ETV Bharat / state

সেরে উঠছেন রোগিণী, ক্যানসার চিকিৎসায় PIPAC পদ্ধতির প্রথম প্রয়োগ কলকাতায়

পেটের মধ্যে সরাসরি কেমোথেরাপির মাধ্যমে সেরে উঠছেন রোগিণী। এভাবে কেমোথেরাপি দেওয়ার পদ্ধতিকে বলা হয় PIPAC (প্রেসারাইজ়ড ইন্ট্রাপেরিটোনিয়াল এরোসোল কেমোথেরাপি)। উত্তর এবং পূর্ব ভারতের মধ্যে কলকাতায় এই প্রথম ক্যানসারের চিকিৎসায় এই PIPAC পদ্ধতির ব্যবহার হল নয়াবাদের বেসরকারি একটি হাসপাতালে।

চিকিৎসা চলছে মহিলার
author img

By

Published : Apr 17, 2019, 6:57 AM IST

কলকাতা, 17 এপ্রিল : ওভারিতে ক্যানসার। সেখান থেকে এই ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ে পেটের পর্দায়। সব ধরনের চিকিৎসা হয়েছে। কিন্তু, চিকিৎসায় সেভাবে সাড়া মিলছিল না। এদিকে ক্যানসার পৌঁছে গিয়েছে ফোর্থ স্টেজে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, রোগিণীর আয়ু মাত্র এক-দেড় মাস ছিল। শেষপর্যন্ত, পেটের মধ্যে সরাসরি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। যার জেরে সেরে উঠছেন রোগিণী। এভাবে কেমোথেরাপি দেওয়ার পদ্ধতিকে বলা হয় PIPAC (প্রেসারাইজ়ড ইন্ট্রাপেরিটোনিয়াল এরোসোল কেমোথেরাপি)। উত্তর এবং পূর্ব ভারতের মধ্যে কলকাতায় এই প্রথম ক্যানসারের চিকিৎসায় এই PIPAC পদ্ধতির ব্যবহার হল নয়াবাদের বেসরকারি একটি হাসপাতালে।

হাওড়ার বাসিন্দা বছর সাতান্নর কমলা আদবানি (নাম পরিবর্তিত)-র পেটে ব্যথা হত। পেট ফুলে থাকত। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন, তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। তাঁর ওভারিতে ক্যানসার হয়েছে। ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু সেভাবে সাড়া মিলছিল না। পেটে জল জমে গিয়েছিল। শেষপর্যন্ত ওই মহিলা যোগাযোগ করেন নয়াবাদের এই বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতালে। নয়াবাদের বেসরকারি এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন, ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে রোগিণীর পেটের মধ্যে। ক্যানসারের চিকিৎসায় সাধারণত যেভাবে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়, এই হাসপাতালে প্রথমে সেই ভাবে কেমোথেরাপি দেওয়ার চেষ্টা হয়। দেখা হয় চিকিৎসায় সাড়া মিলছে কি না। কিন্তু, এভাবে চিকিৎসায় সাড়া মেলেনি। শেষপর্যন্ত PIPAC পদ্ধতিতে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা‌।

বেসরকারি এই হাসপাতালের চিকিৎসক সৌমেন দাস বলেন, "যে পদ্ধতিতে আমরা এই রোগিণীর চিকিৎসা করেছি তাকে PIPAC পদ্ধতি বলা হয়। এই পদ্ধতিতে কেমোথেরাপিকে নেবুলাইজ়ারের মাধ্যমে পেটের মধ্যে সরাসরি দেওয়া হয়। পেটের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া ক্যানসারের জন্য অথবা, স্টেজ ৪ ইন্ট্রো অ্যাবডমিনাল ক্যানসারের জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়।" একইসঙ্গে তিনি বলেন, "এতদিন এই ধরনের ক্যানসারের রোগীকে বাঁচানোর হার ছিল খুবই সীমিত। কাউকে ১, ২ মাস অথবা, সর্বাধিক মাস তিনেক পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হত।"


