্য তাকে দিয়ে জয় শ্রীরাম বলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে‌। এটা একটা ইদানিং আমদানি। আজ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি লেকচার দিতে এসে এই ভাষাতেই জয় শ্রীরাম স্লোগান নিয়ে বিরোধিতা করেন অমর্ত্য সেন।


Body:জয় শ্রীরাম স্লোগান নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অমর্ত্য সেন বলেন, "জয় শ্রীরাম যেটা বলছেন, সেটা প্রাচীন বাঙালির বক্তব্যে শুনিনি। এটা ইদানিং আমদানি। ওটা লোককে প্রহার করতে হলে তাকে দিয়ে বলানোর চেষ্টা করা হয়। না বললে মারধর করা হয়। এটাকে আমার চেনা বলেই মনে হচ্ছে। আমার ধারণা নেই, বাঙালি সভ‍্যতার সঙ্গে এর যোগ আছে। যেমন, রামনবমী। রামনবমী এখন শুনছি নাকি কলকাতায় খুব হচ্ছে। আগে হতে তো শুনিনি। আমি আমার চার বছরের নাতনি আছে। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তোমার কাকে পছন্দ এতোর মধ্যে? সে কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল মা দুগ্গা। আমাদের দেশে মা দুর্গার যা প্রতিপত্তি তার সঙ্গে ঠিক এই রামনবমীর তুলনা করা যেতে পারে না। এগুলো হয়েছে ইদানিং ক্ষেত্রে যুদ্ধ করার জন্য। এই নয় যে বাংলাদেশে কখনও রায়ট হয়নি। কিন্তু, এর মধ্যে যে একটা জোর গলায় পার্থক্য করার চেষ্টা সেটা তো আগে কখনও হয়নি।"

পশ্চিমবঙ্গে আনুমানিক 70 শতাংশ হিন্দু ও 30 শতাংশ মুসলিম রয়েছে। অন‍্যদিকে, বাংলাদেশে শুধুমাত্র 10 শতাংশ হিন্দু। এটার পিছনে কী কারণ রয়েছে বলে আপনি মনে করেন? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ‍্যাপকের এই প্রশ্নের উত্তরে অমর্ত্য সেন প্রথমেই বলেন, "আই অ্যাম নট আ ডেমোগ্রাফার।" তারপরে তিনি বলেন, "আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি এখানকার 30 শতাংশ মুসলিম নিয়ে এবং 70 শতাংশ হিন্দু নিয়েও আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি।" বাংলাদেশ সম্পর্কিত আর একটি প্রশ্নের উত্তরে অমর্ত্য সেন বলেন, "একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশ আমাদের থেকে অনেক পিছনে ছিল বিভিন্ন দিক থেকে। 25 বছর আগে ভারতের থেকে 20 শতাংশ কম আয় ছিল। এখন 50 শতাংশ কম আয় হয়। ভারত আয়ের দিক থেকে অনেক এগিয়েছে। শুধু এটাই। বাংলাদেশে 3 বছর কম লাইফ এক্সপেক্টেন্সি ছিল, এখন তিন বছর বেড়েছে। সব থেকে বেশি চাইল্ড মোর্টালিটি ছিল, এখন কমেছে। ভারত ও পশ্চিমবঙ্গের থেকে বেশি ফার্টিলিটি রেট ছিল, এখন অনেক কম। ওখানকার মেয়েদের শিক্ষা ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গের থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল, এখন অনেক এগিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, লাইফ এক্সপেক্টেন্সি, চাইল্ড মোর্টালিটি, লিটারেসিতে ভারতের থেকে পিছিয়ে ছিল একটা সময়ে। এখন ভারতের থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ আমাদের সব দিক থেকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। অদ্ভুতভাবে, হতে পারে একইভাবে সেক‍্যুলারিজমেও আমাদের পিছনে ফেলে দিচ্ছে।"

আজ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় 'কলকাতা আফ্টার ইন্ডিপেনডেন্স: আ পার্সোনাল মেমোয়ার'-এর উপর লেকচার দিতে আসেন প্রখ‍্যাত অর্থনীতিবীদ অমর্ত্য সেন। বক্তৃতা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি স্মৃতিচারণা করেন। শান্তিনিকেতন থেকে এসে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা, কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসে অধ্যাপকদের সঙ্গে আলোচনা, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র 23 বছর বয়সে একটি নতুন বিভাগ চালু করার অভিজ্ঞতার খুঁটিনাটি নিয়ে এদিন বলেন তিনি। 1955 সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্যের আমন্ত্রণে মাত্র 23 বছর বয়সে অর্থনীতি বিভাগ চালু করেছিলেন অমর্ত্য সেন‌। এত কম বয়সে তাঁর থেকে অনেক বেশি বয়সী অধ‍্যাপকদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথাও মজার ছলে তুলে ধরেন তিনি।


Conclusion:
Last Updated : Jul 6, 2019, 7:39 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.