বোলপুর, 21 ডিসেম্বর: নতুন একটি উপকারী ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করল বিশ্বভারতীর উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ । এই ব্যাকটেরিয়া মূলত ধান চাষের অত্যন্ত সহায়ক ৷ ব্যাকটেরিয়াটির নামকরণ করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ও রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে । এখনও পর্যন্ত জীবন্ত কোনও কিছুর নাম কবি ও কবিপুত্রর নামে হয়নি । ইতিমধ্যেই বিশ্বভারতীর এই আবিষ্কারকে স্বীকৃতি দিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অফ মাইক্রোবায়োলজিস্ট অফ ইন্ডিয়া (এএমআই)।
কৃষিকাজকে সমৃদ্ধ করতে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কৃষি গবেষণার উপর জোর দিয়েছিলেন ৷ তাই তিনি শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ৷ এমনকী, নিজের ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কৃষিবিদ্যার পাঠ নিতে বিদেশেও পাঠিয়েছিলেন তিনি ৷ পরবর্তীতে বিশ্বভারতীর প্রথম উপাচার্য হন রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৷ তাঁর হাত ধরে শুরু হয় কৃষি গবেষণার নানা কাজ ।
কৃষিক্ষেত্রে ফলন বৃদ্ধিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়ামের । এই তিনটি উপাদানকে একত্রে বলে এনপিকে ৷ মাটি থেকে উদ্ভিদ এই উপাদান সংগ্রহ করে ৷ কিন্তু, অনেক ক্ষেত্রে মাটিতে এর যোগান কম থাকলে বাজারজাত উপাদানগুলি দিতে হয় চাষিদের ৷
বিশ্বভারতীর উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ একটি নতুন প্রজাতির উপকারী ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেছে । নাম 'প্যান্টোইয়া টেগোরী' (Pantoea Tagorei)।
উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অনুজীববিদ্যার অধ্যাপক ড. বুম্বা দাম তাঁর পাঁচ জন পড়ুয়া রাজু বিশ্বাস, অভিজিৎ মিশ্র, অভিনব চক্রবর্তী, পুজা মুখোপাধ্যায় ও সন্দীপ ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে এই ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেন ৷ মূলত ধান চাষের অত্যন্ত সহায়ক অনুজীব । এছাড়া, লঙ্কা ও মটর চাষের পক্ষেও উপকারী এই ব্যাকটেরিয়া । এটি মাটি থেকে অতি সহজেই পটাশিয়াম সংগ্রহ করে উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে ৷ ছয় জনের এই দল গবেষণা করতে করতে শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি, পরে ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়া কয়লা খনি অঞ্চলের মাটি থেকে এই ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পান ৷ কৃষিক্ষেত্রে তাঁদের ভাবনা, অবদানকে স্মরণ করে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে ব্যাকটেরিয়াটির নামকরণ করা হয়েছে । বিশ্বভারতীর এই আবিষ্কার অ্যাসোসিয়েশন অফ মাইক্রোবায়োলজিস্ট অফ ইন্ডিয়া (এএমআই)-র স্বীকৃতি পেয়েছে ।
বিশ্বভারতীর উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. বুম্বা দাম বলেন, "এই ব্যাকটেরিয়া চাষের পক্ষে খুবই উপকারী । আমরা আগে পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ করে দেখেছি ৷ সদ্য শান্তিনিকেতন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তকমা পেয়েছে । তাই আমরা এই ব্যাকটেরিয়ার নাম গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিশ্বভারতীর প্রথম উপাচার্য রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে রেখেছি । লিভিং কোনও অর্গানিজমের নাম টেগরের নামে ৷ আমার গবেষক পড়ুয়ারাও খুব মন দিয়ে কাজ করেছে এ ক্ষেত্রে ।"
গবেষক পড়ুয়াদের মধ্যে রাজু বিশ্বাস ও অভিজিৎ মিশ্র বলেন, "এটা বিশ্বভারতীর আবিষ্কার । এই ব্যাকটেরিয়া ব্যবহারের ফলে চাষিরা উপকৃত হবেন ৷ সারের খরচ অনেকগুণ কমবে ৷ এই ব্যাকটেরিয়া মাটি থেকে সহজেই পটাশিয়াম সংগ্রহ করে উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করতে পারে ৷ আমরা ঝরিয়ার কয়লা খনি অঞ্চল থেকে এই ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পেয়েছি ।"
আরও পড়ুন: