ETV Bharat / state

মেয়েকে বাঁচাতে কিডনি বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম, দাবি মায়ের

"সবাই বলে ভেলোরে ভালো চিকিৎসা হয়। আমার একটি কিডনি বিক্রি করে মেয়েকে ভেলোরে নিয়ে গিয়ে ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব পরীক্ষা করে সুস্থ করার কথা ভেবেছিলাম। কিডনি বিক্রির জন্য খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম।" এই দাবি করেন অপরূপার মা অর্পিতা বিশ্বাস।

অপরূপা বিশ্বাস
author img

By

Published : Apr 2, 2019, 10:45 AM IST

Updated : Apr 2, 2019, 2:09 PM IST

কলকাতা, 2 এপ্রিল: NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন কিশোরী মানসিক রোগে আক্রান্ত। তার চিকিৎসার প্রয়োজন। বাবা-মা আর্থিক কারণে সেই সময় তার চিকিৎসা করাতে পারেননি। কিন্তু দিন দিন কিশোরীর জেদ বাড়ছিল। বাড়ি থেকে টাকা চুরি করতে শুরু করেছিল সে। মেয়েকে সুস্থ করতে মা নিজের কিডনি পর্যন্ত বেচে ভেলোরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। গত 25 মার্চ স্কুলে সরস্বতী পুজোর খাওয়া দাওয়া ছিল। মা-বাবা নিষেধ করার পরও স্কুলে গিয়েছিল ওই কিশোরী। স্কুলেই অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। তাকে বাড়ি নিয়ে এলে দেখা যায়, তার নাক থেকে আঠা জাতীয় কিছু গড়িয়ে পড়ছে। স্কুলের ব্যাগ থেকে ডেনড্রাইটের প্যাকেটও পাওয়া যায়। অনুমান কিশোরী ডেনড্রাইটের নেশা করত। গত 26 মার্চ ওই কিশোরীকে অসুস্থ অবস্থায় শক্তিনগর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

কিশোরীর নাম অপরূপা বিশ্বাস। বাড়ি নদিয়ায়। গতবছর 31 জুলাই NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ENT বিভাগের চিকিৎসকরা প্রথম দফায় ওই কিশোরীর গলা থেকে 9টি সুচ বের করেছিলেন। কিন্তু X-RAY রিপোর্টে 10টি সুচ দেখা গিয়েছিল। এরপর 7 অগাস্ট দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার করে 10 নম্বর সুচটি বের করেছিলেন। তখনই অবশ্য চিকিৎসকরা অপরূপার বাবা-মাকে জানিয়েছিলেন অপরূপার মানসিক সমস্যার কথা। সেইসঙ্গে এই মানসিক সমস্যার সঠিক সময় চিকিৎসা যদি না হয় তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন চিকিৎসকরা। আর্থিক সমস্যার কারণে সেই সময় NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগে ওই কিশোরীর চিকিৎসা করাতে পারেননি তার বাবা-মা।


মনোজ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসকদের একটি দল ওই কিশোরীর গলা থেকে 10টি সুচ বের করেছিলেন। তিনি কিশোরীর মৃত্যুর খবর পেয়ে বলেন, "অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমরা মেজর অপারেশন করেছিলাম। অপারেশনের পরে সুস্থও হয়ে গিয়েছিল সে। কিন্তু অন্য যে সমস্যাগুলি ছিল, তার জন্য ওই কিশোরীর বাড়ির লোক সহযোগিতা করলেন না। মানসিক সমস্যার চিকিৎসার জন্য ওই কিশোরীকে যাতে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তার জন্য তার মা-বাবাকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু কোনও সমস্যার কারণে, রোগীকে নিয়ে আসেননি তাঁরা।" এই বিষয়ে কিশোরীর মা অর্পিতা বিশ্বাসের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "আর্থিক সসস্যার কারণে আমরা আর কলকাতায় গিয়ে সেই সময় চিকিৎসা করাতে পারিনি। তবে তিনি এটাও স্বীকার করেন যে, তার মেয়ের মানসিক চিকিৎসা করানো যে কতটা প্রয়োজন তা তিনি বুঝতেও পারেননি। তিনি আরও বলেন,"সবাই বলে ভেলোরে ভালো চিকিৎসা হয়। আমার একটি কিডনি বিক্রি করে মেয়েকে ভেলোরে নিয়ে গিয়ে ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব পরীক্ষা করে সুস্থ করার কথা ভেবেছিলাম। কিডনি বিক্রির জন্য খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম। NRS-এর চিকিৎসক বলেছিলেন আমি যেন বেআইনি এই কাজ না করি। এর পরে আমি আর এগোয়নি।"