তিনি আরও বলেন, পেটের মধ্যে একটি পর্দা থাকে। যাকে পেরিটোনিয়াম বলা হয়। ওভারি বা কোলন বা স্টমাক, এই ধরনের ক্যানসার যখন এই পর্দায় ছড়িয়ে পড়ে তখন রোগীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুব কম হয়। দেখা গেছে, এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে সিস্টেমিক কেমোথেরাপি বা ইন্ট্রাভেনাস কেমোথেরাপি দিয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না। যেহেতু, পেটের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, সেই জন্য অনেক সময় অস্ত্রোপচার করে ছড়িয়ে পড়া ক্যানসার পুরোপুরি বের করা সম্ভব হয় না। এই ধরনের রোগীদের জন্য PIPAC নতুন পদ্ধতি। তিনি বলেন, "এই পদ্ধতিতে কেমোথেরাপিকে সরাসরি পেটের মধ্যে দিতে পারছি। দেখা গেছে, এই চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে অনেকের টিউমার অনেকটা কমে যাচ্ছে। ক্যানসার অনেক কমে যাচ্ছে। তাঁরা অনেক সময় অস্ত্রোপচারের জায়গায় চলে আসছেন। এমন কী সুস্থ হয়ে ওঠাও সম্ভব হচ্ছে।"


কমলা আদবানির চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের দলে সৌমেন দাস বাদেও ছিলেন কমলেশ রক্ষিত, অনির্বাণ নাগ এবং পূর্ণেন্দু ভৌমিক। চিকিৎসক কমলেশ রক্ষিত বলেন, "৫৭ বছর বয়সি এই রোগিণীর ওভারিতে ক্যানসার ছিল। এই ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য সাধারণত যে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়, সেটা তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসায় সাড়া পাওয়া যায়নি। ক্যানসার পেটের মধ্যে আরও ছড়িয়ে পড়ে। স্টেজ ৪ হয়ে যায় এই ক্যানসার। এই অবস্থায়, অস্ত্রোপচারে ওভারি, ইউটেরাস বাদ দেওয়া হলেও রোগিণীর খুব একটা লাভ হবে না। এই অবস্থায় আমাদের যেটা করার ছিল সেটা হল PIPAC পদ্ধতির চিকিৎসা। এই পদ্ধতিতে কেমোথেরাপিকে পেটের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।"

এই পদ্ধতির কিছু অ্যাডভান্টেজ আছে। এ কথা জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, "যেমন, সিস্টেমিক কেমো অর্থাৎ, সাধারণত যে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়, তাতে যে সাইড এফেক্ট আছে, তা এড়িয়ে যেতে পারি এই পদ্ধতিতে। এই পদ্ধতিতে পেটের মধ্যে সব জায়গায় কেমোথেরাপি একইরকম ভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণে ক্যানসারের সেলগুলিকে খুব ভালোভাবে মারতে পারে।" চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই পদ্ধতির চিকিৎসা প্রথমে জার্মানিতে শুরু হয়েছিল। ক্যানসারে আক্রান্ত যে রোগীর ক্ষেত্রে আর কিছু করা যাচ্ছে না, তাঁদের ক্ষেত্রে পেটের মধ্যে এভাবে সরাসরি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। সৌমেন দাস বলেন, "সাধারণভাবে যেসব ক্যানসার পেটের মধ্যে পর্দা অর্থাৎ, পেরিটোনিয়ামে‌ ছড়িয়ে পড়ে, সেই সব ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির ব্যবহার হয়। যেমন ওভারি, কোলন, স্টমাক অর্থাৎ, পাকস্থলীর ক্যানসার। এই ধরনের ক্যানসার প্রথমে সেই অর্গান থেকে বেরিয়ে যাঁদের ক্ষেত্রে পেটের পর্দায় ছড়িয়ে পড়ে, তাঁদের ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি সিস্টেমিক ভাবে, অর্থাৎ সাধারণত যেভাবে দেওয়া হয় সেভাবে আর কাজ করে না।"

