ETV Bharat / state

সাপ ধরা ও খেলায় নিষেধাজ্ঞা, অনাহারে দিন কাটছে সাপুড়েদের

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী সাপ ধরা এখন দণ্ডনীয় অপরাধ । তাই নানুর থানার বড়া-সাঁওতা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাগপাড়া গ্রামের প্রায় 250 থেকে 270 জনের উপার্জন নেই । তাঁদের দাবি, সাপের বিষ সংগ্রহে সাপুড়েদের অনুমতি দিক সরকার ।

snake charmer are jobless because snake catching is illegal
অনাহারে দিন কাটছে সাপুড়েদের
author img

By

Published : May 30, 2021, 3:42 PM IST

Updated : May 31, 2021, 6:59 AM IST

নানুর, 30 মে : সাপ খেলা দেখানো দণ্ডনীয় অপরাধ । তাই বহু আগে থেকেই রুজি-রুটিতে টান পড়েছে । লকডাউনে কার্যত অনাহারে দিন কাটছে নানুরের বাগপাড়া গ্রামের । এই পুরো গ্রামটি সাপুড়েদের গ্রাম হিসেবে পরিচিত । 250 থেকে 270 জন মানুষের পেশা হল সাপ খেলা দেখানো । তাঁদের দাবি, আইনি পদ্ধতিতে সাপের বিষ সংগ্রহ করার অনুমতি দেওয়া হোক । যা কাজে লাগবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে । এছাড়া, গবেষণার জন্য সর্পখামার তৈরি করা হোক । যদিও, রাজ্যে সর্প গবেষণাকেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা বিশবাঁও জলে ।

নানুর থানার বড়া-সাঁওতা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাগপাড়া গ্রাম । এই গ্রামে প্রায় 250 থেকে 270 জন মানুষ সাপ খেলা দেখিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন । ভারতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী সাপ খেলা দেখানো দণ্ডনীয় অপরাধ । তাই বহু আগেই কোপ পড়েছে রুজিরুটিতে । শহরের দিকে সাপ খেলা দেখাতে গেলে বনদপ্তরের কর্মী-আধিকারিকরা পাকড়াও করেন সাপুড়েদের । শহরাঞ্চলে না গেলেও গ্রামে গ্রামে ঘুরে লুকিয়ে সাপ খেলা দেখিয়ে কোনও রকমে জীবনযাপন করছিলেন গ্রামের মানুষজন । লকডাউনে তাতেও কোপ পড়ল ।

ছোট্ট একটি গ্রাম । প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সাপ । চিরাচরিত গোবর মাখানো বেতের গোল গোল ঝুড়ির মধ্যে সাপ নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে খেলা দেখান তাঁরা । খেলা দেখিয়ে মেলে খুচরো কিছু পয়সা সঙ্গে চাল-আলু প্রভৃতি সামগ্রী । যা দিয়ে দিন কাটে তাঁদের । সাপুড়েদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, গ্রামের বিভিন্ন ঝোপঝাড়, ধান জমি, ফাঁকা মাঠ, পুকুরপাড় প্রভৃতি জায়গা থেকে সাপ ধরেন তাঁরা । গোখরো, জলঢোঁড়া, চন্দ্রবোড়া, বালি বোড়া, চিতি, কালচিতি, শাখামুটি, সাদা গোখরো প্রভৃতি সাপের সংখ্যা সবথেকে বেশি । এদের মধ্যে সাদা গোখরো, চিতি ও চন্দ্রবোড়া সাপের বিষ সবথেকে বেশি । যদিও, বিষদাঁত ভেঙেই এই সাপগুলিকে নিয়ে খেলা দেখান সাপুড়েরা ।

তাঁদের দাবি, সাপ খেলা দেখানো আইনত অপরাধ । কিন্তু সাপের বিষ চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যাপক ভাবে কাজে লাগে । সাপের বিষ থেকে বিভিন্ন অ্যান্টিভেনাম, সিরাম প্রভৃতি তৈরি হয় । তাই একটি সর্প গবেষণাকেন্দ্র বা সর্পখামার নির্মাণ করা হোক । সাপুড়েদের কাছ থেকে সরকার সাপের বিষ সংগ্রহ করুক । এতে একদিকে যেমন চিকিৎসাবিজ্ঞান অগ্রগতি হবে, অন্যদিকে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন সাপুড়েরা ।