কিন্তু কী করে 10টি সুচ কিশোরীর গলায় পৌঁছালো?

10টি সুচ কীভাবে ওই কিশোরীর গলায় আটকে গিয়েছিল তা অবশ্য জানতে পারেননি চিকিৎসকরা। তবে সুচগুলির অবস্থান দেখে চিকিৎসকদের অবশ্য অনুমান, চামড়া ফুটো করে বাইরে থেকেই ওগুলো ঢোকানো হয়েছিল। এই বিষয়ে কিশোরীর মা অর্পিতা এবং বাবা অধীর বিশ্বাসও স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাননি।

তবে এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসে রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশন। ওই কিশোরীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছিল কমিশন। সোশাল অডিটের ব্যবস্থাও করেছিল।রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রসূন ভৌমিক বলেন, "সোশাল অডিটে যে অভিযোগগুলি পাওয়া গিয়েছিল, সে সব খতিয়ে দেখা হয়েছে। কেন মৃত্যু হল, এই বিষয়ে রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন‌ প্রশাসনের কাছে জানতে চাইবে।"

কোন ধরনের মানসিক সমস্যা ছিল অপরূপার?

NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের প্রধান আশিস মুখোপাধ্যায়কে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

হঠাৎ কেন আবার অসুস্থ হয়ে পড়ল অপরূপা?

অর্পিতা বিশ্বাস বলেন, "মেয়ের উচ্চ রক্তচাপ ছিল। ওষুধ খেত। শ্বাসকষ্টও হত। হার্টের অবস্থাও তেমন ভালো ছিল না। দিনদিন তার জেদ বেড়ে যাচ্ছিল। কোনও কথা শুনত না। সোমবার 25 মার্চ স্কুলে সরস্বতী পুজোর খাওয়া-দাওয়া ছিল। স্কুলে যেতে বারণ করেছিলাম। আমাদের কথা শোনেনি। কিন্তু স্কুলে পৌঁছানোর ঘণ্টা দেড়েক পর স্কুল থেকে ফোন আসে। স্কুলে গিয়ে দেখি বেঞ্চে শুয়ে রয়েছে। খুব ঘামছে। বাড়িতে নিয়ে এসে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খাওয়াই। স্নান করানোর সময় দেখি ওর নাক দিয়ে আঠার মতো কিছু বের হচ্ছে। পরে স্কুলব্যাগ থেকে একটি আঠার প্যাকেট পাই। ডেনড্রাইট। কিন্তু স্কুলব্যাগে ডেনড্রাইট কেন জানতে চাইলে কোনও উত্তর দেয়নি ও।" পরে অবশ্য তিনি প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানতে পারেন, এই আঠা নেশা করার জন্য ব্যবহার করা হয়। মঙ্গলবারও স্নানের সময় ওই কিশোরীর নাক দিয়ে আঠা গড়িয়ে পড়তে দেখেন তিনি। অর্পিতা বিশ্বাস বলেন, "আমি জানতে চাই কোনও সমস্যা হচ্ছে? ও বলে কোনও সমস্যা হচ্ছে না, একটু ঘুমোলে ঠিক হয়ে যাবে। দুপুরেও প্রেসার মাপি। অবস্থা ভালো মনে হচ্ছে না বুঝে শক্তিনগর হাসপাতালে নিয়ে যাই।" হাসপাতাল পৌঁছানোর পর চিকিৎসকরা জানান ওই কিশোরী আর বেঁচে নেই। কিন্তু মেয়ে যে বেঁচে নেই বিষয়টা প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি অর্পিতা। তাই স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে তাঁরা নিয়ে যান ওই কিশোরীকে। কিন্তু তিনি না থাকায় ফের শক্তিনগর হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ওই কিশোরীর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