একইসঙ্গে তিনি বলেন, "এটি এক ধরনের সার্জিকাল প্রসিডিওর। এক ধরনের সার্জিকাল স্ট্রাইক উইথ কেমোথেরাপি বলা যেতে পারে।" তিনি জানিয়েছেন, মহিলা প্রথমে যখন এই হাসপাতালে এসেছিলেন তখন তাঁর পেরিটোনিয়াম ছিল। সিস্টেমিক কেমোথেরাপির কিছুটা ভূমিকা রয়েছে। এই জন্য প্রথমে তাঁরা সিস্টেমিক কেমোথেরাপি দেওয়ার চেষ্টা করেন। দেখা যায় সিস্টেমিক কেমোথেরাপি নেওয়ার পর রোগ কমেনি। সেই জন্য PIPAC পদ্ধতিতে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।"

চিকিৎসক সৌমেন দাস বলেন, "উত্তর ভারত এবং পূর্ব ভারতের মধ্যে এই প্রথম আমাদের এখানে PIPAC পদ্ধতির ব্যবহার করা হল। দেশের সরকারি কোনও হাসপাতালে এখনও এই পদ্ধতির ব্যবহার হয়নি। এমন কী দিল্লির AIIMS-এ সম্ভবত এই পদ্ধতির ব্যবহার হয়নি।"

১৬ মার্চ রোগীকে ভর্তি করানো হয়েছিল বেসরকারি এই হাসপাতালে। পরের দিন এই পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়। কমলেশ রক্ষিত বলেন, "মহিলা এখন আগের থেকে অনেক ভালো রয়েছেন। আগে পেটে ব্যথা ছিল, পেট ফুলে থাকত‌। সেগুলি অনেকটাই কমে গেছে। মহিলার ক্ষেত্রে এখন যে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন, আশা করছি কিছু দিনের সেটা করা সম্ভব হবে।" তিনি বলেন, "ক্যানসারের চিকিৎসা যখন ব্যর্থ হয়েছে তখন এই রোগিণীর ক্ষেত্রে আমরা এই পদ্ধতির ব্যবহার করেছি। সিস্টেমিক কেমোথেরাপি এভাবে ছড়িয়ে পড়া ক্যানসারের সেলগুলিকে মারতে পারে না। কারণ, ওষুধ সেখানে পৌঁছতে পারে না।"

চিকিৎসক সৌমেন দাস বলেন, "প্রাথমিক রিপোর্টে এই রোগীর ক্ষেত্রে অনেকটাই কমেছে ক্যানসার। এই পদ্ধতিতে শুধুমাত্র কেমোথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এর পরে দেখা হবে ছড়িয়ে পড়া সেলগুলি ভ্যানিশ হয়ে গেছে কি না। মহিলা যাতে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যেতে পারেন, তার জন্য এরপরে অস্ত্রোপচার করা হবে।" একইসঙ্গে তিনি বলেন, "যে রোগীর আয়ু ছিল এক থেকে দেড় মাস, এখন তিনি ভালো আছেন। অস্ত্রোপচারের পরে তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন বলে আশা করছি।"

কলকাতা, 17 এপ্রিল : ওভারিতে ক্যানসার। সেখান থেকে এই ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ে পেটের পর্দায়। সব ধরনের চিকিৎসা হয়েছে। কিন্তু, চিকিৎসায় সেভাবে সাড়া মিলছিল না। এদিকে ক্যানসার পৌঁছে গিয়েছে ফোর্থ স্টেজে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, রোগিণীর আয়ু মাত্র এক-দেড় মাস ছিল। শেষপর্যন্ত, পেটের মধ্যে সরাসরি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। যার জেরে সেরে উঠছেন রোগিণী। এভাবে কেমোথেরাপি দেওয়ার পদ্ধতিকে বলা হয় PIPAC (প্রেসারাইজ়ড ইন্ট্রাপেরিটোনিয়াল এরোসোল কেমোথেরাপি)। উত্তর এবং পূর্ব ভারতের মধ্যে কলকাতায় এই প্রথম ক্যানসারের চিকিৎসায় এই PIPAC পদ্ধতির ব্যবহার হল নয়াবাদের বেসরকারি একটি হাসপাতালে।

