বোলপুর (বীরভূম), 23 জানুয়ারি: বিশ্বভারতীর (Visva Bharati) মান থেকে কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি (NEP) নিয়ে বিস্ফোরক নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ (Economist) অমর্ত্য সেন । এদিন শান্তিনিকেতনের বাড়িতে বসে ইটিভি ভারতকে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বিশ্বভারতীর শিক্ষার মান, উপাচার্যের ভূমিকা, দেশের ঐক্যবাদের অবনমন, অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি-সহ শিক্ষানীতিতে গুণের অভাব প্রসঙ্গে উষ্মা প্রকাশ করেন বর্ষীয়ান এই অর্থনীতিবিদ । পাশাপাশি বেশকিছু ক্ষেত্রে তাঁর আক্ষেপ, আপত্তির কথাও তুলে ধরেন তিনি ।
ইটিভি ভারত: কাজের ফাঁকে যখনই সময় পান প্রিয় শান্তিনিকেতনে ছুটে আসেন, কতটা আবেগ ?
মজার ছলে অমর্ত্য সেন বললেন: ছুটে আসি কি না, এটা বলা মুশকিল । কারণ, ছুটে এলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । আমার ধারণা, এই যে যোগাযোগ আছে তার মধ্যে নৈকট্য খুবই বেশি ।
ইটিভি ভারত: সময়ের সঙ্গে কতটা বদল দেখছেন শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতীর ?
অমর্ত্য সেন: এখানে বড় বড় প্রাচীর হচ্ছে । দেখা যায় না কিছুই । এখানে বড় বাড়িগুলো, ছোট বাড়িগুলো অদৃশ্য হয়ে গেল, এইরকম অনেক সময় চোখে পড়ে । সেগুলোকে বদলানোর লোক কমে যাবে, নিশ্চয়ই ভাবা যায় ।
ইটিভি ভারত: যত দিন যাচ্ছে বিশ্বভারতীর শিক্ষার মান কমছে । কীভাবে দেখছেন বিষয়টি, কী পরামর্শ দেবেন মান উন্নয়নে ?
অমর্ত্য সেন: শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে কি না, আমি জানি না । এবং চিরকালই খুব বড় রকম ছিল এটাও মনে করার কারণ নেই । শিক্ষার মান যদি সত্যিই কমে থাকে, তাহলে আমাদের নিশ্চয়ই ভাবতে হবে । সেটাকে কীভাবে ধরে রাখা ও তার উপরে কীভাবে আমরা প্রভাব দিতে পারি ।
ইটিভি ভারত: বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে নিয়ে একাধিক বিতর্ক ৷ বিতর্কের জন্য সংবাদ শিরোনামে থাকেন তিনি ৷ কখনও ছাত্রদের ভর্তি নিচ্ছেন না, পড়ুয়ারাও আপনার সঙ্গে বহুবার যোগাযোগ করেছে ৷ এই সব কিছুতে বিশ্বভারতীর কতটা ক্ষতি হচ্ছে ?
অমর্ত্য সেন: বিশ্বভারতী যে আদর্শ নিয়ে তৈরি হয়েছিল তা থেকে বিচ্যুত হওয়ার নানা রকম কারণ থাকতে পারে । এবং বিচ্যুত যে একেবারে হয়নি এটাও বলা যাবে না । নানা ছোটখাটো বিষয় রয়েছে । যেমন কিছু ছাত্রকে খুবই নগণ্য কারণে বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হল । অথবা কেউ তাঁর বক্তব্য পেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে, তাতে যদি উপাচার্য উষ্মা প্রকাশ করে থাকেন, এটা বলা যেতে পারে এর মধ্যে অসহনীয়তা আছে । এবং সেটা কীভাবে কমানো যায় ভাবা দরকার ।
ইটিভি ভারত: কোথাও রেলের স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । রাজ্যের বহু জায়গায় প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়তে ৷ এই প্রসঙ্গে রাজ্য ও কেন্দ্রকে কী পরামর্শ দেবেন ?
অমর্ত্য সেন: এটা বড় প্রশ্ন । আমাদের দেশে বহু পরিবর্তন হচ্ছে তাতে কিছু কিছু ভুল হচ্ছে এটা মনে করার কারণ থাকতে পারে । আমাদের দেশে 'ঐক্যবাদের' উপর যে জোর ছিল, সেটা যদি কমে গিয়ে থাকে, তাহলে তা নিয়ে আমাদের চিন্তা করার কারণ আছে । তবে সবদিক দিয়ে যে খারাপ হচ্ছে এটা বোধহয় ঠিক নাও হতে পারে ।
ইটিভি ভারত: আপনি প্রতীচী ট্রাস্টের বহু আলোচনায় বলেছেন দেশে সহিষ্ণুতা কমে যাচ্ছে । এর কারণ কী ? কীভাবে সহিষ্ণুতা ফিরে আসতে পারে, কী পরামর্শ আপনার ?
অমর্ত্য সেন: অসহিষ্ণুতা (Intolerance) সব সময় খারাপ জিনিস । এবং পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে খারাপ জিনিস । এটা আমরা সহজেই মানতে পারি । আর এটার প্রকাশ যদি আমরা নানাভাবে দেখি তাহলে চিন্তা করার কারণ আছে । বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর কাজে যারা যুক্ত তাদের মধ্যে অনেক সময় অসহিষ্ণুতার প্রকাশ আমরা দেখতে পাই । সেগুলো কি আমি খুশি হয়ে দেখি ? উত্তর 'না' ৷ এগুলো নিয়ে আমার আপত্তি থাকতে পারে, অনেক সময় আছে ।
ইটিভি ভারত: কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতির কতটা সঠিক ? কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি প্রসঙ্গে আপনার পরামর্শ কী ?
অমর্ত্য সেন: কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি কতটা আছে আমি জানি না । তাদের মধ্যে অনেক সময় 'গুণের' অভাব দেখা যায় । যেটাকে শেষ অব্দি আলোচনার অভাব বলে মানতে পারি । সেই জিনিসগুলো যখন ঘটে, তা নিয়ে আমাদের আক্ষেপ করার অনেক কারণ আছে ।
আরও পড়ুন: দেশে জাতিসঙ্কট নিয়ে শঙ্কিত অমর্ত্য সেন, দিলেন দাওয়াই