কেন মৃত্যু হল? কী বললেন চিকিৎসকরা?

অর্পিতা বিশ্বাস বলেন, "কেন মৃত্যু হল, চিকিৎসকরা কিছু বলেননি।"

অর্পিতা আরও বলেন, "বছর খানেক আগে মেয়ের কানে ব্যথা হয়েছিল। ওষুধে ব্যথা কমছিল না। কান পরিষ্কার করতে গিয়ে চোখে পড়ে সাইকেলের চাকায় থাকা ছোটো বল তার কানে ঢুকে রয়েছে। কানের কাছে চুম্বক ধরার পরে বেরিয়ে আসে বলটি।চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়িতে পরিমাণ মতো খাবার দিতাম। দিন দিন জেদ বেড়ে যাচ্ছিল। ক্লাস নাইনে ওঠার পরে বলল নতুন বই ছাড়া পড়বে না। ধার- দেনা করে নতুন বই কিনে দেওয়া হয়।"

কলকাতা, 2 এপ্রিল: NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন কিশোরী মানসিক রোগে আক্রান্ত। তার চিকিৎসার প্রয়োজন। বাবা-মা আর্থিক কারণে সেই সময় তার চিকিৎসা করাতে পারেননি। কিন্তু দিন দিন কিশোরীর জেদ বাড়ছিল। বাড়ি থেকে টাকা চুরি করতে শুরু করেছিল সে। মেয়েকে সুস্থ করতে মা নিজের কিডনি পর্যন্ত বেচে ভেলোরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। গত 25 মার্চ স্কুলে সরস্বতী পুজোর খাওয়া দাওয়া ছিল। মা-বাবা নিষেধ করার পরও স্কুলে গিয়েছিল ওই কিশোরী। স্কুলেই অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। তাকে বাড়ি নিয়ে এলে দেখা যায়, তার নাক থেকে আঠা জাতীয় কিছু গড়িয়ে পড়ছে। স্কুলের ব্যাগ থেকে ডেনড্রাইটের প্যাকেটও পাওয়া যায়। অনুমান কিশোরী ডেনড্রাইটের নেশা করত। গত 26 মার্চ ওই কিশোরীকে অসুস্থ অবস্থায় শক্তিনগর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

কিশোরীর নাম অপরূপা বিশ্বাস। বাড়ি নদিয়ায়। গতবছর 31 জুলাই NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ENT বিভাগের চিকিৎসকরা প্রথম দফায় ওই কিশোরীর গলা থেকে 9টি সুচ বের করেছিলেন। কিন্তু X-RAY রিপোর্টে 10টি সুচ দেখা গিয়েছিল। এরপর 7 অগাস্ট দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার করে 10 নম্বর সুচটি বের করেছিলেন। তখনই অবশ্য চিকিৎসকরা অপরূপার বাবা-মাকে জানিয়েছিলেন অপরূপার মানসিক সমস্যার কথা। সেইসঙ্গে এই মানসিক সমস্যার সঠিক সময় চিকিৎসা যদি না হয় তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন চিকিৎসকরা। আর্থিক সমস্যার কারণে সেই সময় NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগে ওই কিশোরীর চিকিৎসা করাতে পারেননি তার বাবা-মা।


