কলকাতা, 10 জানুয়ারি: অভিযুক্ত ছাত্রদের সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা আলোচনার পরও সমস্যা সমাধানে করতে পারল না বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। পুনরায় অভিযুক্ত ছাত্রদের বিরুদ্ধে নিজেদের বক্তব্য স্পষ্ট করেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। যার বিরুদ্ধে পালটা নিজেদের বক্তব্য পেশ করেছে এসএফআই (SFI condemns Visva Bharati University Authority) ৷ ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের বক্তব্য, "সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ চলমান ছাত্র আন্দোলন সম্বন্ধে অত্যন্ত অবমাননাসূচক কিছু কথা লিখে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। একতরফা কিছু ভিত্তিহীন অভিযোগে ভর্তি ওই বিজ্ঞপ্তির ছত্রে ছত্রে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের জিঘাংসাবৃত্তির প্রতিফলন ঘটেছে। বিশেষত দ্বিপাক্ষিক সমাধানের উদ্দেশে আলোচনা চলাকালীন এই অপমানজনক প্রেস বিবৃতি প্রকাশের অর্থ হল, কর্তৃপক্ষ আদতে সমাধানসূত্র খুঁজতে চাননি, তাঁরা যেনতেন প্রকারেণ ছাত্রদের ঘাড়ে মিথ্যে অভিযোগের দায় চাপাতেই ব্যস্ত ছিল।"
এ প্রসঙ্গে এসএফআই রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, "গত 5 জানুয়ারি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের সংগঠনের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলের সভা হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সেই সভায় বিশ্বভারতীর সাম্প্রতিক অচলাবস্থা, বারংবার বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য কলুষিত হওয়া, কর্তৃপক্ষের সাম্প্রদায়িক এবং স্বৈরাচারী দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ এবং ছাত্র আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি সম্বন্ধে দীর্ঘ আলোচনা হয়। কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের সম্পর্কে যে সমস্ত অভিযোগ করেন, আমাদের ইতিপূর্বে জানা-বোঝার সঙ্গে তার বিস্তর অসঙ্গতি থাকে। তথাপি সাসপেনশনের মুখে থাকা সাতজন ছাত্রের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে আমরা সমাধানসূত্র খোঁজার মনোভাব নিয়েই সভার আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাই ।"
সৃজন আরও বলেন, "কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের নিঃশর্ত দোষস্বীকার এবং ভবিষ্যতে আন্দোলন থেকে বিরত থাকার শর্ত দেন। আমরা বলি, এ শর্ত মানা সম্ভব নয়। অসাংবিধানিক কোনও কাজ করে থাকলে ছাত্ররা নিশ্চয়ই ভুল স্বীকার করবে, কিন্তু যে অপরাধ তারা করেনি তার জন্য তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করবে না এবং ছাত্র আন্দোলনের অধিকার তারা ছাড়বে না। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়, সাসপেনশন প্রত্যাহারের বিষয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের পরামর্শ বা দাবিগুলি আমরা আন্দোলনকারী ছাত্রদের জানাব। আপাতভাবে ইতিবাচক মনোভাবেই দু'পক্ষের দীর্ঘ আলোচনা সমাপ্ত হয় ৷ তারপরেই অঘটনের কথা জানতে পারি।"
আরও পড়ুন: সাতজনের সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে বিশ্বভারতীতে বনধ পড়ুয়াদের
কী জেনেছেন? প্রশ্নের উত্তরে সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, "সভা থেকে বেরোনোর পর আমরা জানতে পারি, সভা চলাকালীনই আমাদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ চলমান ছাত্র আন্দোলন সম্বন্ধে অত্যন্ত অবমাননাসূচক কিছু কথা লিখে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ৷ ছাত্রদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি বোলপুর আদালতে পরবর্তীতে খারিজ হয়ে গিয়েছে বলে খবর। আমরা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের এই দ্বিচারিতার তীব্র সমালোচনা করছি। তাদের স্বৈরাচারী মনোভাবে বিশ্বাসঘাতকতা, শঠতা, তঞ্চকতা ও প্রতারণার ছাপ স্পষ্ট। তঞ্চকদের সাথে কোনওরকম সমঝোতা করা কঠিন। কর্তৃপক্ষ আরেকবার প্রমাণ করলেন, তাঁরা যেকোনো সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্ররোচনা দিতে সক্ষম, এবং তাঁদের অগণতান্ত্রিক মনোভাব সম্বন্ধে আন্দোলনকারী ছাত্রদের তোলা প্রতিটি অভিযোগেরই সত্যতা রয়েছে।"
এখানেই শেষ নয়। সৃজনের আরও দাবি, " আমরা চলমান ছাত্র আন্দোলনের সংহতিতে আমাদের সুদৃঢ় অবস্থান ফের ব্যক্ত করছি। 5 জানুয়ারিই আন্দোলনকারী ছাত্রদের সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে এবং ছাত্রনেতা সোমনাথ সৌ-এর ভর্তির দাবিতে শান্তিনিকেতনে মহামিছিল সংগঠিত করেছে ভারতের ছাত্র ফেডারেশন। এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্যজুড়ে আমাদের কর্মীরা আগামীতে সর্বশক্তি নিয়ে সোচ্চার হবেন।"