শান্তিনিকেতন, 22 ডিসেম্বর : চলছে পৌষমাস ৷ প্রতিবছর এই সময়ে দেশ-বিদেশ, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ভিড় করেন শান্তিনিকেতনে ৷ এই সময় শান্তিনিকেতনে পালিত হয় পৌষমেলা, পৌষ উৎসব ৷ কিন্তু এবছর কোরোনা আবহে হচ্ছে না ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা। যার জেরে বিষন্নতার ছায়া শান্তিনিকেতনজুড়ে।
74 বছর পর ফের বন্ধ হল পৌষমেলা। এর আগে 1943 ও 1946 সালে দুর্ভিক্ষ ও সাম্প্রদায়িক অশান্তির কারণে হয়নি পৌষমেলা । তবে এই বছর দেশজুড়ে কোরোনা পরিস্থিতির জেরে হচ্ছে না পৌষমেলা ৷ এমনকী, যে বছর প্রয়াত হন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সেই বছরও পালিত হয় পৌষমেলা । পৌষমেলা বন্ধ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ আশ্রমিক, আবাসিক, পড়ুয়া থেকে শুরু করে শান্তিনিকেতনবাসীর। মেলা বন্ধ হওয়ায় বাণিজ্য ক্ষেত্রে ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরাও।
1843 সালের 21 ডিসেম্বর (সাত পৌষ) মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের কাছে ব্রহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হন। এরপর এই ব্রহ্ম ধর্মের প্রসার ও প্রচার বৃদ্ধি পায়। দীক্ষিত হওয়ার দিনটিকে স্মরণ রাখতে 1845 সালে কলকাতার গোরিটির বাগানে উপাসনা ও ব্রহ্ম মন্ত্রপাঠের আয়োজন করা হয়েছিল। ওই উৎসবকেই পৌষমেলার সূচনা বলে ধরা হয়। পরবর্তীকালে 1862 সালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে আশ্রম প্রতিষ্ঠার চিন্তাভাবনা করেন। 1891 সালে উপাসনা গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটিকেই শান্তিনিকেতনের পৌষ উৎসবের সূচনা হিসেবে ধরা হয়। 1894 সালে পৌষ উৎসবের পাশাপাশি মন্দির সংলগ্ন মাঠে শুরু হয় পৌষমেলা।
আরও পড়ুন :হচ্ছে না পৌষমেলা, পৌষ উৎসবে আমন্ত্রিত প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী
1941 সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মহাপ্রয়াণ ঘটে। সেই বছর মেলা বসলেও সেই মেলা প্রাণহীন ছিল। তবে 1943 সালে দেশে দুর্ভিক্ষের জন্য বন্ধ ছিল পৌষমেলা। এরপর 1946 সালে সাম্প্রদায়িক অশান্তির কারণে আয়োজন করা হয়নি পৌষমেলার। ধীরে ধীরে মেলার পরিসর বাড়তে থাকায় 1961 সালে মন্দির সংলগ্ন মাঠ থেকে পৌষমেলা স্থানান্তরিত করা হয় পূর্বপল্লির মাঠে। সেই থেকে পূর্বপল্লির মাঠে হয়ে আসছে পৌষমেলা। 74 বছর পর ফের বন্ধ হল ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা। বিশ্বজুড়ে কোরোনা পরিস্থিতির কারণে এই বছর পৌষমেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ৷ এই সিদ্ধান্তের পর স্বাভাবিকভাবেই বিষণ্ণতার ছায়া শান্তিনিকেতনের আকাশে, বাতাসে।
আরও পড়ুন : শান্তিনিকেতনে হবে না পৌষমেলা
প্রতি বছর 23 ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় পৌষমেলা। এই সময়ে শান্তিনিকেতনজুড়ে সাজসাজ রব দেখা যায় । লোকারণ্য থাকত শান্তিনিকেতনের রাস্তাঘাট। কিন্তু, এবার সবই শূন্য ৷ বিশ্বভারতীর অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় বলেন, "পৌষমেলা এর আগেও বন্ধ ছিল। 1943 ও 1946 সালে দুর্ভিক্ষ ও সাম্প্রদায়িক অশান্তির কারণে। তারপর এবার কোরোনার কারণে বন্ধ পৌষমেলা।" বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ছাত্রী সাগুপ্তা ঘোষ, বর্তমান ছাত্রী সুচন্দ্রা কর্মকার, মণীষা গড়াইরা বলেন, "কখনও ভাবিনি পৌষমেলা বন্ধ হবে। পৌষমেলা ও বসন্ত উৎসব শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্য। সত্যিই মন খারাপ। তবে পরের বার যেন ফের পৌষমেলা হয়।"