হাওড়ার বাসিন্দা বছর সাতান্নর কমলা আদবানি (নাম পরিবর্তিত)-র পেটে ব্যথা হত। পেট ফুলে থাকত। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন, তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। তাঁর ওভারিতে ক্যানসার হয়েছে। ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু সেভাবে সাড়া মিলছিল না। পেটে জল জমে গিয়েছিল। শেষপর্যন্ত ওই মহিলা যোগাযোগ করেন নয়াবাদের এই বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতালে। নয়াবাদের বেসরকারি এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন, ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে রোগিণীর পেটের মধ্যে। ক্যানসারের চিকিৎসায় সাধারণত যেভাবে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়, এই হাসপাতালে প্রথমে সেই ভাবে কেমোথেরাপি দেওয়ার চেষ্টা হয়। দেখা হয় চিকিৎসায় সাড়া মিলছে কি না। কিন্তু, এভাবে চিকিৎসায় সাড়া মেলেনি। শেষপর্যন্ত PIPAC পদ্ধতিতে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা‌।

বেসরকারি এই হাসপাতালের চিকিৎসক সৌমেন দাস বলেন, "যে পদ্ধতিতে আমরা এই রোগিণীর চিকিৎসা করেছি তাকে PIPAC পদ্ধতি বলা হয়। এই পদ্ধতিতে কেমোথেরাপিকে নেবুলাইজ়ারের মাধ্যমে পেটের মধ্যে সরাসরি দেওয়া হয়। পেটের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া ক্যানসারের জন্য অথবা, স্টেজ ৪ ইন্ট্রো অ্যাবডমিনাল ক্যানসারের জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়।" একইসঙ্গে তিনি বলেন, "এতদিন এই ধরনের ক্যানসারের রোগীকে বাঁচানোর হার ছিল খুবই সীমিত। কাউকে ১, ২ মাস অথবা, সর্বাধিক মাস তিনেক পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হত।"


তিনি আরও বলেন, পেটের মধ্যে একটি পর্দা থাকে। যাকে পেরিটোনিয়াম বলা হয়। ওভারি বা কোলন বা স্টমাক, এই ধরনের ক্যানসার যখন এই পর্দায় ছড়িয়ে পড়ে তখন রোগীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুব কম হয়। দেখা গেছে, এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে সিস্টেমিক কেমোথেরাপি বা ইন্ট্রাভেনাস কেমোথেরাপি দিয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না। যেহেতু, পেটের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, সেই জন্য অনেক সময় অস্ত্রোপচার করে ছড়িয়ে পড়া ক্যানসার পুরোপুরি বের করা সম্ভব হয় না। এই ধরনের রোগীদের জন্য PIPAC নতুন পদ্ধতি। তিনি বলেন, "এই পদ্ধতিতে কেমোথেরাপিকে সরাসরি পেটের মধ্যে দিতে পারছি। দেখা গেছে, এই চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে অনেকের টিউমার অনেকটা কমে যাচ্ছে। ক্যানসার অনেক কমে যাচ্ছে। তাঁরা অনেক সময় অস্ত্রোপচারের জায়গায় চলে আসছেন। এমন কী সুস্থ হয়ে ওঠাও সম্ভব হচ্ছে।"


কমলা আদবানির চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের দলে সৌমেন দাস বাদেও ছিলেন কমলেশ রক্ষিত, অনির্বাণ নাগ এবং পূর্ণেন্দু ভৌমিক। চিকিৎসক কমলেশ রক্ষিত বলেন, "৫৭ বছর বয়সি এই রোগিণীর ওভারিতে ক্যানসার ছিল। এই ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য সাধারণত যে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়, সেটা তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসায় সাড়া পাওয়া যায়নি। ক্যানসার পেটের মধ্যে আরও ছড়িয়ে পড়ে। স্টেজ ৪ হয়ে যায় এই ক্যানসার। এই অবস্থায়, অস্ত্রোপচারে ওভারি, ইউটেরাস বাদ দেওয়া হলেও রোগিণীর খুব একটা লাভ হবে না। এই অবস্থায় আমাদের যেটা করার ছিল সেটা হল PIPAC পদ্ধতির চিকিৎসা। এই পদ্ধতিতে কেমোথেরাপিকে পেটের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।"