সাপ ধরা ও খেলায় নিষেধাজ্ঞা, অনাহারে দিন কাটছে সাপুড়েদের

প্রসঙ্গত, ভারতবর্ষের মধ্যে সাপের কামড়ে মৃত্যু সংখ্যায় পশ্চিমবঙ্গের স্থান প্রথমসারিতে। বহু প্রত্যন্ত গ্রাম এখনও সাপের কামড়ের চিকিৎসার জন্য গুণীন বা ওঝা নির্ভর । এমন বহু উদাহরণ রয়েছে । পশ্চিমবঙ্গে সেভাবে সর্পগবেষণা কেন্দ্র নেই । কলকাতায় তৈরি হওয়ার কথা থাকলেও তা বিশবাঁও জলে । সারা দেশের মধ্যে একমাত্র দিল্লি অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে রয়েছে পয়জ়ন ইনফরমেশন সেন্টার । পেশা বাঁচাতে একাধিকবার সর্প গবেষণাকেন্দ্র বা সর্পখামার তৈরির দাবিতে বন দফতর থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন নানুরের বাগপাড়া গ্রামের সাপুড়েরা । কিন্তু কোনও ফল হয়নি বলে অভিযোগ । করোনা আবহের জেরে লকডাউনে কার্যত অনাহারে দিন কাটাচ্ছে পুরো গ্রাম । কেউ কেউ খেজুর পাতা দিয়ে তালাই বুনে তা বিক্রি করছেন ।

সাপুড়েদের মধ্যে হিরন মাল, রামপ্রসাদ মাল, রাজু মালরা বলেন, "সাপ খেলা দেখানো যখন অপরাধ, আমাদের সাপ ধরার অনুমতি দিক সরকার। আমরা তো সাপ মারি না। সাপ ধরার পর বিষ সংগ্রহ করি। আমাদের কাছ থেকে সরকার কিনে নিক। সাপের বিষ চিকিৎসার জন্য তো কাজে লাগে। আমরা অনেকবার সর্পখামার তৈরির দাবী করেছি। কিন্তু, কিছুই হয়নি। একপ্রকার না খেয়েই পুরো গ্রামের দিন কাটছে।"

আরও পড়ুন : বোলপুরে অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় স্মরণে সাংবাদিকদের রক্তদান শিবির

বন দফতরের বোলপুর রেঞ্জের রেঞ্জার জয়নারায়ণ মণ্ডল বলেন, "আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের আইন অনুযায়ী কাজ করতে হয়।"

নানুর, 30 মে : সাপ খেলা দেখানো দণ্ডনীয় অপরাধ । তাই বহু আগে থেকেই রুজি-রুটিতে টান পড়েছে । লকডাউনে কার্যত অনাহারে দিন কাটছে নানুরের বাগপাড়া গ্রামের । এই পুরো গ্রামটি সাপুড়েদের গ্রাম হিসেবে পরিচিত । 250 থেকে 270 জন মানুষের পেশা হল সাপ খেলা দেখানো । তাঁদের দাবি, আইনি পদ্ধতিতে সাপের বিষ সংগ্রহ করার অনুমতি দেওয়া হোক । যা কাজে লাগবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে । এছাড়া, গবেষণার জন্য সর্পখামার তৈরি করা হোক । যদিও, রাজ্যে সর্প গবেষণাকেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা বিশবাঁও জলে ।

নানুর থানার বড়া-সাঁওতা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাগপাড়া গ্রাম । এই গ্রামে প্রায় 250 থেকে 270 জন মানুষ সাপ খেলা দেখিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন । ভারতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী সাপ খেলা দেখানো দণ্ডনীয় অপরাধ । তাই বহু আগেই কোপ পড়েছে রুজিরুটিতে । শহরের দিকে সাপ খেলা দেখাতে গেলে বনদপ্তরের কর্মী-আধিকারিকরা পাকড়াও করেন সাপুড়েদের । শহরাঞ্চলে না গেলেও গ্রামে গ্রামে ঘুরে লুকিয়ে সাপ খেলা দেখিয়ে কোনও রকমে জীবনযাপন করছিলেন গ্রামের মানুষজন । লকডাউনে তাতেও কোপ পড়ল ।

