শান্তিনিকেতন, 16 আগস্ট : ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলার মাঠ পাঁচিল দিয়ে ঘেরাকে কেন্দ্র করে অশান্তি অব্যাহত । সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে 500-রও বেশি কর্মী, অধ্যাপককে নিয়ে মিছিল করলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী । পরে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে পাঁচিল তৈরির কাজও শুরু করে দেন তিনি । যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে । এদিকে, মিছিল শেষে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে গেলে আটকানো হয় মহিলা আশ্রমিককে । যা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি । তাঁকে হেনস্থারও অভিযোগ ওঠে বিশ্বভারতীর নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে ।
বিশ্বভারতীর একাংশ পাঁচিল দিয়ে ঘেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ দীর্ঘদিনের । সদ্য শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলার মাঠ পাঁচিল দিয়ে ঘেরার কাজ । আর এতেই ক্ষুব্ধ শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক থেকে শুরু করে পড়ুয়া, অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের একাংশ । এমনকী, বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি, বোলপুরবাসী অনেকেরই এবিষয়ে আপত্তি রয়েছে । ফলে, পৌষমেলার মাঠ ঘেরার কাজ বন্ধ করে দেন বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির লোকজন । সেই সময় ঠিকাদারের সঙ্গে বচসা শুরু হয় । বচসার জেরে ঠিকাদারকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে । বন্ধ হয়ে যায় পাঁচিল তোলার কাজ । এই ঘটনার পর আজ বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, ভারপ্রাপ্ত সচিব আশা মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে 500-র বেশি কর্মী, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শান্তিনিকেতন থানা পর্যন্ত মিছিল করেন । পরে থানার সামনে ঠিকাদারকে কাজ শুরুর নির্দেশ দেন উপাচার্য । সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে এতজন একসঙ্গে জমায়েত করা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন ।
বিশ্বভারতীর চতুর্দিকে পাঁচিল দিয়ে অচলায়তনে পরিণত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে । যা রবীন্দ্র আদর্শের পরিপন্থী বলে মনে করছে একাংশ । এই একই অভিযোগ তুলে আজ উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে যান আশ্রমিকদের একাংশ । অভিযোগ, সেই সময় তাঁদের বাধা দেন বিশ্বভারতীর নিরাপত্তারক্ষীরা । এমনকী, মহিলা আশ্রমিকে হেনস্থারও অভিযোগ ওঠে । আশ্রমিকদের সঙ্গে কথা না বলে সেখান থেকে চলে যান উপাচার্য । তবে পাঁচিল তৈরির কাজ চলছে ।
আশ্রমিকদের মধ্যে শুভলক্ষ্মী গোস্বামী বলেন, "বিশ্বভারতীকে পাঁচিল দিয়ে শেষ করে দিচ্ছেন উপাচার্য । আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে গেলে আমাকে বাধা দেওয়া হয় । পাঁচিল তুলে বিশ্বভারতীর পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে । কেউ এই কাজে খুশি নন । গায়ের জোরে এসব কাজ করছেন উপাচার্য । এটা রবীন্দ্র-আদর্শের পরিপন্থী । এমন বিশ্বভারতী আগে দেখিনি আমি । দেখব ভাবিওনি ।" কথা বলতে বলতেই নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে হেনস্থা হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই প্রবীণ আশ্রমিক । কোরোনা আবহে এত লোকজন জড়ো করে উপাচার্যের মিছিল ও জমায়েত করার প্রেক্ষিতে শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা ।
যদিও, এখনও পর্যন্ত বিশ্বভারতীর তরফে এই ঘটনায় কোনও মন্তব্য করা হয়নি ।