এই পদ্ধতির কিছু অ্যাডভান্টেজ আছে। এ কথা জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, "যেমন, সিস্টেমিক কেমো অর্থাৎ, সাধারণত যে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়, তাতে যে সাইড এফেক্ট আছে, তা এড়িয়ে যেতে পারি এই পদ্ধতিতে। এই পদ্ধতিতে পেটের মধ্যে সব জায়গায় কেমোথেরাপি একইরকম ভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণে ক্যানসারের সেলগুলিকে খুব ভালোভাবে মারতে পারে।" চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই পদ্ধতির চিকিৎসা প্রথমে জার্মানিতে শুরু হয়েছিল। ক্যানসারে আক্রান্ত যে রোগীর ক্ষেত্রে আর কিছু করা যাচ্ছে না, তাঁদের ক্ষেত্রে পেটের মধ্যে এভাবে সরাসরি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। সৌমেন দাস বলেন, "সাধারণভাবে যেসব ক্যানসার পেটের মধ্যে পর্দা অর্থাৎ, পেরিটোনিয়ামে‌ ছড়িয়ে পড়ে, সেই সব ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির ব্যবহার হয়। যেমন ওভারি, কোলন, স্টমাক অর্থাৎ, পাকস্থলীর ক্যানসার। এই ধরনের ক্যানসার প্রথমে সেই অর্গান থেকে বেরিয়ে যাঁদের ক্ষেত্রে পেটের পর্দায় ছড়িয়ে পড়ে, তাঁদের ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি সিস্টেমিক ভাবে, অর্থাৎ সাধারণত যেভাবে দেওয়া হয় সেভাবে আর কাজ করে না।"

একইসঙ্গে তিনি বলেন, "এটি এক ধরনের সার্জিকাল প্রসিডিওর। এক ধরনের সার্জিকাল স্ট্রাইক উইথ কেমোথেরাপি বলা যেতে পারে।" তিনি জানিয়েছেন, মহিলা প্রথমে যখন এই হাসপাতালে এসেছিলেন তখন তাঁর পেরিটোনিয়াম ছিল। সিস্টেমিক কেমোথেরাপির কিছুটা ভূমিকা রয়েছে। এই জন্য প্রথমে তাঁরা সিস্টেমিক কেমোথেরাপি দেওয়ার চেষ্টা করেন। দেখা যায় সিস্টেমিক কেমোথেরাপি নেওয়ার পর রোগ কমেনি। সেই জন্য PIPAC পদ্ধতিতে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।"

চিকিৎসক সৌমেন দাস বলেন, "উত্তর ভারত এবং পূর্ব ভারতের মধ্যে এই প্রথম আমাদের এখানে PIPAC পদ্ধতির ব্যবহার করা হল। দেশের সরকারি কোনও হাসপাতালে এখনও এই পদ্ধতির ব্যবহার হয়নি। এমন কী দিল্লির AIIMS-এ সম্ভবত এই পদ্ধতির ব্যবহার হয়নি।"

১৬ মার্চ রোগীকে ভর্তি করানো হয়েছিল বেসরকারি এই হাসপাতালে। পরের দিন এই পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়। কমলেশ রক্ষিত বলেন, "মহিলা এখন আগের থেকে অনেক ভালো রয়েছেন। আগে পেটে ব্যথা ছিল, পেট ফুলে থাকত‌। সেগুলি অনেকটাই কমে গেছে। মহিলার ক্ষেত্রে এখন যে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন, আশা করছি কিছু দিনের সেটা করা সম্ভব হবে।" তিনি বলেন, "ক্যানসারের চিকিৎসা যখন ব্যর্থ হয়েছে তখন এই রোগিণীর ক্ষেত্রে আমরা এই পদ্ধতির ব্যবহার করেছি। সিস্টেমিক কেমোথেরাপি এভাবে ছড়িয়ে পড়া ক্যানসারের সেলগুলিকে মারতে পারে না। কারণ, ওষুধ সেখানে পৌঁছতে পারে না।"