মনোজ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসকদের একটি দল ওই কিশোরীর গলা থেকে 10টি সুচ বের করেছিলেন। তিনি কিশোরীর মৃত্যুর খবর পেয়ে বলেন, "অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমরা মেজর অপারেশন করেছিলাম। অপারেশনের পরে সুস্থও হয়ে গিয়েছিল সে। কিন্তু অন্য যে সমস্যাগুলি ছিল, তার জন্য ওই কিশোরীর বাড়ির লোক সহযোগিতা করলেন না। মানসিক সমস্যার চিকিৎসার জন্য ওই কিশোরীকে যাতে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তার জন্য তার মা-বাবাকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু কোনও সমস্যার কারণে, রোগীকে নিয়ে আসেননি তাঁরা।" এই বিষয়ে কিশোরীর মা অর্পিতা বিশ্বাসের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "আর্থিক সসস্যার কারণে আমরা আর কলকাতায় গিয়ে সেই সময় চিকিৎসা করাতে পারিনি। তবে তিনি এটাও স্বীকার করেন যে, তার মেয়ের মানসিক চিকিৎসা করানো যে কতটা প্রয়োজন তা তিনি বুঝতেও পারেননি। তিনি আরও বলেন,"সবাই বলে ভেলোরে ভালো চিকিৎসা হয়। আমার একটি কিডনি বিক্রি করে মেয়েকে ভেলোরে নিয়ে গিয়ে ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব পরীক্ষা করে সুস্থ করার কথা ভেবেছিলাম। কিডনি বিক্রির জন্য খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম। NRS-এর চিকিৎসক বলেছিলেন আমি যেন বেআইনি এই কাজ না করি। এর পরে আমি আর এগোয়নি।"

কিন্তু কী করে 10টি সুচ কিশোরীর গলায় পৌঁছালো?

10টি সুচ কীভাবে ওই কিশোরীর গলায় আটকে গিয়েছিল তা অবশ্য জানতে পারেননি চিকিৎসকরা। তবে সুচগুলির অবস্থান দেখে চিকিৎসকদের অবশ্য অনুমান, চামড়া ফুটো করে বাইরে থেকেই ওগুলো ঢোকানো হয়েছিল। এই বিষয়ে কিশোরীর মা অর্পিতা এবং বাবা অধীর বিশ্বাসও স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাননি।

তবে এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসে রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশন। ওই কিশোরীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছিল কমিশন। সোশাল অডিটের ব্যবস্থাও করেছিল।রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রসূন ভৌমিক বলেন, "সোশাল অডিটে যে অভিযোগগুলি পাওয়া গিয়েছিল, সে সব খতিয়ে দেখা হয়েছে। কেন মৃত্যু হল, এই বিষয়ে রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন‌ প্রশাসনের কাছে জানতে চাইবে।"

কোন ধরনের মানসিক সমস্যা ছিল অপরূপার?

NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের প্রধান আশিস মুখোপাধ্যায়কে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

হঠাৎ কেন আবার অসুস্থ হয়ে পড়ল অপরূপা?

