ETV Bharat / state

ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে নিবিড় যোগ, ধ্বংসের মুখে রায়পুর রাজবাড়ি

প্রায়ই রায়পুর রাজবাড়িতে আসতেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর । তাঁর জন্য একটি ঘর সবসময় বরাদ্দ থাকত । জানা যায়, ভুবনডাঙার পুকুর সহ সংলগ্ন 20 বিঘা জমি মহর্ষিকে একপ্রকার দান হিসেবে দিয়েছিল রায়পুরের সিংহ পরিবার । পরবর্তীতে এখানেই শান্তিনিকেতন আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন মহর্ষি ।

ধ্বংসের মুখে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার ইতিহাস লেখা রায়পুর রাজবাড়ি
ধ্বংসের মুখে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার ইতিহাস লেখা রায়পুর রাজবাড়ি
author img

By

Published : Jun 13, 2021, 8:33 PM IST

বোলপুর, 13 জুন : বীরভূমের রায়পুর গ্রাম । সেখানে 70 বিঘা জায়গাজুড়ে রয়েছে রায়পুর রাজবাড়ি । রায়পুরের সিংহ পরিবারের বাস ছিল এই রাজবাড়িতে । শান্তিনিকেতন ব্রহ্ম আশ্রম ও বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত রায়পুরের সিংহ পরিবার । সেই সিংহ পরিবারের রায়পুর রাজবাড়ি আজ ধ্বংসের মুখে । একদা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই রাজবাড়িতে আসতেন । বহুবার মহর্ষির উপস্থিতিতে ব্রহ্ম আলোচনাসভা বসেছে এই বাড়িতে । রায়পুর সিংহ পরিবারের দানের জায়গাতেই ধীরে ধীরে শান্তিনিকেতন ব্রহ্ম আশ্রম গড়ে ওঠে । ঐতিহ্যবাহী শান্তিনিকেতন আশ্রম ও বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার ইতিহাস লেখা রয়েছে রায়পুরের রাজবাড়ির প্রতিটি ইটে । আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই ভগ্নপ্রায় বৃহৎ অট্টালিকা ।

বিভিন্ন ইতিহাসবিদদের বই ও স্থানীয় ইতিহাস থেকে জানা গিয়েছে, 1780 থেকে 90 সাল নাগাদ বীরভূম জেলার রায়পুর গ্রামের অজয় নদের তীরে ভাগে ভাগে তৈরি হয় রায়পুরের রাজবাড়ি । মেদিনীপুরে চন্দ্রকোনা থেকে প্রায় এক হাজার তাঁত শিল্পীকে নিয়ে বীরভূমের রায়পুর গ্রামে চলে এসেছিলেন লালচাঁদ সিংহ । জনশ্রুতি রয়েছে, বর্গী আক্রমণের হাত থেকে বাঁচতেই সেই সময় তিনি বীরভূমে চলে এসেছিলেন । তবে জমিদারিত্ব শুরু করেছিলেন তাঁর ছেলে শ্যামকিশোর সিংহ । এই শ্যামকিশোর সিংহের তিন ছেলে । জগমোহন, ভুবনমোহন ও মনমোহন সিংহ । সম্ভবত, এই ভুবনমোহন সিংহের নামানুসারে 'ভুবনডাঙা' গ্রামের নামকরণ হয়েছিল । মনমোহন সিংহের তিন ছেলে । নীলকণ্ঠ, শ্রীকণ্ঠ ও সিতিকণ্ঠ সিংহ । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতিতে এই শ্রীকণ্ঠ সিংহ 'শ্রীকণ্ঠবাবু' নামে উল্লিখিত রয়েছে । মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে 'শান্তিনিকেতনের বুলবুল' নামে আখ্যায়িত করেছিলেন।

রাজবাড়ির চারপাশ আগাছা, জঞ্জালে ভরে গিয়েছে
রাজবাড়ির চারপাশ আগাছা, জঞ্জালে ভরে গিয়েছে