চিকিৎসক সৌমেন দাস বলেন, "প্রাথমিক রিপোর্টে এই রোগীর ক্ষেত্রে অনেকটাই কমেছে ক্যানসার। এই পদ্ধতিতে শুধুমাত্র কেমোথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এর পরে দেখা হবে ছড়িয়ে পড়া সেলগুলি ভ্যানিশ হয়ে গেছে কি না। মহিলা যাতে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যেতে পারেন, তার জন্য এরপরে অস্ত্রোপচার করা হবে।" একইসঙ্গে তিনি বলেন, "যে রোগীর আয়ু ছিল এক থেকে দেড় মাস, এখন তিনি ভালো আছেন। অস্ত্রোপচারের পরে তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন বলে আশা করছি।"

Intro:EXCLUSIVE

কলকাতা, ১৬ এপ্রিল: ওভারিতে ক্যান্সার। সেখান থেকে এই ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে পেটের পর্দায়। সব ধরনের চিকিৎসা হয়েছে। কিন্তু, চিকিৎসায় সেভাবে সাড়া মিলছিল না। এদিকে ক্যান্সার পৌঁছে গিয়েছে ফোর্থ স্টেজে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, রোগীর আয়ু মাত্র এক দেড় মাস ছিল। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত, পেটের মধ্যে সরাসরি কেমোথেরাপি দিয়ে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হল। এভাবে কেমোথেরাপি দেওয়ার পদ্ধতিকে বলা হয় পাইপ্যাক। উত্তর এবং পূর্ব ভারতের মধ্যে কলকাতায় এই প্রথম ক্যান্সারের চিকিৎসায় এই পাইপ্যাক পদ্ধতির ব্যবহার হল নয়াবাদের বেসরকারি একটি হাসপাতালে।Body:হাওড়ার বাসিন্দা বছর ৫৭-র কমলা আদবানি (নাম পরিবর্তিত)-র পেটে ব্যথা হতো। পেট ফুলে থাকতো। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন, এই রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাঁর ওভারিতে ক্যান্সার হয়েছে। ক্যান্সারের চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু সেভাবে সাড়া মিলছিল না। রোগীর পেটে জল জমে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত এই রোগী যোগাযোগ করেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ক্যান্সার হসপিটালে। নয়াবাদের বেসরকারি এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন, ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছে রোগীর পেটের মধ্যে। ক্যান্সারের চিকিৎসায় সাধারণত যেভাবে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়, এই হাসপাতালে প্রথমে সেই ভাবে কেমোথেরাপি দেওয়ার চেষ্টা হয়। দেখা হয় চিকিৎসায় সাড়া মিলছে কি না। কিন্তু, এভাবে চিকিৎসায় সাড়া মেলেনি। শেষ পর্যন্ত পাইপ্যাক পদ্ধতিতে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা‌।

বেসরকারি এই হাসপাতালের চিকিৎসক সৌমেন দাস বলেন, "যে পদ্ধতিতে আমরা এই রোগীর চিকিৎসা করেছি তাকে পাইপ্যাক পদ্ধতি বলা হয়। পাইপ্যাক অর্থাৎ, প্রেসারাইসড ইন্ট্রাপেরিটোনিয়াল এরোসল কেমোথেরাপি। এই পদ্ধতিতে কেমোথেরাপিকে নেবুলাইজারের মাধ্যমে পেটের মধ্যে সরাসরি দেওয়া হয়। পেটের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সারের জন্য অথবা, স্টেজ ৪ ইন্ট্রো অ্যাবডমিন্যাল ক্যান্সারের জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "এতদিন এই ধরনের ক্যান্সারের রোগীকে বাঁচানোর হার ছিল খুবই সীমিত। কাউকে ১, ২ মাস অথবা, সর্বাধিক মাস তিনেক পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হতো।"