অর্পিতা বিশ্বাস বলেন, "মেয়ের উচ্চ রক্তচাপ ছিল। ওষুধ খেত। শ্বাসকষ্টও হত। হার্টের অবস্থাও তেমন ভালো ছিল না। দিনদিন তার জেদ বেড়ে যাচ্ছিল। কোনও কথা শুনত না। সোমবার 25 মার্চ স্কুলে সরস্বতী পুজোর খাওয়া-দাওয়া ছিল। স্কুলে যেতে বারণ করেছিলাম। আমাদের কথা শোনেনি। কিন্তু স্কুলে পৌঁছানোর ঘণ্টা দেড়েক পর স্কুল থেকে ফোন আসে। স্কুলে গিয়ে দেখি বেঞ্চে শুয়ে রয়েছে। খুব ঘামছে। বাড়িতে নিয়ে এসে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খাওয়াই। স্নান করানোর সময় দেখি ওর নাক দিয়ে আঠার মতো কিছু বের হচ্ছে। পরে স্কুলব্যাগ থেকে একটি আঠার প্যাকেট পাই। ডেনড্রাইট। কিন্তু স্কুলব্যাগে ডেনড্রাইট কেন জানতে চাইলে কোনও উত্তর দেয়নি ও।" পরে অবশ্য তিনি প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানতে পারেন, এই আঠা নেশা করার জন্য ব্যবহার করা হয়। মঙ্গলবারও স্নানের সময় ওই কিশোরীর নাক দিয়ে আঠা গড়িয়ে পড়তে দেখেন তিনি। অর্পিতা বিশ্বাস বলেন, "আমি জানতে চাই কোনও সমস্যা হচ্ছে? ও বলে কোনও সমস্যা হচ্ছে না, একটু ঘুমোলে ঠিক হয়ে যাবে। দুপুরেও প্রেসার মাপি। অবস্থা ভালো মনে হচ্ছে না বুঝে শক্তিনগর হাসপাতালে নিয়ে যাই।" হাসপাতাল পৌঁছানোর পর চিকিৎসকরা জানান ওই কিশোরী আর বেঁচে নেই। কিন্তু মেয়ে যে বেঁচে নেই বিষয়টা প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি অর্পিতা। তাই স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে তাঁরা নিয়ে যান ওই কিশোরীকে। কিন্তু তিনি না থাকায় ফের শক্তিনগর হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ওই কিশোরীর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

কেন মৃত্যু হল? কী বললেন চিকিৎসকরা?

অর্পিতা বিশ্বাস বলেন, "কেন মৃত্যু হল, চিকিৎসকরা কিছু বলেননি।"

অর্পিতা আরও বলেন, "বছর খানেক আগে মেয়ের কানে ব্যথা হয়েছিল। ওষুধে ব্যথা কমছিল না। কান পরিষ্কার করতে গিয়ে চোখে পড়ে সাইকেলের চাকায় থাকা ছোটো বল তার কানে ঢুকে রয়েছে। কানের কাছে চুম্বক ধরার পরে বেরিয়ে আসে বলটি।চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়িতে পরিমাণ মতো খাবার দিতাম। দিন দিন জেদ বেড়ে যাচ্ছিল। ক্লাস নাইনে ওঠার পরে বলল নতুন বই ছাড়া পড়বে না। ধার- দেনা করে নতুন বই কিনে দেওয়া হয়।"

Intro:কলকাতা, ১ এপ্রিল: ভেলোরে গিয়ে মেয়েকে সুস্থ করে তোলার জন্য নিজের কিডনি বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন মা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য চিকিৎসকের পরামর্শে বেআইনি এই কাজ থেকে বিরত থাকেন তিনি। চিকিৎসকরা অবশ্য, মানসিক সমস্যার জন্য মেয়ের চিকিৎসার কথা বলেছিলেন। তবে, আর্থিক সংকটে কলকাতায় এসে চিকিৎসা যেমন শুরু করতে পারেননি, তেমনই এই চিকিৎসার গুরুত্ব তাঁরা বুঝতেও পারেননি বলে জানিয়েছেন মা। এদিকে, সম্প্রতি মেয়ের জেদ বেড়ে যাচ্ছিল। ঘর থেকে টাকা চুরি করে খরচ করে ফেলত। কিন্তু কীভাবে খরচ করত সেই টাকা, তা স্পষ্ট নয় মা বাবার কাছে। ডেনড্রাইটের নেশায় বুঁদ হয়ে গিয়েছিল কি না মেয়ে, তাও স্পষ্ট হয়নি তাঁদের কাছে। এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ে মেয়ে। শেষ রক্ষা আর হয়নি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয়।
Body:মৃত এই মেয়ের নাম অপরূপা বিশ্বাস। নদীয়ার কোতোয়ালি থানা এলাকার বাসিন্দা এই কিশোরীর গলা থেকে গত বছরের ৩১ জুলাই NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ENT বিভাগের চিকিৎসকরা নটি সূচ বের করেছিলেন। এক্সরে রিপোর্টে ১০টি সূচ দেখা গিয়েছিল। গত বছরের ৭ অগাস্ট দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার করে ১০ নম্বর সূচটি বের করতে সমর্থ হয়েছিলেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা অবশ্য তখনই জানিয়েছিলেন, মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত এই কিশোরী। এই সমস্যার চিকিৎসা না হলে ভবিষ্যতের জন্য আশঙ্কাও করেছিলেন তাঁরা। প্রাথমিকভাবে মানসিক সমস্যার চিকিৎসা শুরু হয়েছিল। কিন্তু NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগে এই কিশোরীর চিকিৎসা আর শুরু করা সম্ভব হয়নি।