ছোট্ট একটি গ্রাম । প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সাপ । চিরাচরিত গোবর মাখানো বেতের গোল গোল ঝুড়ির মধ্যে সাপ নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে খেলা দেখান তাঁরা । খেলা দেখিয়ে মেলে খুচরো কিছু পয়সা সঙ্গে চাল-আলু প্রভৃতি সামগ্রী । যা দিয়ে দিন কাটে তাঁদের । সাপুড়েদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, গ্রামের বিভিন্ন ঝোপঝাড়, ধান জমি, ফাঁকা মাঠ, পুকুরপাড় প্রভৃতি জায়গা থেকে সাপ ধরেন তাঁরা । গোখরো, জলঢোঁড়া, চন্দ্রবোড়া, বালি বোড়া, চিতি, কালচিতি, শাখামুটি, সাদা গোখরো প্রভৃতি সাপের সংখ্যা সবথেকে বেশি । এদের মধ্যে সাদা গোখরো, চিতি ও চন্দ্রবোড়া সাপের বিষ সবথেকে বেশি । যদিও, বিষদাঁত ভেঙেই এই সাপগুলিকে নিয়ে খেলা দেখান সাপুড়েরা ।

তাঁদের দাবি, সাপ খেলা দেখানো আইনত অপরাধ । কিন্তু সাপের বিষ চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যাপক ভাবে কাজে লাগে । সাপের বিষ থেকে বিভিন্ন অ্যান্টিভেনাম, সিরাম প্রভৃতি তৈরি হয় । তাই একটি সর্প গবেষণাকেন্দ্র বা সর্পখামার নির্মাণ করা হোক । সাপুড়েদের কাছ থেকে সরকার সাপের বিষ সংগ্রহ করুক । এতে একদিকে যেমন চিকিৎসাবিজ্ঞান অগ্রগতি হবে, অন্যদিকে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন সাপুড়েরা ।

সাপ ধরা ও খেলায় নিষেধাজ্ঞা, অনাহারে দিন কাটছে সাপুড়েদের

প্রসঙ্গত, ভারতবর্ষের মধ্যে সাপের কামড়ে মৃত্যু সংখ্যায় পশ্চিমবঙ্গের স্থান প্রথমসারিতে। বহু প্রত্যন্ত গ্রাম এখনও সাপের কামড়ের চিকিৎসার জন্য গুণীন বা ওঝা নির্ভর । এমন বহু উদাহরণ রয়েছে । পশ্চিমবঙ্গে সেভাবে সর্পগবেষণা কেন্দ্র নেই । কলকাতায় তৈরি হওয়ার কথা থাকলেও তা বিশবাঁও জলে । সারা দেশের মধ্যে একমাত্র দিল্লি অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে রয়েছে পয়জ়ন ইনফরমেশন সেন্টার । পেশা বাঁচাতে একাধিকবার সর্প গবেষণাকেন্দ্র বা সর্পখামার তৈরির দাবিতে বন দফতর থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন নানুরের বাগপাড়া গ্রামের সাপুড়েরা । কিন্তু কোনও ফল হয়নি বলে অভিযোগ । করোনা আবহের জেরে লকডাউনে কার্যত অনাহারে দিন কাটাচ্ছে পুরো গ্রাম । কেউ কেউ খেজুর পাতা দিয়ে তালাই বুনে তা বিক্রি করছেন ।

সাপুড়েদের মধ্যে হিরন মাল, রামপ্রসাদ মাল, রাজু মালরা বলেন, "সাপ খেলা দেখানো যখন অপরাধ, আমাদের সাপ ধরার অনুমতি দিক সরকার। আমরা তো সাপ মারি না। সাপ ধরার পর বিষ সংগ্রহ করি। আমাদের কাছ থেকে সরকার কিনে নিক। সাপের বিষ চিকিৎসার জন্য তো কাজে লাগে। আমরা অনেকবার সর্পখামার তৈরির দাবী করেছি। কিন্তু, কিছুই হয়নি। একপ্রকার না খেয়েই পুরো গ্রামের দিন কাটছে।"

আরও পড়ুন : বোলপুরে অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় স্মরণে সাংবাদিকদের রক্তদান শিবির

বন দফতরের বোলপুর রেঞ্জের রেঞ্জার জয়নারায়ণ মণ্ডল বলেন, "আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের আইন অনুযায়ী কাজ করতে হয়।"

Last Updated : May 31, 2021, 6:59 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.