উল্লেখ্য, আনুমানিক 1825 থেকে 26 সাল থেকেই প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের সঙ্গে রায়পুরের সিংহ পরিবারের যোগাযোগ ছিল । পরবর্তীকালে যখন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর আধ্যাত্মিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হন, তখন সিংহ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ আরও নিবিড় হয় । ভুবনমোহন সিংহের ছেলে প্রতাপনারায়াণ সিংহ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে ব্রহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন । অনুমান করা হয়, বীরভূম জেলার মধ্যে তিনিই প্রথম ব্রহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন । তাই প্রায় সময় রায়পুরের এই রাজবাড়িতে আসতেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর । উপরের একটি ঘর তাঁর জন্য সর্বদা বরাদ্দ ছিল । তিনি এলেই ওই ঘরে থাকতেন । যেহেতু প্রতাপনারায়াণ সিংহকে তিনি দীক্ষা দিয়েছিলেন, তাই এই রাজবাড়িতে গুরুদেবের আসনে সমাদৃত ছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর । সিংহ পরিবারের বাড়ি হলেও এটি 'রায়পুর রাজবাড়ি' নামে খ্যাত।

ভেঙে পড়েছে রাজবাড়ির দেওয়াল
ভেঙে পড়েছে রাজবাড়ির দেওয়াল
ইতিহাস থেকে আরও জানা গিয়েছে, 1863 সালে ভুবনডাঙার পুকুর সহ সংলগ্ন 20 বিঘা জমি মহর্ষিকে একপ্রকার দান হিসেবে দেন এই সিংহ পরিবার । পরবর্তীতে এখানে ব্রহ্ম ধর্মের প্রসার ও প্রয়াসের জন্য শান্তিনিকেতন আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন মহর্ষি । এক কথায় শান্তিনিকেতন ব্রহ্ম আশ্রম প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল রায়পুরের সিংহ পরিবারের ।

আরও পড়ুন, ভ্যাকসিনের অভাব টিকাকরণ হয়নি কর্মীদের, প্রশ্নের মুখে রেস্তরাঁগুলির ভবিষ্যৎ



আরও পরে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে সিতিকণ্ঠ সিংহের ছেলে সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহের । এই সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ ছিলেন প্রথম ও একমাত্র ইংরেজ যিনি 'লর্ড' উপাধি পেয়েছিলেন । এছাড়াও, পরাধীন ভারতবর্ষের বিহার ও ওড়িশার গভর্নর ছিলেন সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিদেশ সফরের সঙ্গীও ছিলেন সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ । বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল । অনুমান করা হয় বিশ্বভারতীর 'সিংহসদন'-এর নামকরণ রায়পুর রাজবাড়ির মালিকদের 'সিংহ' উপাধি অনুসারেই হয়েছে ।

ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে নিবিড় যোগ, ধ্বংসের মুখে রায়পুর রাজবাড়ি
ঐতিহ্যবাহী শান্তিনিকেতন ব্রহ্ম আশ্রম ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সূচনা যে বাড়ি থেকে হয়েছিল, সেই রায়পুর রাজবাড়ি আজ ধ্বংসের মুখে । চারপাশে শুধুই ঝিঁঝির ডাক । আর নিস্তব্ধতা । খসে পড়েছে দেওয়াল । বেরিয়ে পড়েছে ইট । ইটের খাঁজে খাঁজে গাছের ঝুরি । জমেছে শ্যাওলা । বৃহদাকার অট্টালিকার ছাদ থেকে দেখা যায় অজয় নদ সহ বিস্তীর্ণ এলাকা । ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তিনিকেতন আশ্রম আজ উজ্জ্বল নক্ষত্র । আর এই ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠার ইতিহাস লেখা রয়েছে ভগ্নপ্রায় রায়পুর রাজবাড়ির প্রতিটিতে ইটে ।

আরও পড়ুন, অবিভক্ত বাংলার বৃহত্তম গুনুটিয়া নীলকুঠির ইতিহাস বিলুপ্তির পথে

স্থানীয় বাসিন্দা তথা গবেষক অঙ্কুশ দাস বলেন, "রায়পুর সিংহ পরিবারের সঙ্গে ঠাকুর পরিবারের যোগাযোগ ছিল অত্যন্ত নিবিড় । বহুবার মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই রাজবাড়িতে এসেছেন । বহুবার এখানে ব্রহ্ম উপাসনা হয়েছে । এই সিংহ পরিবারের একপ্রকার দানের জমিতে গড়ে ওঠে শান্তিনিকেতন আশ্রম । পরবর্তীকালে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে লর্ড সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহের । এই রায়পুর রাজবাড়ি থেকে শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার শুরুটা হয়েছিল এমন বলাই যায়।" স্থানীয়রা সাধ্যমতো বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণ করেন । কারণ ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে চান তাঁরা ।