এই চিকিৎসক জানিয়েছেন, পেটের মধ্যে একটি পর্দা থাকে। যাকে পেরিটোনিয়াম বলা হয়। ওভারি বা কোলন বা স্টমাক, এই ধরনের ক্যান্সার যখন এই পর্দায় ছড়িয়ে পড়ে তখন ওই রোগীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুব কম হয়। দেখা গিয়েছে, এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে সিস্টেমিক কেমোথেরাপি বা ইন্ট্রাভেনাস কেমোথেরাপি দিয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না। যেহেতু, পেটের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, সেই জন্য অনেক সময় অস্ত্রোপচার করে ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সার পুরোপুরি বের করা সম্ভব হয় না। এই ধরনের রোগীদের জন্য পাইপ্যাক নতুন পদ্ধতি। তিনি বলেন, "এই পদ্ধতিতে কেমোথেরাপিকে সরাসরি পেটের মধ্যে দিতে পারছি। দেখা গিয়েছে, এই চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে অনেকের টিউমার অনেকটা কমে যাচ্ছে। ক্যান্সার অনেক কমে যাচ্ছে। তাঁরা অনেক সময় অস্ত্রোপচারের জায়গায় চলে আসছেন। এমনকি সুস্থ হয়ে ওঠাও সম্ভব হচ্ছে।"

এই রোগীর চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের দলে সৌমেন দাস বাদেও ছিলেন কমলেশ রক্ষিত, অনির্বাণ নাগ এবং, পূর্ণেন্দু ভৌমিক। চিকিৎসক কমলেশ রক্ষিত বলেন, "৫৭ বছর বয়সি এই রোগীর ওভারিতে ক্যান্সার ছিল। এই ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য সাধারণত যে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়, সেটা এই রোগীকে দেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসায় সাড়া দেয়নি এই কেমোথেরাপি। ক্যান্সার পেটের মধ্যে আরও ছড়িয়ে পড়ে। স্টেজ ৪ হয়ে যায় এই ক্যান্সার। এই অবস্থায়, অস্ত্রোপচারে ওভারি, ইউটেরাস বাদ দেওয়া হলেও রোগীর খুব একটা লাভ হবে না। এ অবস্থায় আমাদের যেটা করার ছিল সেটা হল পাইপ্যাক পদ্ধতির চিকিৎসা। এই পদ্ধতিতে কেমোথেরাপিকে পেটের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।"

এই পদ্ধতিল কিছু অ্যাডভান্টেজ আছে। এ কথা জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, "যেমন, সিস্টেমিক কেমো অর্থাৎ, সাধারণত যে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়, তাতে যে সাইড এফেক্ট আছে, তা এড়িয়ে যেতে পারি এই পদ্ধতিতে। এই পদ্ধতিতে পেটের মধ্যে সব জায়গায় কেমোথেরাপি একই রকম ভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণে ক্যান্সারের সেলগুলিকে খুব ভালোভাবে মারতে পারে।" চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই পদ্ধতির চিকিৎসা প্রথমে জার্মানিতে শুরু হয়েছিল। ক্যান্সারে আক্রান্ত যে রোগীর ক্ষেত্রে আর কিছু করা যাচ্ছে না, তাঁদের ক্ষেত্রে পেটের মধ্যে এভাবে সরাসরি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। সৌমেন দাস বলেন, "সাধারণভাবে যেসব ক্যান্সার পেটের মধ্যে পর্দা অর্থাৎ, পেরিটোনিয়ামে‌ ছড়িয়ে পড়ে, সেই সব ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির ব্যবহার হয়। যেমন ওভারি, যেমন কোলন, যেমন স্টমাক অর্থাৎ, পাকস্থলীর ক্যান্সার। এই ধরনের ক্যান্সার প্রথমে সেই অর্গান থেকে বেরিয়ে যাঁদের ক্ষেত্রে পেটের পর্দায় ছড়িয়ে পড়ে, তাঁদের ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি সিস্টেমিক ভাবে, অর্থাৎ সাধারণত যেভাবে দেওয়া হয় সেভাবে আর কাজ করে না।"