মনোজ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি দল এই কিশোরীর গলা থেকে ১০টি সূচ বের করেছিল। এই কিশোরীর মৃত্যুর বিষয়ে মনোজ মুখোপাধ্যায় বলেন, "অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমরা মেজর অপারেশন করেছিলাম। অপারেশনের পরে সুস্থ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অন্য যে সমস্যাগুলি ছিল, সে সবের জন্য রোগীর বাড়ির লোক সহযোগিতা করলেন না। মানসিক সমস্যার চিকিৎসার জন্য রোগীকে যাতে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তার জন্য রোগীর মা- বাবাকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু কোনও সমস্যার কারণে, রোগীকে নিয়ে আসেননি তাঁরা।" এই কিশোরীর মা অর্পিতা বিশ্বাস বলেন, "আর্থিক সংকটের কারণে আমরা আর কলকাতায় গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারিনি।"

একই সঙ্গে তিনি বলেন, "আমরা ঠিক বুঝতে পারিনি।" তবে, মেয়েকে অবশ্য সুস্থ করে তুলতে চেয়েছিলেন তাঁরা। অর্পিতা বিশ্বাস বলেন, "সবাই বলে ভেলোরে ভালো চিকিৎসা হয়। আমার একটি কিডনি বিক্রি করে মেয়েকে ভেলোরে নিয়ে গিয়ে ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব পরীক্ষা করে সুস্থ করার কথা ভেবেছিলাম। কিডনি বিক্রির জন্য খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম। NRS-এর চিকিৎসক বলেছিলেন আমি যেন বেআইনি এই কাজ না করি। এর পরে আমি আর এগোয়নি।" কোন ধরনের মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ছিল এই কিশোরী? এই বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হয় NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের প্রধান আশিস মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তবে, এই বিষয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

যদিও, সূচগুলি বের করার পরে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, এই কিশোরী পার্সোনাল ডিসঅর্ডারে ভুগছে। এ দিকে, কীভাবে ১০টি সূচ গেঁথে গিয়েছিল এই কিশোরীর গলায়, তা জানতে পারেননি চিকিৎসকরা। এই কিশোরীর মা অর্পিতা এবং বাবা অধীর বিশ্বাসও স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাননি। সূচগুলির অবস্থান দেখে চিকিৎসকরা অবশ্য বলেছিলেন, চামড়া ফুটো করে বাইরে থেকে এগুলি ঢোকানো হয়েছে। এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসে রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশন। কীভাবে এতগুলি সূচ গলায় বিঁধে গেল, এর পিছনে কোন রহস্য রয়েছে, এসব বিষয়ে স্পষ্ট হতে এবং এই কিশোরীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছিল কমিশন। সোশ্যাল অডিটের ব্যবস্থাও করেছিল।