বোলপুর, 13 জুন : বীরভূমের রায়পুর গ্রাম । সেখানে 70 বিঘা জায়গাজুড়ে রয়েছে রায়পুর রাজবাড়ি । রায়পুরের সিংহ পরিবারের বাস ছিল এই রাজবাড়িতে । শান্তিনিকেতন ব্রহ্ম আশ্রম ও বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত রায়পুরের সিংহ পরিবার । সেই সিংহ পরিবারের রায়পুর রাজবাড়ি আজ ধ্বংসের মুখে । একদা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই রাজবাড়িতে আসতেন । বহুবার মহর্ষির উপস্থিতিতে ব্রহ্ম আলোচনাসভা বসেছে এই বাড়িতে । রায়পুর সিংহ পরিবারের দানের জায়গাতেই ধীরে ধীরে শান্তিনিকেতন ব্রহ্ম আশ্রম গড়ে ওঠে । ঐতিহ্যবাহী শান্তিনিকেতন আশ্রম ও বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার ইতিহাস লেখা রয়েছে রায়পুরের রাজবাড়ির প্রতিটি ইটে । আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই ভগ্নপ্রায় বৃহৎ অট্টালিকা ।

বিভিন্ন ইতিহাসবিদদের বই ও স্থানীয় ইতিহাস থেকে জানা গিয়েছে, 1780 থেকে 90 সাল নাগাদ বীরভূম জেলার রায়পুর গ্রামের অজয় নদের তীরে ভাগে ভাগে তৈরি হয় রায়পুরের রাজবাড়ি । মেদিনীপুরে চন্দ্রকোনা থেকে প্রায় এক হাজার তাঁত শিল্পীকে নিয়ে বীরভূমের রায়পুর গ্রামে চলে এসেছিলেন লালচাঁদ সিংহ । জনশ্রুতি রয়েছে, বর্গী আক্রমণের হাত থেকে বাঁচতেই সেই সময় তিনি বীরভূমে চলে এসেছিলেন । তবে জমিদারিত্ব শুরু করেছিলেন তাঁর ছেলে শ্যামকিশোর সিংহ । এই শ্যামকিশোর সিংহের তিন ছেলে । জগমোহন, ভুবনমোহন ও মনমোহন সিংহ । সম্ভবত, এই ভুবনমোহন সিংহের নামানুসারে 'ভুবনডাঙা' গ্রামের নামকরণ হয়েছিল । মনমোহন সিংহের তিন ছেলে । নীলকণ্ঠ, শ্রীকণ্ঠ ও সিতিকণ্ঠ সিংহ । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতিতে এই শ্রীকণ্ঠ সিংহ 'শ্রীকণ্ঠবাবু' নামে উল্লিখিত রয়েছে । মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে 'শান্তিনিকেতনের বুলবুল' নামে আখ্যায়িত করেছিলেন।

রাজবাড়ির চারপাশ আগাছা, জঞ্জালে ভরে গিয়েছে
রাজবাড়ির চারপাশ আগাছা, জঞ্জালে ভরে গিয়েছে

উল্লেখ্য, আনুমানিক 1825 থেকে 26 সাল থেকেই প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের সঙ্গে রায়পুরের সিংহ পরিবারের যোগাযোগ ছিল । পরবর্তীকালে যখন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর আধ্যাত্মিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হন, তখন সিংহ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ আরও নিবিড় হয় । ভুবনমোহন সিংহের ছেলে প্রতাপনারায়াণ সিংহ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে ব্রহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন । অনুমান করা হয়, বীরভূম জেলার মধ্যে তিনিই প্রথম ব্রহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন । তাই প্রায় সময় রায়পুরের এই রাজবাড়িতে আসতেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর । উপরের একটি ঘর তাঁর জন্য সর্বদা বরাদ্দ ছিল । তিনি এলেই ওই ঘরে থাকতেন । যেহেতু প্রতাপনারায়াণ সিংহকে তিনি দীক্ষা দিয়েছিলেন, তাই এই রাজবাড়িতে গুরুদেবের আসনে সমাদৃত ছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর । সিংহ পরিবারের বাড়ি হলেও এটি 'রায়পুর রাজবাড়ি' নামে খ্যাত।