একই সঙ্গে তিনি বলেন, "এটি এক ধরনের সার্জিক্যাল প্রসিডিওর। এক ধরনের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক উইথ কেমোথেরাপি বলা যেতে পারে।" তিনি জানিয়েছেন, এই রোগী প্রথমে যখন এই হাসপাতালে এসেছিলেন তখন তাঁর পেরিটোনিয়াম ছিল। সিস্টেমিক কেমোথেরাপির কিছুটা ভূমিকা রয়েছে। এই জন্য প্রথমে তাঁরা সিস্টেমিক কেমোথেরাপি দেওয়ার চেষ্টা করেন। দেখা যায় সিস্টেমিক কেমোথেরাপি নেওয়ার পর রোগ কমেনি। সেই জন্য পাইপ্যাক পদ্ধতিতে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।" সৌমেন দাস বলেন, "উত্তর ভারত এবং পূর্ব ভারতের মধ্যে এই প্রথম আমাদের এখানে পাইপ্যাক পদ্ধতির ব্যবহার করা হল। এ দেশের সরকারি কোনও হাসপাতালে এখনও এই পদ্ধতির ব্যবহার হয়নি, এমনকি দিল্লির এইমসেও সম্ভবত এই পদ্ধতির ব্যবহার হয়নি।"Conclusion:গত ১৬ মার্চ রোগীকে ভর্তি করানো হয়েছিল বেসরকারি এই হাসপাতালে। পরের দিন এই পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়। কমলেশ রক্ষিত বলেন, "রোগী এখন আগের থেকে অনেক ভালো রয়েছেন। আগে পেটে ব্যথা ছিল, পেট ফুলে থাকতো‌। সেগুলি অনেটাই কমে গিয়েছে। এই রোগীর ক্ষেত্রে এখন যে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন, আশা করছি কিছু দিনের সেটা করা সম্ভব হবে।" তিনি বলেন, "ক্যান্সারের চিকিৎসা যখন ব্যর্থ হয়েছে তখন এই রোগীর ক্ষেত্রে আমরা এই পদ্ধতির ব্যবহার করেছি। সিস্টেমিক কেমোথেরাপি এভাবে ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সারের সেলগুলিকে মারতে পারে না।কারণ, ওষুধ সেখানে পৌঁছতে পারে না।" সৌমেন দাস বলেন, "প্রাথমিক রিপোর্টে এই রোগীর ক্ষেত্রে অনেকটাই কমেছে ক্যান্সার। এই পদ্ধতিতে শুধুমাত্র কেমোথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এর পরে দেখা হবে ছড়িয়ে পড়া সেলগুলি ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছে কি না। এই রোগী যাতে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যেতে পারেন, তার জন্য এর পরে অস্ত্রোপচার করা হবে।" একইসঙ্গে তিনি বলেন, "যে রোগীর আয়ু ছিল এক থেকে দেড় মাস, এখন তিনি ভালো আছেন। অস্ত্রোপচারের পরে তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন বলে আশা করছি।"

______

RAP-এ বাইট:

wb_kol_8002_16april_cancer_new_treatment_7203421
ডাক্তারদের বক্তব্য

আকাশি রঙের জামা: ডাক্তার সৌমেন দাস।
চেক দেওয়া জামা: ডাক্তার কমলেশ রক্ষিত।


WRAP-এ ভিস্যুয়াল
wb_kol_8003_16april_cancer_new_treatment_7203421
এবং,
wb_kol_8004_16april_cancer_new_treatment_7203421


WRAP-এ ছবি:
wb_kol_8005_16april_cancer_new_treatment_7203421
এবং,
wb_kol_8006_16april_cancer_new_treatment_7203421

_______

For All Latest Updates

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.