শান্তিনিকেতন, 18 অগাস্ট : পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় । এই মর্মে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার । প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে ঘটনার পর পরই বিষয়টি বিশ্বভারতীর আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রীকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে । এমনকী নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীও চাওয়া হয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে ।
ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলার মাঠ পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেওয়াকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরেই উত্তাল বিশ্বভারতী চত্বর । পাঁচিল দেওয়ার বিরোধিতা করে আগেই পথে নেমেছেন বিশ্বভারতীর পড়ুয়া, আশ্রমিক, রবীন্দ্র অনুরাগীদের একাংশ । তারপরেও নির্মাণকাজ চলতে থাকায় বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি এসে কাজে বাধা দেয় । বিশ্বভারতী ঠিকাদারের সঙ্গে শুরু হয় বচসা । ঠিকাদারকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে । বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণ কাজ । এই ঘটনার পর রবিবার বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে কর্মী, অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা একটি মিছিল করে শান্তিনিকেতন থানার সামনে জড়ো হন । মিছিলে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে আসেন উপাচার্য । উপাচার্য নির্দেশে ফের শুরু হয় পাঁচিল নির্মাণের কাজ । পৌষমেলার মাঠে অস্থায়ী ক্যাম্প অফিস তৈরি করে রাতারাতি শুরু হয় নির্মাণ কাজ ৷
গতকাল সকালে বোলপুর-শান্তিনিকেতন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ শান্তিনিকেতন থানার সামনে জড়ো হয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয় । ভাঙচুর চালানো হয় অস্থায়ী ক্যাম্প অফিস-সহ পৌষমেলার গেটে ৷ লুটপাট করা হয় নির্মাণ সামগ্রী । থানার সামনে এই ঘটনা ঘটলেও ঘটনাস্থানে দেখা যায়নি কোনও পুলিশ কর্মীকে । অভিযোগ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের । কর্তৃপক্ষের আরও অভিযোগ, পুলিশকে জানানো হলেও, পুলিশ আসেনি । পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে হয় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় । এই মর্মে গতকাল একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার । যদিও জেলা পুলিশ সুপার শ্যামল সিংহ জানান, ঘটনার প্রেক্ষিতে আট জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসের মধ্যে দু'টি থানা (শান্তিনিকেতন থানা, বোলপুর মহিলা থানা) থাকা সত্ত্বেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি । পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার জন্য লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে । ক্ষতির টাকা আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় । যদিও জরুরি ভিত্তিতে কোনও কাজ ও ভরতি প্রক্রিয়া চলবে । প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, এদিনের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে । জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী মন্ত্রকেও । মন্ত্রকের তরফে একটি কমিটি গঠন করে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করবে ৷ সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে । মিছিলে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে আসায় উপাচার্যের দপ্তর থেকে চারজন নিরাপত্তারক্ষীকে তুলে নেয় রাজ্য সরকার । তাই নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষী চেয়ে বিশ্বভারতীর তরফের আবেদন করা হয়েছে ।
বিশ্বভারতীর ঘটনায় গতকাল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ৷ অন্যদিকে BJP-র তরফে ঘটনার প্রেক্ষিতে তৃণমূলের দিকে আঙ্গুল তোলা হয়েছে । পালটা বিশ্বভারতীতে এই ধরনের কোনও নির্মাণ হোক সেটা চায় না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সব মিলিয়ে বিশ্বভারতীর ঘটনা নিয়ে টানটান উত্তেজনা রয়েছে রাজনৈতিক মহলে ।