ভেঙে পড়েছে রাজবাড়ির দেওয়াল
ভেঙে পড়েছে রাজবাড়ির দেওয়াল
ইতিহাস থেকে আরও জানা গিয়েছে, 1863 সালে ভুবনডাঙার পুকুর সহ সংলগ্ন 20 বিঘা জমি মহর্ষিকে একপ্রকার দান হিসেবে দেন এই সিংহ পরিবার । পরবর্তীতে এখানে ব্রহ্ম ধর্মের প্রসার ও প্রয়াসের জন্য শান্তিনিকেতন আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন মহর্ষি । এক কথায় শান্তিনিকেতন ব্রহ্ম আশ্রম প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল রায়পুরের সিংহ পরিবারের ।

আরও পড়ুন, ভ্যাকসিনের অভাব টিকাকরণ হয়নি কর্মীদের, প্রশ্নের মুখে রেস্তরাঁগুলির ভবিষ্যৎ



আরও পরে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে সিতিকণ্ঠ সিংহের ছেলে সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহের । এই সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ ছিলেন প্রথম ও একমাত্র ইংরেজ যিনি 'লর্ড' উপাধি পেয়েছিলেন । এছাড়াও, পরাধীন ভারতবর্ষের বিহার ও ওড়িশার গভর্নর ছিলেন সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিদেশ সফরের সঙ্গীও ছিলেন সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ । বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর অগ্রণী ভূমিকা ছিল । অনুমান করা হয় বিশ্বভারতীর 'সিংহসদন'-এর নামকরণ রায়পুর রাজবাড়ির মালিকদের 'সিংহ' উপাধি অনুসারেই হয়েছে ।

ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে নিবিড় যোগ, ধ্বংসের মুখে রায়পুর রাজবাড়ি
ঐতিহ্যবাহী শান্তিনিকেতন ব্রহ্ম আশ্রম ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সূচনা যে বাড়ি থেকে হয়েছিল, সেই রায়পুর রাজবাড়ি আজ ধ্বংসের মুখে । চারপাশে শুধুই ঝিঁঝির ডাক । আর নিস্তব্ধতা । খসে পড়েছে দেওয়াল । বেরিয়ে পড়েছে ইট । ইটের খাঁজে খাঁজে গাছের ঝুরি । জমেছে শ্যাওলা । বৃহদাকার অট্টালিকার ছাদ থেকে দেখা যায় অজয় নদ সহ বিস্তীর্ণ এলাকা । ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হিসেবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তিনিকেতন আশ্রম আজ উজ্জ্বল নক্ষত্র । আর এই ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠার ইতিহাস লেখা রয়েছে ভগ্নপ্রায় রায়পুর রাজবাড়ির প্রতিটিতে ইটে ।

আরও পড়ুন, অবিভক্ত বাংলার বৃহত্তম গুনুটিয়া নীলকুঠির ইতিহাস বিলুপ্তির পথে

স্থানীয় বাসিন্দা তথা গবেষক অঙ্কুশ দাস বলেন, "রায়পুর সিংহ পরিবারের সঙ্গে ঠাকুর পরিবারের যোগাযোগ ছিল অত্যন্ত নিবিড় । বহুবার মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই রাজবাড়িতে এসেছেন । বহুবার এখানে ব্রহ্ম উপাসনা হয়েছে । এই সিংহ পরিবারের একপ্রকার দানের জমিতে গড়ে ওঠে শান্তিনিকেতন আশ্রম । পরবর্তীকালে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে লর্ড সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহের । এই রায়পুর রাজবাড়ি থেকে শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার শুরুটা হয়েছিল এমন বলাই যায়।" স্থানীয়রা সাধ্যমতো বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণ করেন । কারণ ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে চান তাঁরা ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.