বোলপুর, 25 অক্টোবর: ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি ফলকে বিশ্বভারতীতে ব্রাত্য স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৷ বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক ছড়িয়েছে ৷ অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৷ ইটিভি ভারতে প্রথম এই খবর প্রকাশের পরেই বিশ্বভারতী ইউনিভার্সিটি ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশনের তরফে প্রধানমন্ত্রী-সহ কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ও রাজ্যপালকে ইমেল মারফৎ অভিযোগ করা হয় ৷ রাজভবন থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ।
পদাধিকার বলে রাজ্যপাল হলেন বিশ্বভারতীর রেক্টর বা প্রধান, তাই প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে তাঁর নাম ওই ফলকে ব্যবহার করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখবেন রাজ্যপাল । উল্লেখ্য, 17 সেপ্টেম্বর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনকে 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ' বা 'বিশ্ব ঐতিহ্যের' তকমা দিয়েছে ইউনেসকো । যা নিয়ে খুশির হাওয়া সর্বত্র ৷ কিন্তু, সম্প্রতি বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবন, উপাসনা গৃহ, গৌরপ্রাঙ্গণ প্রভৃতি জায়গায় শ্বেত পাথরের কিছু ফলক বসানো হয়েছে । তাতে লেখা রয়েছে, "ইউনেসকোর খোদাই করা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ৷" এই ফলকেই নীচের দিকে আচার্য হিসাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম রয়েছে । অর্থাৎ, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামই নেই বিশ্ব ঐতিহ্যের ওই ফলকে ৷ ইটিভি ভারতে এই খবর প্রথম প্রকাশের পরেই রীতিমতো শুরু হয়েছে বিতর্ক । কেন বিশ্বভারতীয় প্রাণপুরুষের নামই ব্রাত্য, তা নিয়ে সরব হয়েছেন আশ্রমিক থেকে শুরু করে, পড়ুয়া, শিক্ষাবিদ, ঠাকুর পরিবারের সদস্য, এমনকী রাজনীতিকরাও ।
ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে বিশ্বভারতীর আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান ও রাজ্যপাল তথা বিশ্বভারতীর রেক্টর সিভি আনন্দ বোসকে ই-মেল মারফৎ অভিযোগ করেছে বিশ্বভারতী ইউনিভার্সিটি ফ্যাকাল্টি অ্যাসোসিয়েশন । রাজভবন থেকে এই বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়ে পালটা ই-মেল করা হয়েছে । প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে এই ফলকে তাঁর নাম ব্যবহার করা হয়েছে কি না, সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে । তবে বিতর্কের পরেই ফলকগুলির কাছে দু'জন করে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: বিশ্বভারতীর 'হেরিটেজ' ফলকে প্রধানমন্ত্রী ও উপাচার্যের নাম, ব্রাত্য রবীন্দ্রনাথ
এই প্রসঙ্গে বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য সবুজকলি সেন বলেন, "যে সময় স্থান ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হয়, সেখানের ফলকে তার ইতিহাস লেখা থাকে ৷ ইউনেসকোর কারও নাম বা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ারও কারও নাম থাকে না ৷ নাম কামানোর সস্তার উপায়ে বিশ্বভারতীতে এই ফলক বসানো হয়েছে । ইচ্ছাকৃতভাবে প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করা হয়েছে । আমি যখন উপাচার্য ছিলাম তখন বাংলাদেশ ভবন হয় । সেই সময় কী নাম লেখা হবে সবটাই প্রধানমন্ত্রীর দফতর ঠিক করেছিল। এক্ষেত্রে হয়তো প্রধানমন্ত্রী জানেনই না যে, তাঁর নামে ফলক বসেছে ।"
আরও পড়ুন: বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে অবিলম্বে অপসারণ করা উচিত, পরামর্শ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের
বিশ্বভারতীর অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, "লজ্জার বিষয় এটি ৷ সম্পূর্ণ অবৈধ ফলক বসিয়েছেন উপাচার্য। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিও নেওয়া হয়নি হয়তো । তাই আমরা প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, শিক্ষামন্ত্রী ও রাজ্যপালকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি ৷ রাজ্যপাল বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন আমাদের।" বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী নূরুল হক বলেন, "নামের বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য এই ফলক । গুরুদেবের নাম নেই, যার জন্য এই হেরিটেজ । এটা লজ্জার। সর্বস্তরের মানুষকে গর্জে ওঠা দরকার।