ইলামবাজার, 2 অক্টোবর : মাটি-কাঠ-পাথরের নয়, সমাজে রক্তমাংসের এ এক অন্য দুর্গার ছবি ইটিভি ভারতে। পূর্ব মেদিনীপুর থেকে পড়তে এসে থেকে গিয়েছেন বীরভূমের ইলামবাজারের গোপালনগর আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামে। এখানকার ছেলেমেয়েদের পাঠদান করতে থেকে গিয়েছেন আইনের ছাত্রী প্রীতিকণা জানা। লকডাউনজুড়ে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বাঁধাধরা পাঠ্যপুস্তকের শিক্ষার পাশাপাশি সামাজিক মূল্যবোধ, পরিবেশ সংক্রান্ত সচেতনতা ও নিজেদের পরিচ্ছন্ন রাখার পাঠ দিয়ে আসছেন আইনের এই ছাত্রী।
পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি বাসিন্দা প্রীতিকণা জানা। বছর পাঁচ আগে সেখান থেকে পড়তে এসেছিলেন বীরভূমের ইলামবাজারে একটি বেসরকারি আইন কলেজে। কলেজ সংলগ্ন গোপালনগর আদিবাসী অধ্যুষিত একটি গ্রাম রয়েছে। কলেজে যাতায়াতের সময় এই গ্রামেই আদিবাসী মানুষজনের জীবনযাত্রা ও শিক্ষার নিম্নমানের বিষয়টি নাড়া দেয় প্রীতিকণাকে। নিজ উদ্যোগেই গ্রামে গিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াতে শুরু করেন। তার কাছ থেকেই জানা গিয়েছে, প্রথমদিকে সেভাবে কেউ পড়তে আসার আগ্রহ দেখায়নি। এমনকি, এই গ্রামের মানুষজন চাষের জন্য প্রায় সময় মাঠে কাজ করে। ফলে ছেলেমেয়েদের শিক্ষার বিষয়ে তেমন গুরুত্ব দেন না। সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে শুরু হয় পাঠ দান। বাঁধাধরা পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি পড়ুয়াদের সামাজিক মূল্যবোধ সেখান তিনি। নিজের পোশাক নিজে ধুয়ে পরিচ্ছন্ন করা, নখ কাটা, পরিমার্জিত কথা বলতে শেখানো, জল অপচয় বন্ধ করা, পরিবেশ বাঁচাতে বৃক্ষরোপণ করা প্রভৃতি শেখানো হয় পড়ুয়াদের। খুদে পড়ুয়াদের থেকে শুরু করে দশম শ্রেণীর পড়ুয়ারাও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এখানে পড়াশোনা করে থাকে। এই দীর্ঘ করোনা আবহে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। তাই নিজে পড়াশোনা করতে এসে আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামের পড়ুয়াদের জন্যই থেকে গিয়েছেন ইলামবাজারের গোপালনগর গ্রামে। গ্রামের পড়ুয়ারাও অতি উৎসাহের সঙ্গে আইনি দিদিমণির স্কুলে আসে। নিজের থাকা-খাওয়ার খরচ বাঁচিয়ে ও সহপাঠীদের সহযোগিতায় পড়ুয়াদের বই কিনে দেওয়া থেকে অন্যান্য খরচ বহন করেন প্রীতিকণা।
আরও পড়ুন : School Special : স্কুলছুট রুখতে ছবিতে সাজল অমরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়
প্রীতিকণা বলেন, "আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামের মানুষজনের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হল অশিক্ষা। তারা যাতে সমাজের আর পাঁচটা শ্রেণীর মতন মাথা তুলে বাঁচতে পারে। তাই এখানে পড়তে এসে ওদের জন্যই থেকে গিয়েছি। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সমাজে কিভাবে চলতে হয়, পরিবেশ কিভাবে রক্ষা করতে হয়, সবই শেখাই। আমার নিজের ও আমার সহপাঠীদের টাকাতেই এই স্কুল চলে যায়।"