এই রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের এক সদস্য প্রসূন ভৌমিক বলেন, "সোশ্যাল অডিটে যে অভিযোগগুলি পাওয়া গিয়েছিল, সে সব খতিয়ে দেখা হয়েছে। কেন মৃত্যু হল, এই বিষয়ে রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন‌ প্রশাসনের কাছে জানতে চাইবে।" এই কিশোরীর একটি ভাই ছিল। বছর ১১ আগে বয়স যখন প্রায় চার বছর, সে সময় স্ট্রোকে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছিলেন এই কিশোরীর মা-বাবা। পরে, মেয়ের আবদারের ভিত্তিতে তিন দিনের এক শিশুকন্যাকে তাঁরা দত্তক নিয়েছিলেন। যদিও এই দত্তক গ্রহণ আইনি উপায় হয়েছিল কি না, সেই বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু, আড়াই বছর পরে প্রবল জ্বরেএই শিশু কন্যার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন অর্পিতা বিশ্বাস।

আচমকা কেন অসুস্থ হয়ে পড়ল এই কিশোরী? অর্পিতা বিশ্বাস বলেন, "মেয়ের উচ্চ রক্তচাপ ছিল। এর জন্য ওষুধ খেত। শ্বাসকষ্ট হত। হার্টের অবস্থা ভাল ছিল না।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "মেয়ের জেদ বেড়ে যাচ্ছিল। কথা শুনতো না।সরস্বতী পুজোর জন্য খাওয়া
-দাওয়ার অনুষ্ঠান ছিল গত সোমবার, ২৫ মার্চ। বাইরের খাবার খাওয়া বারণ। এই জন্য যেতে মানা করেছিলেন। কিন্তু মা বাবার কথা শোনেনি। স্কুলে পৌঁছনোর ঘন্টা দেরেক পরে স্কুল থেকে ফোন আসে ও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। স্কুলে গিয়ে দেখি ও প্রচণ্ড ঘামছে। বেঞ্চে ওকে শুইয়ে রাখা হয়েছে। বেহুঁশ মতো হয়ে রয়েছে।"

এর পরে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এই কিশোরীর মা-বাবা মনে করেছিলেন, জোরে সাইকেল চালিয়ে হয়তো স্কুলে গিয়েছিল, সেই কারণে রক্তচাপ বেড়ে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে রক্তচাপ মেপে দেখা হয়। দেখা যায়, রক্তচাপ আরও বেড়ে গিয়েছে। সম্প্রতি স্নান, দাঁত মাজা, মুখ ধোয়া, শৌচকর্ম, এ সব করতে চাইত না এই কিশোরী। এ সব বকাঝকা করে করাতে হত। গত সোমবার বাড়িতে ফেরার পরে জোর করে স্নান করিয়ে দেওয়া হয়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ দেওয়া হয়। এ কথা জানিয়ে অর্পিতা বিশ্বাস বলেন, "মেয়ে কথা বলতে পারছিল। কিন্তু রক্তচাপ বেশি হওয়ার কারণে উঠতে পারছিল না।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "যখন স্নান করানো হচ্ছিল তখন দেখি ওর নাক দিয়ে আঠার মতো কিছু বের হচ্ছে। আঠা কেন, জানতে চাইলে ও বলে সর্দি। সত্যি কথা কিছুতেই বলেনি।"

কোন ধরনের আঠা, তা জানার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন এই কিশোরীর মা-বাবা। অর্পিতা বিশ্বাস বলেন, "ঘুমোতে চাইছিল অপরূপা। খুব জলও খেতে চাইছিল। বোতলে ভরে জল খেতে চেয়েছিল। স্কুলের ব্যাগ থেকে জলের বোতল বের করতে গিয়েই দেখি আঠার প্যাকেট। দেখা যায় সেটি ডেনড্রাইট। এই ডেনড্রাইট কেন স্কুলব্যাগে রয়েছে, জানতে চাইলেও তা বলেনি ও।" প্রতিবেশীদের কাছ থেকে তাঁরা জানতে পারেন, এই আঠা নেশার বস্তু হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সুস্থ হলে এই বিষয়ে জানবেন এমন মনে করেছিলেন তাঁরা। পরের দিন মঙ্গলবার সকালে টিফিন করেছে অপরূপা। কিছু পরে ডাল-ভাত খেয়েছে। মঙ্গলবারও স্নান করানোর সময় দেখা যায় ওর নাক দিয়ে আঠা গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না জানতে চাওয়া হয় অপরূপা বলে, সমস্যা হচ্ছে না। ও একটুও ঘুমোলে ঠিক হয়ে যাবে।

অর্পিতা বিশ্বাস বলেন, "দুপুরের পরে প্রেসার মাপা হয়। দেখা যায় প্রেসার হাই রয়েছে।" এ দিকে, ঘুমিয়ে থাকতে চাইছে এই কিশোরী। অবস্থা ভালো মনে হচ্ছে না, এমন ভাবনা থেকে তখন শক্তিনগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা বলেন এই কিশোরী আর বেঁচে নেই। অর্পিতা বিশ্বাস বলেন, "ও বেঁচে নেই, এটা বিশ্বাস করতে পারিনি। মাঝে মধ্যে ও অজ্ঞান হয়ে যেত। ২-১ দিন ঘোরের মধ্যে থাকত।" এর পরে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান তাঁরা।সেখানে তখন চিকিৎসক ছিলেন না। তবে, সেখান থেকে অপরূপাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। ফলে, ফের শক্তিনগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অর্পিতা বিশ্বাস বলেন, "হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেন, আগেই তো তারা জানিয়েছিলেন ও আর বেঁচে নেই। এর পরে পোস্ট মর্টেম হয়।" কেন মৃত্যু হল? কী বললেন চিকিৎসকরা? তিনি বলেন, "কেন মৃত্যু হল, চিকিৎসকরা কিছু বলেননি।"
Conclusion:সামান্য একটু সর্দি, কাশি, জ্বরেই কাহিল হয়ে পড়তো এই কিশোরী। গত মঙ্গলবার যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন ওর কোনও হুঁশ ছিল না। অর্পিতা বিশ্বাস বলেন, "আর্থিক সংকটের কারণে NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ওকে নিয়ে যেতে পারিনি।" একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, বছর খানেক আগের ঘটনা। অপরূপা বলে ওর কানে ব্যথা করছে‌। তাঁরা করেছিলাম, কানে নোংরা জমেছে। নোংরা বের হওয়ার জন্য হোমিওপ্যাথি ওষুধ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও কমছিল না। তখন কানের ভিতরের অংশ ভালো করে দেখার সময় চোখে পড়ে, সাইকেলের চাকায় থাকা ছোট একটি বল রয়েছে সেখানে। শেষ পর্যন্ত, কানের কাছে চুম্বক ধরার পরে বেরিয়ে আসে বলটি।

অর্পিতা বিশ্বাস বলেন, "চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়িতে পরিমাণ মতো খাবার দেওয়া হতো। জেদ বেড়ে গিয়েছিল। ক্লাস নাইনে ওঠার পরে বলল নতুন বই ছাড়া পড়বে না। ধার দেনা করে নতুন বই কিনে দেওয়া হল। তার পরেও মেয়ে এমন করল।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "ভাই বোন অথবা কুকুর এনে দেওয়ার কথা বলেছিল ও। আমাদের সামর্থ্য নেই। ওর শখ পূরণ করতে পারলাম না।"
_____

ছবি: মৃত কিশোরীর ছবি
wb_kol_8002_1april_aparupa_nrs_death_7203421


মৃত কিশোরীর মায়ের বক্তব্যের ফোন রেকর্ড:
wb_kol_8003_1april_aparupa_nrs_death_7203421
___
Last Updated : Apr 2, 2019, 2:09 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.